জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ১৭ অক্টোবর, ২০২৪

জগন্নাথপুরের কুশিয়ারা নদী

তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে ধীরগতি ভাঙনে বেড়িবাঁধ-বসতবাড়ি

ভাঙনের কবলে আশারকান্দি পাইলগাঁও এবং রানীগঞ্জ ইউনিয়ন

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর ভাঙনে যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বেড়িবাঁধসহ বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি। ভাঙনে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থার রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, বাজার, মসজিদ, কবরস্থান, ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

জানা গেছে, বছর বছর ভাঙনের উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের বড় ফেছী বাজার, পাইলগাঁও ইউনিয়নের জালালপুর, পূর্ব জালালপুর (ভাঙ্গাবাড়ি), পাইলগাঁও, কদমতলা, রানীগঞ্জ ইউনিয়নের আলমপুর, বাগময়না, রানীনগর, বালিশ্রী গ্রামের সড়ক, মসজিদ সহ বসতবাড়ি নদী ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে। কয়েক দশকের টানা নদী ভাঙ্গনে উপজেলার এই তিনটি ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থার রাস্তাঘাট, শতাধিক বসতবাড়ি, বাজার, মসজিদ, কবরস্থান, ফসলি জমি কুশিয়ারা নদীর অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে। জগন্নাথপুর-বেগমপুর সড়কটি ভাঙ্গাবাড়ী এলাকায় পরপর ৩ বার ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। এবারও সড়কটি নদী ভাঙ্গনের সম্মুখীন। ফলে যেকোনো সময় এই সড়কপথে যাতায়াত বন্ধ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে অভিযোগ ন্থানীয় বাসিন্দাদের।

জানা গেছে, বিগত সরকারের সময়ে কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকার ভাঙ্গাবাড়ি, ফেছি বাজার ও বাগময়না গ্রামে নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হয়, টানা একবছর ধরে ব্লক তৈরি করা হলেও নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ এখনো শুরু হয়নি। কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে প্রাচীন গ্রাম খানপুর ও জালালপুর। টানা ৫ বছর ধরে ভাঙ্গনে বেড়ীবাঁধ সহ খানপুর ও জালালপুর গ্রামের প্রায় ১০টি বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে, এই দুটি গ্রামের প্রায় ২০টি বসতবাড়ি নতুন করে নদী ভাঙ্গনের হুমকির সম্মুখীন রয়েছে। সরকারি কাগজে নাম থাকলেও একযোগ আগে কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে সম্পুর্নই বিলীন হয়েছে গঙ্গা নগর ও মধীপুর নামক দুটি গ্রাম।

গঙ্গা নগর গ্রামের রাইছ মিয়া বলেন, আমার বসতঘরের পাশে কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। হয়তো এইবার আমার বাড়িটি ভেঙ্গে নিয়ে যাবে। আমি গরীব মানুষ একবার বাড়ি ভাঙ্গলে আবার বাড়ি বানানোর সামর্থ নেই। জালালপুর গ্রামের রফান উদ্দিন বলেন, ঘরের কাছে কুশিয়ারা নদী, আর ১০ ফুট ভাঙ্গলেই আমাদের বাড়িটি ভেঙ্গে নিয়ে যাবে।

খানপুর গ্রামের গ্রামের সুনুক উদ্দিন বলেন, আমার বাড়িটি ভেঙ্গে নিয়ে গেছে, এখন পরিবার নিয়ে অন্যের বাড়িতে বসবাস করছি। পূর্ব জালালপুর গ্রামের কদর আলী বলেন, কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে দুই বার বসতবাড়ি হারিয়েছি। এরমধ্যে টানা নদী ভাঙ্গনে উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের রানী নগর, বাগময়না ও বালিশ্রী গ্রামের মসজিদ, বসতবাড়ি, চলাচলের সড়ক, আবাদি জমি ভেঙ্গে নদীতে পরিনত হয়েছে।

রানীনগর গ্রামের আশরাফুল আলম বলেন, পাঁচ বছর ধরে আমাদের রানীনগর গ্রামটি কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনের শিকার, অনেক পরিবারের বাড়িঘর ভেঙ্গে নিয়ে গেছে, আমাদের গ্রামের ১৫টি বাড়ি যেকোনো সময় ভাঙ্গনের শিকার হবে। বাগময়না গ্রামের আল আমিন ইসলাম বলেন, আমাদের গ্রামে নদীর ভাঙ্গন বন্ধ করার জন্য একবছর ধরে ব্লক তৈরি করা হচ্ছে, এখনো কাজ শুরু হয়নি।

পাকা সড়ক নদী ভাঙ্গনের পর থেকে বিলিশ্রী গ্রামের গুলজার মিয়ার বাড়ির পুকুর পাড় দিয়ে ৭টি গ্রামের জনসাধারণ যাতায়াত করেন। বর্তমানে পুকুর পাড়টিও নদী ভাঙ্গনের সম্মুখীন হয়েছে। এতে যেকোন সময় রৌয়াইল রানীগঞ্জ খেয়াঘাট সড়ক পথে যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

জগন্নাথপুর উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (অঃদাঃ) পওর ইরফানুল ইসলাম জানান, ফেছীবাজার, ভাঙ্গাবাড়ি ও বাগময়না কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ব্লক তৈরি হচ্ছে। বন্যা ও নদীর পানি বেশি থাকায় কাজ শুরু করা যাচ্ছেনা। চলতি বছরের ডিসেম্বরে অথবা আগামী জানুয়ারি মাস থেকে তীর সংরক্ষণ কাজ শুরু হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম জানান, ফেছীবাজার, ভাঙ্গা বাড়ি সহ ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় ব্লক তৈরি হচ্ছে। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে, এজন্য নতুন এলাকায়ও ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। নদী খনন করা প্রয়োজন, এজন্য বর্তমান সরকারের সময়ে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close