সালাহ্উদ্দিন শুভ, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)

  ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

৮০ স্কুলে ও কলেজে ৫০ শতাংশ উপস্থিতি

স্কুলে শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ

দেড় বছর পর সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে স্কুল-কলেজ। অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। দেখা যায় উপজেলার প্রায় সকল স্কুলে ৮০ শতাংশ ও কলেজে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি।

রবিবার সকালে উপজেলার বেশ কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা যায়, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় দীর্ঘ দেয় বছর পর কমলগঞ্জের স্কুল-কলেজগুলো খোলা হয়েছে। স্কুলের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের।

ছাত্রছাত্রীদের পদচারণায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। দীর্ঘদিন পর চিরচেনা পরিবেশ ফিরে পাওয়ায় অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বইছে। স্কুলে-স্কুলে তৈরি হয়েছে মিলন মেলা।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কমলগঞ্জ উপজেলা সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি ও নানা নির্দেশনা বাস্তবায়নে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রবেশ পথসহ বিভিন্ন জায়গায় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ঝুলতে দেখা যায় করোনা থেকে সুরক্ষায় সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক নানা ফেস্টুন। শ্রেণিকক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের আসন বিন্যাস। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করতে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। স্কুলে একটি কক্ষকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও আইসোলেশনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ দেখে সন্তুষ্ট মনে করছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

কমলগঞ্জ মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি বিঞ্জান বিভাগের পরীক্ষার্থী তাহেরা ও মারিয়া বিনতে মশি বলেন, করোনাভাইরাসের জন্য অনেক দিন স্কুল বন্ধ ছিল। বহু প্রতীক্ষার পর আজ আমাদের স্কুল খুলেছে। এজন্য অনেক হ্যাপি লাগছে। নিয়মিত ক্লাস করতে পারব ভেবেই খুশি লাগছে।

কমলগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মিলি মকবুল আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী প্রিয়াংকা বলেন, ‘দের বছর পর স্কুলটা খুলেছে। কি যে ভাল লাগছে বুঝাতে পারবো না। স্যার ও বন্ধবীদের সঙ্গে দেখা হলো। খুবই ভালো লাগছে।’

কমলগঞ্জ সরকারি গনমহা বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল কারিমা বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছিল জেলখানা থেকে ছাড়া পেলাম। ঘরবন্দি জীবন খুব কষ্টের ছিল। আজ আবারও কলেজের চিরচেনা রূপ ফিরে পেয়েছি। কলেজ খোলার কারণে এখন থেকে বন্ধুদের সঙ্গে আগের মতো খেলাধুলা করতে পারব। কলেজ খোলায় খুব আনন্দ লাগছে।’

কমলগঞ্জ আব্দুল গফুর মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ইমামা খাতুন বলেন, ‘আমরা চাই নিয়মিত ক্লাস হোক। সরকার শর্ট সিলেবাস দিয়েছে সেগুলো সময়মতো সম্পন্ন করা হোক। তারপর পরীক্ষা হোক। বহুদিন পর কলেজ খোলার কারণে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। মনে হচ্ছে, আমি একটি উৎসবে যুক্ত হয়েছি।;

অভিভাবক সাজু মিয়া জানান, ‘ছেলে-মেয়েদের প্রথম দিনে স্কুলে যেতে যে আনন্দ, বাকি জীবন যেন এমন আনন্দ নিয়েই যায়। স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ায় সন্তানদের পাশাপাশি আমরাও খুশি।’

স্কুল যখন খোলা ছিল তখন প্রতিদিন ছাত্র ও ছাত্রীদের নিয়ে স্কুলে আসতেন রিকশাচালক সেলিম রেজা, তবে স্কুল খোলার বিষয়ে তিনি জানান, ‘স্কুল-কলেজ খোলা থাকলে আমাদের আয়-উপার্জন একটু ভালো হবে। আমরাও লকডাউনের মধ্যে খুব খারাপ সময় পার করেছি। আর করোনা আসার পর থেকে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় যাত্রীর অভাব ছিল। আর যদি স্কুল বন্ধ না হয় তাহলে এখন থেকে তা পুষিয়ে নিতে পারব।’

কমলগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রনেন্দ্র কুমার দেব ও মকবুল আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সলমান আহমদ বলেন, ‘আমরা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুল খুলেছি। আগে থেকেই আমাদের সকল প্রস্তুতি ছিল। আজ শিক্ষার্থীদের পদচারণায় স্কুলের প্রাণ ফিরেছে। শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে স্কুলে প্রবেশ করানো হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করানো হয়েছে। স্কুলে উৎসবের আমেজ বইছে। খুভ ভালো লাগছে।’

কমলগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিলকিস বেগম বলেন, ‘স্কুল খোলা উপলক্ষে স্কুলের গেটের সামনে আমরা বিভিন্ন ধরনের রঙ-বেরঙের বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে খুব আনন্দের বন্যা বইছে। সকল নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে।’

কমলগঞ্জ সরকারি গনমহা কলেজের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান মিয়া ও আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. হেলাল মিয়া বলেন, ‘দের বছর পর ছাত্র-ছাত্রীদের কলেজ প্রাঙ্গনে দেখতে পেরেছি খুব ভালো লাগছে বলে বুঝানো যাবে না। শিক্ষার্থীদের মাঝে খুব আনন্দের বন্যা বইছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। তাছাড়া ছাত্র ছাত্রীদের ফুল ও কলম দিয়ে বরন কিেছ। আমাদের কলেজে প্রায় ৫০% ছাত্র,ছাত্রীদে উপস্থিতি ছিলো।’

কমলগঞ্জ উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সামছুন্নাহার পারভিন বলেন, ‘উপজেলার সকল স্কুল-কলেজ দেড় বছর পর খোলা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুল কলেজ কর্তৃপক্ষকে সব ধরনের পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সময়মতো তারা সেগুলোবাস্তবায়ন করেছে। আজ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের উপস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। এখনও পর্যন্ত কারো কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। তিনি আরো বলেন, উপজেলার প্রায় সকল স্কুল ৮০% কলেজে ৫০% শিক্ষার্থীর উপস্থিতি আছে বলে জানা যায়।’

পিডিএসও/এসএমএস

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কমলগঞ্জ,মৌলভীবাজার
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close