আল-আমিন মিয়া, নরসিংদী

  ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

নরসিংদীতে 

নিজের কবর খুঁড়ে পরিচর্যা চাঁন মিয়ার, পাশেই চান স্ত্রীর স্থান 

মো. চাঁন মিয়া (৭১) ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

মৃত্যুর পর ধর্ম ভেদে মানুষের শেষ বিদায় হয় বিভিন্ন নিয়মে। মুসলিম ধর্ম অনুযায়ী একজন মানুষ মারা গেলে নির্দিষ্ট নিয়মে তাকে মাটির নিচে দাফন করা হয়। মাটিতে দাফনের এই প্রথাটি মুসলিম ধর্মে যেমন সর্বজন স্বীকৃত, তেমনি ধর্মগ্রন্থেও তা রয়েছে। কিন্তু আমরা সুনির্দিষ্ট করে অনেকেই বলতে পারবো না, মৃত্যুর পর আমাদের কোথায় নিয়ে দাফন করা হবে।

আর সেই অনিশ্চয়তা থেকে ও মৃত্যুকে প্রতিনিয়ত স্মরণে রাখতে মৃত্যুর আগেই নিজের জন্য কবর খুঁড়ে পাকা করে রেখেছেন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গাবতলী গ্রামের মৃত জহর আলী ভূইয়ার ছেলে মো. চাঁন মিয়া নামে (৭১) বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। তার বসত বাড়ির পাশেই নিজের কবর খুঁড়ে রেখেছেন চাঁন মিয়া। কমপক্ষে চার বছর ধরে খুঁড়ে রাখা ওই কবরের পাশেই বসে থেকে দিনের অধিকাংশ সময় কাটান তিনি। প্রয়োজন হলে সযত্নে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজও করেন তিনি। এছাড়া স্ত্রী মমতাজ বেগমের মৃত্যুর পর তাকেও তার কবরের পাশে দাফনের জন্য উত্তরসূরিদের অনুরোধ করেছেন বলে জানা যায়।

এদিকে এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যে বোঝাপড়াও হয়েছে। যার আগে মৃত্যু হবে সে যেন পাশাপাশি দুজনের কবরের ব্যবস্থা করেন। মৃত্যুর আগে কবর খুঁড়ে রাখার এমন ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। আশপাশের লোক ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে খবর পেয়ে লোকজন খুঁড়ে রাখা কবর দেখতে আসছেন বলেও জানা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মো. চাঁন মিয়া কিছুটা আধ্যাত্মিক তরিকা অনুসরণ করেন। কিন্তু ওই তরিকায়ও মৃত্যুর আগে নিজের কবর খুঁড়ে রাখার বিধান নেই। চাঁন মিয়া জানান, তার মনে চেয়েছে নিজের কবর নিজে খুঁড়ে রাখার জন্য। সেই ভাবনা থেকেই প্রায় চার বছর আগে তিনি বসত বাড়ির পাশে নিজেই কবরটি খুঁড়ে ভেতরের দেয়াল (ইটের গাঁথুনি) দিয়ে পাকা করেছেন। এতে কারো প্ররোচনা বা কারো পরামর্শ তিনি নেননি।

প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে স্মরণে রাখতেই এমনটা করেছে জানিয়ে চাঁন মিয়া আরো বলেন, তার দুটি মেয়ে ও একটি ছেলে রয়েছে। তারা সবাই এখন প্রতিষ্ঠিত। নিজেও সরকারি চাকরি শেষ করে এখন অবসর সময় কাটাচ্ছেন। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ভালোই চলছে তার সংসার। কারো প্রতি তার কোনো ক্ষোভ নেই।

মৃত্যুর পর স্থায়ী ঠিকানায় যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে জানিয়ে চাঁন মিয়া আরো বলেন, আমার আগে মৃত্যু হলে আমার স্ত্রী খুঁড়ে রাখা কবরে শোয়াবে। আর যদি স্ত্রী আগে মারা যায়, তবে স্ত্রীকে খুড়ে রাখা কবরের পাশে খনন করে শোয়াবে।

স্ত্রী মমতাজ বেগম বলেন, সে বলেছে, সে আগে চলে যাবে। খুঁড়ে রাখা কবর দেখে তার মনটা সবসময় নরম থাকবে এবং মৃত্যুকে সব সময় স্মরণ করে চলার জন্য এমনটা করা হয়। এছাড়া তাকে যেখানে কবর দেওয়া হবে, তার পাশে আমার জন্য জায়গা রেখেছেন। আমার কবর অবশ্য খনন করা নেই। এটা আমার এবং তার প্রতিজ্ঞা। আমাদের চির বিদায়ের পর আমাদের একমাত্র ছেলে ও মেয়েরা কবরের দেখভাল করবে।

স্থানীয় বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ গাজী বলেন, প্রায় তিন থেকে চার বছর ধরে দেখছি করব খুঁড়ে রেখেছে। তিনি কবরের পাশেই বেশি সময় কাটান। এছাড়া শুনেছি, কবর খুঁড়ে রাখাই শেষ নয়, কাফনের কাপড়ও নাকি সে এনে রেখেছে। এলাকার মানুষ সবাই জানে। এমনিতে মানুষ তার অগ্রিম খুঁড়ে রাখা কবর দেখতে যায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসে তার কবর দেখতে।

পিডিএস/আরডি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নরসিংদী,পলাশ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close