টেকসই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিপুল অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। ‘অনিয়মের মহোৎসব’ হয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে। বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ খাতের ব্যাপক অনিয়ম এবং দুর্নীতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন খাত। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর এসব কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে এসব কেন্দ্র বন্ধ করে দিলে বিদ্যুৎ চাহিদার যে ঘাটতি তৈরি হবে তা পূরণে দেশে বেশকিছু টেকসই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশষেজ্ঞরা।
প্রতিদিনের সংবাদের এক প্রতিবেদনে গতকাল শুক্রবার বলা হয়, রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ আর না বাড়াতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছিলেন দ্বাদশ সংসদের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার। তখন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়িত না হওয়ায় ভাড়াভিত্তিক কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে পায়রা, রামপালের মতো বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসার পর রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বন্ধ করে দেওয়ার সময় এসেছে বলে আভাস দিতে শুরু করে বিদ্যুৎ বিভাগ। রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করাও হয়। রামপাল প্রত্যাশা অনুযায়ী উৎপাদনশীল না হওয়ায় চাহিদার ঘাটতি রয়েই যায়। এতে রেন্টাল কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ পুনরায় বাড়ানো হয়। কয়েক মাস আগেও সামিট, ওরিয়নসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপের রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ায় তৎকালীন সরকার। রেন্টাল-কুইক বিদ্যুতের উচ্চ দামের কারণে পিডিবির হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসানের বিষয়ে সমালোচনা আছে। লোকসান পোষাতে বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনগণের ‘পকেট কাটা’ হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার মাঝারি ও বড় সক্ষমতার কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিল দেড় দশক আগে। যথাসময়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করা না হয়নি। ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদার জোগান দিতে ৩-৫ বছর মেয়াদি চুক্তিতে ২০১১-১২ সালে উৎপাদনে আসা দ্রুত ভাড়াভিত্তিক (কুইক রেন্টাল) ও ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের অধীনে করা চুক্তিগুলো পর্যালোচনায় গঠিত জাতীয় কমিটি জনগণের কাছে দুর্নীতির তথ্য চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যেকোনো ব্যক্তি ওই আইনের অধীনে চুক্তিবদ্ধ দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্থাগুলোর দুর্নীতি সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণাদি কমিটিতে পাঠাতে পারবেন। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সম্প্রতি ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্কার : সিপিডির প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানোর দাবি জানায়। ওই সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের দেশে ৪০ শতাংশ উদ্ধৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্যাপাসিটি আছে। নতুন করে আর এক মেগাওয়াট যুক্ত না হলেও ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিদ্যুতে ঘাটতি হবে না। তাই রেন্টাল, কুইক রেন্টাল ও লো-ইফিশিয়ান্ট বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়া দরকার। বর্তমান সরকার এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণে কার্যকর উদ্যোগ নেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"