তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর

২৩ হাওরে ধান কাটা শুরু লক্ষ্য ৭০ হাজার টন

তাহিরপুরের হাওরগুলোতে শুরু হয়েছে ধান কাটা-মাড়াই। এলাকার কিষাণ-কিষানিরা এখন ব্যস্ত। তাদের দম ফেলার ফুরসত নেই। ধান কাটা, বহন করা, মাড়াই করা, শুকানো, ঝাড়াই করে ঘরে তোলার কাজে তারা ব্যস্ত। পাহাড়ি ঢলে ফসলহানির আশঙ্কায় আগেভাগেই কোমর বেঁধে নেমেছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কর্মব্যস্ত প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিকের মধ্যে অর্ধেকই নারী। পুরুষ শ্রমিকরা ধান কাটছেন আর ধান মাড়াই-ঝাড়াই ও শুকানোসহ গোলায় তোলার কাজে ব্যস্ত নারী শ্রমিকরা।

অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যার কারণে মাঝেমধ্যেই ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয় তাহিরপুর উপজেলা। সে কারণে আগেভাগেই কৃষকরা ধান কাটা শুরু করেন। অপরদিকে দীর্ঘদিন কর্মহীন শ্রমিকরা কাজ পেয়ে আছেন খোশ মেজাজে। তাদেরও আয়-রোজগারের পথ খুলে দিয়েছে মাঠভরা সোনালি ধান। ৬০০ টাকায় ধান কাটছেন শ্রমিকরা।

উপজেলার শনির হাওর, মাটিয়ান হাওর, সমসা চুনখলা, এরালিয়া কোনা, মাঝের গুল, লামার গুল, রাঙামাটিয়া ও দেখার হাওর ঘুরে দেখা যায়, ধান কাটছে পুরুষরা। নারীরা মেশিনে মাড়াই, খড়-নাড়া, ধানখলা তৈরি, ধান শুকানোসহ নানা কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। এর মধ্যে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও রয়েছে। কেউ ধান কাটছেন কেউ কেউ খেতের ‘খলা’ (ধান মাড়াই ও শুকানোর স্থান) তৈরিতে ব্যস্ত। ধান কাটা শেষে ইঞ্জিনচালিত নৌকা, ট্রলি, লরি এবং মহিষের গাড়ি দিয়ে জমি থেকে খলায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এরপর মাড়াই কল দিয়ে চলছে মাড়াই। পরে সেখানেই শুকানো হচ্ছে মাড়াই করা ধান। কড়া রোদে শুকানো ধান বস্তাভর্তি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গোলায়। উপজেলার ২৩টি হাওরে বোরো আবাদ করা হয়েছে। আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃষকদের দ্রুত পাকা ধান কাটার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ১ বৈশাখ থেকে উপজেলার প্রায় সব হাওরের পাকা ধান কাটার কাজ শুরু করেছেন কৃষকরা। প্রায় ত্রিশ হাজার শ্রমিক এ ধান কাটার কাজে অংশগ্রহণ করেছেন। কৃষকদের সবসময় পরামর্শ দেওয়ার জন্য মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তারা কাজ করছেন। এবং সার্বক্ষণিক কৃষকদের সহযোগিতা দেওয়ার জন্য উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

এদিকে ধান মাড়াইয়ের পর খলা থেকেই ধান বিক্রি শুরু করেছেন কৃষকরা। বিশেষ করে যারা ঋণ নিয়ে ধানের আবাদ করেছেন, তারা ঋণ পরিশোধের জন্য মাঠেই ভেজা ধান বিক্রি করছেন। এতে তাদের আক্ষেপ নেই। কারণ এ বছর অতিরিক্ত বৃষ্টি না হওয়ায় হাওরের ধান শুকনো থাকায় তুলনামূলকভাবে ভালো দাম পাচ্ছেন তারা।

বড়দল গ্রামের কৃষক গোলাম জিলানী জানান, কৃষকের হাত এখন খালি। ঋণ পরিশোধ করতে এবং সংসার চালাতে খলা থেকেই ধান বিক্রি করছেন তারা। আমাদের এলাকায় ১ হাজার টাকায় ধান বিক্রি হচ্ছে।

সালেমা বিবি বলেন, বৈশাখে মেয়েদের অনেক কাজ। পুরুষরা ধান কাটেন। সেই ধান নারীরা মাথায় করে বয়ে নিয়ে যায় মাড়াই করার জন্য। এরপর ধান রইদে (রোদে) শুকাতে হয়।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান-উদণ্ডদৌলা প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, উপজেলায় এ বছর ১৭ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ হাজার টন। এবার ধানের ফলন বেশি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close