রাঙামাটি প্রতিনিধি
রাঙামাটিতে প্রবারণা পূর্ণিমা পালিত
রাঙামাটির রাজবন বিহারে প্রবারণা পূর্ণিমা পালনের মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি হলো বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিনমাস বর্ষাবাস (অধিষ্ঠান)।
“পার্বত্য চট্টগ্রামে এর আগেও অনেকবার সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তীতে যাতে এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা না ঘটে এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কঠিন চীবর দান পালনে ব্যাঘাত না ঘটে এগুলো সরকারের নজর দিতে হবে। এছাড়াও পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি আনয়নে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।” বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকালে রাঙামাটি রাজবন বিহারে অনুষ্ঠিত প্রবারণা পূর্ণিমা অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানের সময় ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় এ কথা বলেন।
রাজবন বিহারের প্যাগোডার মাঠ প্রাঙ্গণে বুদ্ধ পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে প্রবারণা পূর্ণিমা ( আশ্বিনী পূর্ণিমা) অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়।
অনুষ্ঠানে বুদ্ধমূর্তি দান, সংঘ দান, অষ্টপরিষ্কার দান, হাজার প্রদীপ দান চিমিতং পূজা, বিশ্বশান্তি প্যাগোডার উদ্দেশ্য টাকা দান, পঞ্চশীল প্রার্থনাসহ নানাবিধ দানীয় যজ্ঞ সম্পাদন করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে কঠিন চীবর দান পালন না করার সিদ্ধান্ত হওয়ায় প্রবারণা পূর্ণিমার অনুষ্ঠানে শত শত পূন্যার্থীদের অংশগ্রহণে উৎসব মূখর হয়ে উঠে রাজবন বিহার প্রাঙ্গণ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। বিশ্বে শান্তি ও মঙ্গল কামনায় ভগবান বুদ্ধের নিকট প্রার্থনা ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য ও রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি নিরূপা দেওয়ান।
পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন কিরণ ধন চাকমা। প্রবারনা পূর্ণিমার মূল অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিয় খীসা। এ সময় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার ড.এসএম ফরহাদ হোসেন, জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দীপু প্রমূূখ।
পূন্যাণুষ্ঠানে ভগবান বুদ্ধের অমৃতময় বাণী প্রদান করেন রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান ভদন্ত শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির ভদন্ত শ্রীমৎ জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবির।
চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় আরো বলেন,‘অনেকে কঠিন চীবর দান পালন করা নিয়ে সামাজিকভাবে এবং সোসাল মিডিয়াতে সমালোচনা করে যাচ্ছে।
কঠিন চীবর দান না করার বিষয়ে সোসাল মিডিয়াতে লিখতেছে, কে করেছে সিদ্ধান্ত.? কারা ছিল ভিক্ষু.? কারা ছিল উপাসক-উপাসিকা.? এগুলো নিয়ে একটু বাড়াবাড়ি হচ্ছে।
মূল কথাটা হচ্ছে, ভিক্ষু সংঘের ১৫টি সংগঠনের একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে শুনেছি। আমার সাথে দ্বিপাক্ষিক একটু আলোচনা হলেও বিস্তারিত আলোচনা করার সুযোগ হয়নি ভিক্ষু সংঘের সাথে।
অনেক কিছু প্রেক্ষিত থাকতে পারে। আমি শুনেছি, ভিক্ষুদের কিছু বিনয় এর প্রেক্ষিত আছে। সেই প্রেক্ষিতে কঠিন চীবর দান করা উচিৎ বা অনুচিৎ সেগুলো আমার চাইতে ভিক্ষু সংঘরা বেশি জানেন। তাদের কঠিন চীবর দান না করার সিদ্ধান্তকে আমরা অকল্যাণ চিন্তা না করে কল্যাণ করে চিন্তা করতে পারি যে যাতে ভবিষ্যতে এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।’
প্রসঙ্গত, প্রবারণা পূর্ণিমা বা আশ্বিনী পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় ধর্মীয় উৎসব। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা একটি বিহারে তিন মাস অধিষ্ঠান করে ধ্যান, সাধনায় ব্রত থাকেন। তিন মাস অধিষ্ঠান কালে নিজেদের মধ্যে যে ভূল অপরাধ সেগুলো একে-অপরে ক্ষমা ও মৈত্রী প্রদর্শন করে থাকেন। তবে শুধু বৌদ্ধ ভিক্ষুরা নন। সাধারণ পূর্ন্যাথীরাও একে-অপরের ভূলের ক্ষমা প্রাথনা করেন।
তিন মাস বর্ষাবাস শেষে মাসব্যাপী পালন হয়ে থাকে বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দানোত্তম কঠিন চীবর দান। তবে এবারে প্রথমবারের মত পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে কঠিন চীবর দান পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৫টি বৌদ্ধ ভিক্ষু সংগঠন।