লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি
লামা-আলীকদম
পাহাড়ে জুমের সোনালী ধান কাটতে ব্যস্ত চাষিরা
বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলার পাহাড় গুলোতে কৃষাণ-কৃষাণীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন জুম ফসল আহরনে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জুম চাষে আশানুরুপ ফলন হওয়ায় খুশি জুমচাষিরা।
জানা গেছে, জুম চাষ পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকার প্রধান অবলম্বন। পাহাড়ের এই চাষ পদ্ধতি বেশ কষ্টসাধ্য। জুম চাষে একটি পরিবারের পাহাড়ি নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর সকলেই অংশ নেন। আবার কোনো একটি বড় পাহাড়ে কয়েকটি গ্রামের জুমিয়ারা ঐক্যবদ্ধ ভাবে জুম চাষ করে থাকেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর লামায় এক হাজার ১২২ হেক্টর এবং আলীকদমে এক হাজার ২৩৮ হেক্টর জমিতে জুম চাষ করা হয়েছে।
জুমিয়া কৃষাণ-কৃষাণীরা জানায়, প্রতিবছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে জুমের জায়গা নির্ধারণ করা হয়। আর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে জুম চাষের জন্য নির্ধারিত জায়গায় জঙ্গল কাটা হয়। তারপর কাটা জঙ্গল রোদে শুকানোর পর মার্চ-এপ্রিল মাসে জঙ্গলে আগুন দিতে প্রথমে ফায়ারিং লাইন করে জঙ্গল পোড়ানো হয়। এপ্রিল মাস জুড়েই জুমের জায়গা পরিষ্কার করে ধান বপনের জন্য প্রস্তুত করে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা চলে। বৃষ্টি হলেই জুমের জায়গায় ধানসহ সাথী ফসল বপন করা হয়। প্রতিবছর আগস্ট মাস থেকে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত জুমের ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর প্রক্রিয়া চলে। চলতি বছর আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় বিগত বছর গুলোর তুলনায় জুমে ভালো ফলন হয়েছে। জুমে ধানের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা অন্যান্য ফসলও আশানুরুপ হয়েছে।
সরেজমিনে লামা উপজেলা ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের মিরাঞ্জা, বদুরঝিরি, লামা সদর ইউনিয়ন, রুপসী পাড়া ও গজালিয়া ইউনিয়ন এবং আলীকদমের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, বিশাল পাহাড়ের ঢালুতে জুমের সোনালী ধান বাতাসে দোল খাচ্ছে। ধান কাটা ও জুমের মাচাং ঘর গুলোতে ধান মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন জুমিয়া কৃষাণ-কৃষাণীরা।
আলীকদমের রোয়াম্ভো এলাকার জুমিয়া কৃষক সাগর বাসা চাকমা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আশানুরুপ ফলন হয়েছে। মিরিঞ্জা এলাকার জুমিয়া মনিরাম ত্রিপুরা বলেন, আমার সব ধান পেকেছে। এখন ধান কাটার কাজ চলছে। জুমের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে মারফা, ভুট্টা ,মাসকলই, তিলসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল বুনেছি। সে গুলো পর্যায়ক্রমে সংগ্রহ করব।
জুমিয়া কৃষক জার্মান ত্রিপুরা বলেন, প্রকৃতির ওপর নিভর হয়ে বংশ পরম্পরায় আমরা এ জুমচাষ করে আসছি। ফলন ভালো হওয়ায় আমাদের অনেক খুশি লাগছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আশরাফুজ্জান বলেন, এ বছর উপজেলায় জুম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ১২২ হেক্টর। আর আবাদ বাস্তবায়ন হয়েছে এক হাজার ৩১২ হেক্টর। তিনি বলেন, স্থানীয় জাতের পাশাপাশি জুম চাষিদের আমরা আধুনিক কৃষি সম্প্রসারণের দিকে উদ্বুদ্ধ করছি। লামা, আলীকদমের সবুজ পাহাড়ে রং ছড়াচ্ছে জুম ধানের সোনালী আভা। ধানের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে লাগানো মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা, মারফা ও চিনাল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জুমিয়ারা।