বুড়িচং (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
ময়নামতি
আবহাওয়া প্রতিকূল ক্ষতিতে কপিচাষিরা
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতির ফুলকপি চারা উৎপাদনকারীদের দুর্দিন চলছে। চলতি বছর উৎপাদন-বিপণনের ভরা মৌসুম জুড়ে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় চারা উৎপাদন করলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে টানা বৃষ্টি, বন্যা, জলাবদ্ধতায় একদিকে চারা নষ্ট, অন্যদিকে টিকে যাওয়া চারা বিক্রি করতে না পেরে লাখ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে চাষিরা।
জানা যায়, ময়নামতির সমেশপুর গ্রামজুড়ে দীর্ঘ প্রায় চার দশকেরও বেশি আগ থেকে স্থানীয় কৃষকরা ফুলকপির চারা উৎপাদন করে আসছে। একসময় সারাদেশ থেকে কৃষকরা এখানে এসে ফুলকপির চারা ক্রয় করত। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে এখানকার কৃষকরা জমি তৈরির কাজ শুরু করে। ছোট ছোট বিট করে সেখানে বীজ রোপনের পর রোদণ্ডবৃষ্টি থেকে চারা রক্ষা করতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়।
বীজ তলায় কথা হয় চারা উৎপাদনকারী মোবারক, নারায়ণ, লতিফ প্রমুখের সাথে। তারা জানান, প্রতিবছর জুলাই মাসের শেষ দিকে তারা চারা বিক্রি শুরু করেন। একটানা চারা বিক্রি চলে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। এ সময় নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, ফেনী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, হবিগঞ্জসহ কুমিল্লার প্রায় সকল উপজেলা থেকে শত শত কৃষক চারা ক্রয় করে শীলকালীন এই সবজির আবাদ করতে নিয়ে যেত। এজন্য এখানকার প্রতিটি কৃষক পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতার বাইরে অবস্থা ভেদে ২/৩/৪ জন শ্রমিক প্রতিমাসে খাওয়া, থাকা ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক খরচ ছাড়াও জনপ্রতি ১৮-২০ হাজার টাকা চুক্তিতে চারার মৌসুম ৪ মাসের জন্য নিয়োগ দিত। এ বছরও তার ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু সারাদেশের ন্যায় কুমিল্লাতেও ছিল অতিবৃষ্টি।
তারা আরো জানান, অন্য স্থানের কৃষকরা যেমন জলাবদ্ধতার জন্য চারা নিতে আসেনি বিপরীতে আমরা অতিবৃষ্টি উপেক্ষা করে পলিথিনে ঢেকে রেখে চারা উৎপাদন করলেও একদিকে ক্রেতা শূন্যতা, অন্যদিকে আমাদের এখানেও জলাবদ্ধতায় বিপুলসংখ্যক চারা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে অনেক চারা উৎপাদক লাখ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। বীজতলা তৈরি করে বীজ রোপণের ৪ দিনের মধ্যেই চারা গজাতে শুরু করে। ৭/৮ দিনেই চারা বিক্রির উপযোগী হয়। এ সময় দিনভর রোদ, বৃষ্টি, ঝড় বা বিরূপ প্রাকৃতিক আবহাওয়া থেকে রক্ষা করতে কখনো সেচ, কখনো পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া কখনো বা পলিথিনের অবমুক্ত করা এ যেন কপি চাষিদের প্রতিটি মুহূর্তের কাজ।
স্থানীয় একাধিক চাষি জানান, সমেশপুর এলাকায় কমপক্ষে ৪০ একরের বেশি জমিতে প্রায় একশ পরিবার কপি চারা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। চারা উৎপাদনের সাথে শ্রমিকসহ প্রতিদিন প্রায় এক হাজার লোক কাজ করছে। বীজতলায় চাষিরা আরো জানান, এখানকার বড় বড় চারা উৎপাদনকারীদের মধ্যে জাহাঙ্গীর প্রায় ৮০ শতক, আনোয়ার মেম্বার ৮০ শতক, সোহাগ ৪০ শতক, মোবারক ৫০ শতক, নারায়ন দেব ৩৬ শতক, রাসেল ৪০ শতক জমিতে চারা উৎপাদন করছেন। তারা উন্নতমানের ফুলকপি বীজ আইসবল, ফেসবল, মাউন্টেন ৪৭, সিরাজী, ফ্রেস, ওয়েটস্টোন, সিলভারকাপ প্রভৃতি জাতের চারা উৎপাদন করেন।
একাধিক কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এখানকার কোনো কৃষকই সরকারিভাবে সামান্যতম আর্থিক সহযোগিতা পায় নাই।
জানতে চাইলে বুড়িচং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরিনা আক্তার বলেন, সরকারিভাবে তাদের প্রণোদনা দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই। তবে মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত তাদের পরামর্শ দিয়ে থাকি।
"