আজিজুল হাকিম, মানিকগঞ্জ

  ২২ এপ্রিল, ২০২৪

দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষিত

মানিকগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ফুফাতো ভাই

ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আবারও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) জাহিদ মালেকের ফুফাতো ভাই মো. ইসরাফিল হোসেন। তিনি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইসরফিল হোসেনের মা মৃত রাহেলা বেগম সাবেক বস্ত্রমন্ত্রী ও ঢাকা সিটি করপোরশনের সাবেক মেয়র কর্নেল (অব.) আব্দুল মালেকের আপন বোন। কর্নেল মালেকের ছেলে হচ্ছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বর্তমান মানিকগঞ্জ-৩ আসনের এমপি জাহিদ মালেক। এই হিসেবে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও মো. ইসরাফিল হোসেন সম্পর্কে ফুফাতো-মামাতো ভাই। আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মো. ইসরাফিল হোসেন টানা তৃতীয় বারের মতো চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মো. ইসরফিল হোসেন ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৎকালীন যুবদলের সাবেক সভাপতি মো. আতাউর রহমান আতাকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ইসরাফিল। পরে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বারের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান হন তিনি।

দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে মো. ইসরাফিল হোসেন বলেন, ‘আমি নির্বাচন করব। কারণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দল যেসব ক্যাটাগরিতে সিদ্বান্ত নিয়েছে, আমি সেই ক্যাটাগরিতে পড়ি না। তাই আমার ক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্তের প্রভাব পরবে না, নির্বাচনে কোনো বাধার হবে না।’

নিজের প্রার্থিতার পক্ষে ইসরাফিল হোসেন বলেন, ‘আমি নির্বাচন না করলে আমাদের (আওয়ামী লীগের) তৃণমূলে বিভেদ ও বিশৃঙ্খলা বাড়বে। তাছাড়া আমি নির্বাচন না করলে, কলাগাছ দাঁড়ালেও জিতবে। দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি, প্রায় ৪০-৪২ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আর আমার অনেক আত্মীয়-স্বজন (জাহিদ মালেক) রাজনীতি আসছেন।’

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ জানান, ‘যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন, তাদের প্রত্যেককে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া উচিত। আর যদি কেউ দলীয় সিদ্বান্ত অমান্য করে, তাহলে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

নাম প্রকাশে একাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থী জানান, ইসরাফিল হোসেন যে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের আপন ফুফাতো ভাই, এটা মানিকগঞ্জ আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী জানে। দলীয় সিদ্বান্তের আগের দিনও সম্ভাব্য উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন জাহিদ মালেক। ইসরাফিল হোসেনের জন্য অনেক প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরে যেতেও বলেছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী। নির্বাচনে যতই দলীয় সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা থাকুক না কেন, গোপনে তো এমপি (জাহিদ মালেক) ইসরাফিলের জন্য কাজ করবেই। কারণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাহিদ মালেকের প্রার্থী হচ্ছে ইসরাফিল হোসেন।

ফুপাতে ভাইয়ের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জানতে মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ মালেকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এমপির আত্মীয়ের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানান, ‘সংশ্লিষ্ট উপজেলার ভোটাররা, নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন। এবিষয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচনে কোনো বাধা নেই, এই নির্বাচনে দলীয় কোনো পরিচয়ের প্রয়োজনও নেই। তবে নির্বাচনীয় আইনে বিরুদ্ধে ঋণ খেলাপী আছে, ক্রিমিনাল মামলা ২-৩ বছর সাজা খেটেছেন, অথবা যারা নাগরিত্ব হারান, তাহলে তারা নির্বাচন করতে পারবেন না।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মানিকগঞ্জ সদর,উপজেলা পরিষদ নির্বাচন,মানিকগঞ্জ-৩ আসন,চেয়ারম্যান প্রার্থী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close