চাঁদপুর প্রতিনিধি

  ২৭ অক্টোবর, ২০২১

আকুতি করেও বাঁচতে পারেননি মা

বোনের পর মাকে হত্যা করেছে মমিন!

১৮ বছর পুর্বে চাচাতো বোন রূপবানুকে ঘরের সামনে কুপিয়ে হত্যা করে মমিন দেওয়ান। একই কায়দায় ১৮ বছর পর বুধবার (২৭ অক্টোবর) ভোরে গর্ভধারিনী মাকে কুপিয়ে হত্যা করলো ছেলে।

ঘাতক ছেলে মমিন দেওয়ান চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার পশ্চিম বড়ালি গ্রামের মরহুম আব্দুল হাশেম দেওয়ানের ছেলে। যদিও খুনে ব্যবহৃত দা ধুয়ে এবং জামাকাপড় পাল্টে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায় মমিন।

জানা যায়, মা মনোয়ারা বেগমকে নিজের মা বলে স্বীকার করেন না মমিন। তিনি মনে করেন, তার মা আরো আগে মারা গেছেন। এই মহিলা তার রূপ ধরে ছলনা করছেন।

যদিও স্থানীয় লোকজন নিশ্চিত করেছেন কিছুটা মানসিক বিকারগ্রস্থ বা উগ্র স্বভাবের কারণে সে তার মায়ের সর্ম্পকে একথা বলেছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০০৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মমিন দেওয়ান একই বাড়ির রূপবানু বেগম নামে চাচাতো বোন কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর সে পালিয়ে সৌদিআরবে চলে যায়। পরে ২০১১ সালে সে দেশে ফিরলে পুলিশ তাকে আটক করে।

জেলে থাকা অবস্থাই রূপবানু হত্যা মামলার বাদী রূপবানুর বোন সুফিয়া বেগমের সাথে মমিন দেওয়ানের মা মনোয়ারা বেগমসহ অন্যরা যোগাযোগ করে মামলাটিকে আপস যোগ্য করতে চেষ্টা করেন। এরই এক পর্যায়ে বাদীর আপত্তি না থাকায় তিন বছর কারাভোগের পর মা মনোয়ারা বেগমের সহযোগিতায় জামিনে বেরিয়ে আসে মমিন।

এর পর ২০১৪ সালে পৌর এলাকার চরকুমিরা গ্রামে রাবেয়া বেগমকে বিয়ে করে সে। তাদের ঘরে আছিয়া আক্তার নামে ৬ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। কিন্তু স্বামীর উগ্র স্বভাব ও মারমুখি আচরণের কারণে স্ত্রী রাবেয়া বেগমও স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়িতে চলে যায়।

এর পর হত্যা মামলা চলাকালে আদালতে নিয়মিত হাজিরা না দেওয়ায়, তার বিরুদ্ধে আবারো ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়। ফলে ২০১৭ সালে সে আবারো জেল হাজতে যায়। এছাড়া জামিনে এসে সে এলাকার বিভিন্ন মানুষকে হুমকি ধমকি দিতো। জামিনে এসেও মমিন তার মা মনোয়ারা বেগমকে ও তার এক ভাগ্নিকে হত্যার হুমকি দিতো, বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মমিনের ভাগ্নে আশিক।

বুধবার (২৭ অক্টোবর) হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে প্রেসব্রিফিং কালে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শহিদ হোসেন জানান, মাকে হত্যকারী ছেলে মমিন দেওয়ানকে ধরতে পুলিশী অভিযানের সাথে সাথে মানুষের সহযোগিতা নিতে আমরা ফেসবুক ব্যবহার করি। ফলে ঘটনা ঘটার মাত্র তিনঘণ্টার মধ্যেই তাকে আটক করতে সক্ষম হই।

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে জানান, মমিন তার মা সর্ম্পকে অসংলগ্ন কথা বলেছেন। তবে সে হত্যার কথা স্বীকার করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা দেন। এতে বোঝা যায়, সে পুরোপুরি মানসিক রোগী নয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় পাশের ঘরে মমিন দেওয়ানের ভাবি পান্না বেগম ছিলেন। তিনি তার শাশুড়ি মনোয়ারা বেগমকে ছেলে মমিন দেওয়ানের কাছে তাকে না মারার জন্য আকুতি করতে শুনেছেন। একই সাথে মায়ের আত্মচিৎকার শুনলেও মমিন দেওয়ান মেরে ফেলার ভয় দেখানোয় তিনি সাহস করে আর বেরুতে পারেন নি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চাঁদপুর,মাকে হত্যা,বোনকে হত্যা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close