reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

সংস্কারের জন্য ৩ থেকে ৪ মাস যথেষ্ট, জানিয়েছে বিএনপি

সংগৃহীত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেন, সংস্কার শেষ করে নির্বাচন উপহার দিতে খুব বেশি হলে ৩ থেকে ৪ মাস সময় লাগবে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়নে ‘বাড়ি বাড়ি যাওয়া নয়, আপগ্রেড’ চান নেতারা।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।

দলের নির্বাচন সংস্কার বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, ‘আসলে সত্যিকার অর্থে অনেস্টলি সঠিক ভোটার তালিকা আমরা করতে চাই… তাহলে কিন্তু আমরা বাড়ি বাড়ি যাওয়া নয়, আমরা কম্পিউটার এআই… আজকে কিন্তু আমরা কম্পিউটারকে বলে দিলে সে নিজেই করে দিতে পারে… সেটা অ্যাবসুলেটলি অ্যাকুরেট হবে।’

‘আমি কে, কোনদিন ১৮ মাস হয়ে যাবো, সেটিও কিন্তু কম্পিউটার করে দিতে পারে। সেটার জন্য বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাড়ি বাড়ি যাওয়া এটা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ এবং অপ্রয়োজনীয় এবং এটাতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যিনি মারা গেছেন তার নাম অটোমেটিক্যালি বাদ চলে যাবে…। এই বিষয় (ভোটার তালিকা) আমরা সংস্কার প্রস্তাবে স্পষ্ট করেছে, এটা আপগ্রেড হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আবদুল মঈন খান বিগত সরকার গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের (আরপিও) সংশোধনে যে সম্পূরক আদেশ এনেছিল তা বাতিল, নির্বাচন পরিচালনায় কিছু বিধিমালা সংশোধন, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য আচরণ বিধিমালা ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের নীতিমালা সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা আপগ্রেড করা, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি, গণমাধ্যমের নির্বাচনি আচরণ বিধিমালাসহ ১০ দফা সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন। এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো তারা সরকারের গঠিত নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাছে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি জন্য—যাতে সত্যিকারভাবে মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারে। জনগণ প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে, ডামি প্রতিনিধি না, ভুয়া প্রতিনিধি না—সেজন্য আমাদের এই সংস্কার প্রস্তাব।’

‘প্রশাসনের মাধ্যমে নির্বাচনকে কুক্ষিগত করতে বিগত সরকার অনেক কিছু করেছে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে সেজন্য আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রণীত বিধিমালার সংশোধন চেয়েছি।’

‘সংস্কার করে নির্বাচনের জন্য ৩ থেকে ৪ মাসই যথেষ্ট’

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা যেসব প্রস্তাব করেছি—নির্বাচন প্রক্রিয়ায় দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এখানে এমন কোনও প্রস্তাব করা হয় নাই—যেটা নতুন করে কোনও কিছু করতে হবে। আমরা নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার কথা বলেছি, নির্বাচনের সচিবালয় করা এবং তাদের কিছু ক্ষমতা দেওয়া ইত্যাদি, আমরা প্রচলিত আইনগুলোর সংশোধন, সংস্কার… এগুলোর জন্য অধিক সময়ের প্রয়োজন হয় না।’

‘একটা নির্বাচনের বেসিক কাজ ভোটার তালিকা প্রণয়ন। সেই ভোটার তালিকা প্রণয়নে বাড়ি বাড়ি যাওয়া… আমরা এটা বুঝি নাই কি এক্সারসাইজ হবে। ব্যাপারটা হচ্ছে যে তালিকা ঘোষণার সময়ে এটিও ঘোষণা করা হয়—কারো নাম যুক্ত না হলে তারা স্থানীয় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে গিয়ে নাম অন্তর্ভুক্ত করবেন। কারও অভিযোগ থাকে—বেঁচে নেই, বিভিন্ন কারণে ভোটার হওয়া যায় না, এরকম কারও নাম তালিকায় থাকলে তা কার্যালয়ে গিয়ে জানালেই তো ভোটার তালিকা হয়ে গেলো… এরপর নির্বাচনি প্রস্তুতি… শিডিউল ঘোষণা করা, রুল অনুযায়ী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করবে। এসব কিছু করতে এত বেশি সময় লাগার কথা না। আমরা যেসব প্রস্তাব দিয়েছি সেগুলো মেনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে খুব বেশি বিলম্ব হওয়ার প্রয়োজন হয় না।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেসব সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি দলের পক্ষ থেকে সুচিন্তিতভাবে, এক্সপার্ট কমিটির সঙ্গে বসেছি… অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি…। আমরা যেসব সংস্কারের কথা বলেছি—সেগুলো অধিকাংশ আইনি সংস্কারের বিষয়, কাগজের বিষয়… প্র্যাকটিক্যালি যে কাজগুলোর জন্য নির্বাচন কমিশন সময় নেয়, যেমন ভোটার তালিকা প্রণয়ন… নতুন ভোটার সংযোজন… কী কী ভুল-ভ্রান্তি আছে, ভুয়া ভোটার বাদ দেওয়া, ডিলিমিটেশন ইত্যাদি সব কাজ গোছাতে প্র্যাকটিক্যালি ২/৩ মাসের বেশি সময় লাগার কথা না।’

‘সরকারের আরও সংস্কার, প্রশাসনিক সংস্কার, জুডিসিয়াল সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংস্কার আছে—এগুলো সব সম্পন্ন করে নির্বাচন উপহার দিতে আমাদের মনে হয় না খুব বেশি হলে ৩ থেকে ৪ মাসের বেশি সময় লাগবে। সব রিকমন্ডেশন ফাইনাল হওয়ার পরে আপনারা ধারণা পাবেন— প্র্যাকটিক্যালি আমাদের কয়দিন সময় লাগবে একটা ইনক্লুসিভ ইলেকশন অনুষ্ঠানের জন্য।’

‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলেই …’

এক প্রশ্নের জবাবে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কেয়ারটেকার সরকার ইনপ্রেইস আছে বা হবে… এটিই ছিল সবচেয়ে বড় বাধা—একটা ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন না হওয়ার।’

‘ডিলিমিটেশন, অপকর্মে জড়িতদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বাদ রাখা এসব হচ্ছে উপসর্গ। আসল রোগ হচ্ছে কেয়ারটেকার সরকার না থাকাটা। কেয়ারটেকার সরকার পুনর্বহাল হলে এসব উপসর্গ আর থাকবে না। কেয়ারটেকার সরকার হলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে বাধ্য।’

এ সময় নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব করেছি—যাদের নেতৃত্বে অপকর্ম হয়েছে তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে তারা আগামীতে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় না থাকে।’

‘কাজেই আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনি কোনও স্ট্যাক নাই, নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। আর যারা নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবে—অপকর্মে যুক্ত থাকবে না এমন লোকদের অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছি।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিএনপি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close