নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪

নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নজর সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবায়

এবারের নতুন মন্ত্রিসভায় পুরোনোদের পাশাপাশি নতুন মুখের সংখ্যাই বেশি। এর মধ্যে ৫ জন আগে বিভিন্ন মেয়াদে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী থাকলেও বিদায়ি মন্ত্রিসভায় ছিলেন না। অর্থাৎ তারা আবার সুযোগ পেয়েছেন। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন ১৪ জন। এ ১৪ জনের মধ্যে টেকনোক্র্যাট হিসেবে আছেন দুজন। একজন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। অন্যজন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, তিনি একাদশ সংসদের মন্ত্রিসভায়ও টেকনোক্র্যাট হিসেবে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

ডা. সামন্ত লাল সেন সরাসরি কোনো রাজনীতিতে ছিলেন না। আগুনে পোড়া মানুষের চিকিৎসায় নিজেকে নিবেদিত করেই পরিচিত হয়ে ওঠেন দেশের মানুষের কাছে। নজর কাড়েন সরকারের ওপরের মহলের। ফলে হঠাৎ করেই তাকে মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসায় তিনি নিজেও যেন চমকে গেছেন। অন্যসব মহলও ‘চমক’ হয়ে উঠেছে। এদিকে মাঝে দুই মেয়াদ পর আবার একজন চিকিৎসককে নিজেদের সেক্টরের মন্ত্রী হিসেবে পেয়ে উচ্ছ্বসিত চিকিৎসক সমাজের প্রতিনিধিরা।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, আমিও উচ্ছ্বসিত। অপরিসীম কৃতজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। আমি চিন্তাও করিনি যে মন্ত্রী হব। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে আমার প্রথম লক্ষ্য থাকবে চিকিৎসাসেবাকে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে আরো কতটা সহজ ও নাগালের মধ্যে নিয়ে যাওয়া যায় সেদিকে। এ মুহূর্তে এটাই বড় চাওয়া। বাকি অগ্রাধিকার বুঝেশুনে ঠিক করব। এজন্য একটু সময় দরকার।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘ভালো হয়েছে। আমাদের প্রফেশনের মানুষকে পেয়েছি। তিনি এ মন্ত্রণালয়ের সমস্যা সম্ভাবনা ভালো বুঝবেন। আমরাও তাকে প্রয়োজনমতো সহায়তা করব। আমরা খুবই খুশি।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মিলন বলেন, এটা তো বড় চমক। আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত ১০ বছর পর একজন চিকিৎসককে আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে পাওয়ায়। এছাড়া ডা. সামন্ত লাল সেন যোগ্য ও দক্ষ একজন প্রশাসনিক সংগঠক হিসেবে প্রমাণ দিয়েছেন বার্ন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠায়। আশা করি, তিনি এখানেও সফল হবেন। মানুষ হিসেবেও তিনি বেশ ভালো।

স্বাস্থ্য অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, আমরা আশাবাদী, স্বাস্থ্য খাতে একজন নিখাদ সৎ মানুষ এসেছেন। যাকে নিয়ে এখনো কোনো বির্তক বা দুর্নীতির কিছু শুনিনি। তিনি ক্যারিশম্যাটিকও আছেন। যদিও তার সামনে অনেক ধরনের কঠিন চ্যালেঞ্জ আছে। এসব দক্ষতার সঙ্গে ওভারকাম করতে হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর তাকে শুভেচ্ছা জানাতে যাওয়া কর্মকর্তাদের কাছে ব্যক্ত করা প্রতিক্রিয়ায় ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে স্নেহ করতেন জানতাম, কিন্তু এতটা স্নেহ করতেন তা জানতাম না। প্রধানমন্ত্রী আমার ওপর বড় দায়িত্ব দিয়েছেন। যে আস্থা রেখে তিনি আমাকে মন্ত্রিত্ব দিয়েছেন, আমি তা যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করব। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বিভিন্ন হাসপাতালে সরাসরি গিয়ে পরিদর্শন করার কথা বলেছেন এবং যেকোনো প্রয়োজনে তার (প্রধানমন্ত্রী) কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণের কথা বলেছেন। আমার এক জীবনে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু নেই।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চিকিৎসাসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি ডা. সামন্ত লাল সেনকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ প্লাস্টিক সার্জন সোসাইটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

সামন্ত লাল সেন ১৯৪৯ সালের ২৪ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ববঙ্গের সিলেটের হবিগঞ্জের নাগুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সেন্ট ফিলিপস হাইস্কুল থেকে ১৯৬৪ সালে মাধ্যমিক ও সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ১৯৮০ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা থেকে ‘ডিপ্লোমা ইন স্পেশালাইজড সার্জারি’ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তী সময়ে জার্মানি ও ইংল্যান্ডে সার্জারিতে আরো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close