লালমনিরহাট প্রতিনিধি

  ০১ জানুয়ারি, ২০২৪

বুড়িমারী স্থলবন্দর

আমদানির পাশাপাশি কমেছে রাজস্ব আহরণ

ডলারের বিনিময় হার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, এলসি-সংক্রান্ত জটিলতা, একক গ্রাহক ঋণসীমা সংকোচনসহ নানা জটিলতায় লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে কমছে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ। এমন পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের যেমন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তেমনই বন্দর থেকে সরকারের আয়ও সংকোচনের মুখে পড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এ বন্দরে ৩২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ কোটি ৭ লাখ ৯৪ হাজার ৫০০ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।

ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট কাস্টমস কর্মকর্তারা বলেছেন, মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা, ঋণ সংকটসহ নানা কারণে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। এমন বাস্তবতায় আমদানি কমিয়ে দিতে হচ্ছে। ফলে এ স্থলবন্দরে রাজস্ব আয় কমেছে। বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমস সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে ৩৫ কোটি ২ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা রাজস্ব আয় করা হয়। এর বিপরীতে আয় হয় ৫৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য মাসভিত্তিক রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি।

বুড়িমারী স্থলবন্দর ব্যবহারকারী আমদানিকারক ব্যবসায়ী মেসার্স রাহি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. তারেক ইসলাম বলেন, ‘গত অর্থবছরে ডলারের বিনিময় হারে অস্থিতিশীলতার কারণে এলসি বিল পরিশোধ করতে গিয়ে আমার প্রায় ৫০ লাখ টাকারও বেশি লোকসান হয়েছে। ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেীয়া পুঁজি শেষ হয়ে গেছে। এরপরও অল্প অল্প করে আমদানি করছি।’ এ ব্যবসায়ী আরো বলেন, ‘আগে এলসি খুলতে বেশি নগদ অর্থের প্রয়োজন হতো না। মাত্র ২৫ শতাংশ মার্জিনের টাকা জমা দিলেই এলসি খোলা যেত। কিন্তু এখন মার্জিনেরও বেশিসহ ১২৫ শতাংশ টাকা জমা দিলেও এলসি খুলতে অনুমতি নিতে হয়। এতে আরো বেশি সময় লাগছে। আমরা প্রত্যাশা করছি, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। তখন হয়তো সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। সবাই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে।’

বুড়িমারী স্থলবন্দরের অপর ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবীর সওদাগর বলেন, ‘গত অর্থবছরে হঠাৎ ডলার দর বৃদ্ধি পায়। চড়া দামে ডলার কিনে এলসির দায় পরিশোধ করতে গিয়ে অনেক ব্যবসায়ী নিজের পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন। এসব ব্যবসায়ী ব্যাংকে জমি-বাড়ি বন্ধক রেখে লিমিট সুবিধা নিয়েছিলেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের মর্টগেজ লিমিট সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ায় এখন সম্পূর্ণ নগদ টাকায় এলসি খুলতে হচ্ছে। এজন্য আমদানি কমে গেছে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে গেছে।’ বুড়িমারী স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সায়েদুজ্জামান সাঈদ বলেন, ‘ব্যাংক ম্যানেজাররা ১২৫ শতাংশ মার্জিনের টাকা জমা নিয়ে তারপর এলসি খোলার অনুমতি দিচ্ছে। তাছাড়া অহেতুক ব্যবসায়ীদের লিমিট সুবিধাও বন্ধ করে দিয়েছে। পুঁজি না থাকায় ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না।

ফলে আমদানি ব্যাহত হচ্ছে।’ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড বুড়িমারী উপশাখার ব্যবস্থাপক মো. মাসুদণ্ডউর-রহমান বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কারণে ব্যবসায়ীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির বিপরীতে দেওয়া লিমিট সুবিধা এখন বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী এলসি খোলা হয়ে থাকে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। কোনো কিছু করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এবং আমাদের ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে।’

বুড়িমারী ন্যাশনাল ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মো. সুজা আলী বলেন, ‘ডলার দর বিবেচনায় ব্যবসায়ীরা এলসি খুলছেন। বর্তমানে পাথরের চাহিদা কম এবং দেশের অভ্যন্তরে এ নির্মাণসামগ্রীর দাম কমে যাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী এলসি খুলছেন না। ডলার দর স্থিতিশীল না থাকায় ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিতেও চাচ্ছেন না।’ বুড়িমারী স্থলবন্দরে কর্মরত রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সরোয়ার আলম বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সময়ের তুলনায় আমদানি কমেছে। ফলে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ কিছুটা কম। তবে হরতাল-অবরোধ আমদানি ও রপ্তানিতে কোনো সমস্যা তৈরি করেনি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close