রুখসানা কাজল

  ২০ জানুয়ারি, ২০২৩

ধারাবাহিক উপন্যাস- ৯

বায়োস্কোপ

ওমর বই পড়েছে প্রচুর। ওর আব্বুও ছিল বাম ধারণায় বিশ্বাসী কিন্তু ছা-পোষা ইশকুল শিক্ষক। ছেলে ভালো স্টুডেন্ট। ইংরেজিতে কথা বলে এবং লেখালেখিতে দক্ষ, রাত জেগে কবিতা লেখে এটুকুই ছিল ওর আব্বু-আম্মুর কাছে ইনফরমেশন। কিন্তু ছেলে যে সশস্ত্র রাজনীতির বাম অলিন্দে ঢুকে পড়েছে এ সম্পর্কে তারা কিছুই জানত না। প্রথম দিকে ওমর কবিতা লিখত অমিত্রাক্ষরে। মাইকেল মধুসূদন ছিল ওর আদর্শ। আন্ডারগ্রাউন্ডে এসেও কবিতা ছাড়েনি ওমর। যদিও সেই সময়ের বাম আন্দোলন রোমান্টিক কবিদের ব্যাপারে ভয়ংকর রকমের কনজারভেটিভ ছিল। কোনো কমরেডের কবিতা টবিতা লেখালেখির ভাবালুতাকে তেমন প্রীতির চোখে না দেখে বরং সমালোচনা করা হতো। তবে বিদ্রোহী কৃষক, চাষা, শ্রমিক অথবা নিরন্ন শ্রমজীবী মানুষদের নিয়ে লেখা হলে সে কবির অন্যরকমের ঘ্যাম ছিল। বামরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করত, বাম ঘরানার কবিদের কবিতায় থাকবে প্রতিবাদের আগুন। পুঁজিবাদের তখ্ত জ্বালাও পোড়াও, মানি না, মানব না ইত্যাদি না থাকলে সেগুলো আবার কীসের কবিতা!

ওমরের অভ্যাস ছিল কবিতা লিখে সবাইকে শোনানো। কবিতা শুনিয়ে জুলজুল করে তাকিয়ে থাকত কেমন হয়েছে তা জানার জন্য। ইনু এক দিন বলেছিল, ভালোই তো লিখিস, এবার এসব ছেড়ে সংগ্রামী কবিতা লিখতে শুরু কর বিচ্ছু। সেন্ট্রাল কমিটির নেতারা এলে ওমরের কবিতা শোনানো হতো। খুশি হতেন অনেকে। ওমরও তরুণ সুলভ লজ্জায় নেতাদের প্রশংসার চাপড়ানি গ্রহণ করত। মুশকিল ছিল এই যে, ওমর প্রায়ই ওর লেখা কবিতা হারিয়ে ফেলত। এত খেটেখুটে লেখা কবিতা কী করে যে হারিয়ে যেত, কেউ বুঝতে পারত না। অমিত্রাক্ষরে লেখা তো খুব সহজ ব্যাপার নয়। তা ছাড়া পুলিশ এবং রক্ষীবাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমণ অন্যদিকে সাধারণ জনগণের অসমর্থনে ধাওয়া খেয়ে ইনুরা তখন কেবলই সেন্টার পাল্টাচ্ছে। আজ যশোরের অমুক জায়গায় তো কাল খুলনার অমুক গ্রামে, পরশু দিন মাগুরা অথবা পাবনা। আবার কখনো বরিশাল হয়ে পটুয়াখালীর শেষ প্রান্তে সুন্দরবনের কাছাকাছি কোনো গোপন ঘাঁটিতে। এত সাবধানতা সত্ত্বেও কীভাবে যেন ওদের অবস্থান জেনে যাচ্ছিল সরকারের জান্তারা। এক এক করে ধরা পড়ে যাচ্ছিল কমরেডরা। কবিতা হারানো নিয়ে ওমরের দুঃখ পাওয়া দেখে পূরবী স্নেহের সুরে বলেছিল, ওমু, তোর কবিতাগুলো এবার থেকে আমার কাছে জমা রাখিস তো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close