ক্রীড়া ডেস্ক

  ২৪ মার্চ, ২০২৪

রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করা হলেও

ইসরায়েলের বেলায় কেন চুপ ফিফা!

২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়া আগ্রাসন চালানোর পর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল ফিফা। রাশিয়াকে ২০২২ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব থেকেও নিষিদ্ধ করেছিল ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক এ সংস্থাটি। ফিফার দেখানো পথে উয়েফাও রুশ ক্লাবগুলোকে তাদের সব প্রতিযোগিতা থেকে বহিষ্কার করে। মানবাধিকারের স্লোগান গাওয়া ফিফা ইউক্রেন ইস্যুতে সোচ্চার থাকলেও গাজা ইস্যুতে একবারে নীরব ভূমিকা পালন করছে। গত বছরের ৭ অক্টোবরের পর থেকে চলছে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ, তখন থেকেই গাজায় একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। সে হামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার শিশুসহ ৩১ হাজার ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছেন। গাজায় ইসরায়েলের সহিংস আক্রমণ ও গণহত্যার প্রতিবাদে দেশটিকে ফুটবল থেকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল ফিলিস্তিন। শুধু ফিলিস্তিন নয়, ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরো কয়েকটি দেশ ইসরায়েলকে সব ধরনের ফুটবলীয় কার্যক্রম থেকে বহিষ্কারের জন্য ফিফার কাছে চিঠি দিয়েছিল। তবে গাজা ইস্যুতে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফিফার এমন দ্বিমুখী নীতিতে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে ফিলিস্তিন ফুটবল।

এর আগে ইউক্রেন ইস্যুতে তাৎক্ষণিকভাবে রাশিয়াকে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব থেকে নিষিদ্ধ করলেও গাজা ইস্যুতে ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও ফিফা মুখে লাগাম টেনে রেখেছে। এ ব্যাপারটাকে ভালোভাবে নিচ্ছে না ফিলিস্তিনের ফুটবল সংশ্লিষ্টরা। এদিকে আইসল্যান্ডের সঙ্গে ইউরো ২০২৪ এর কোয়ালিফায়ারের প্রথম লেগে মাঠে নেমেছিল ইসরায়ল। ম্যাচে আইসল্যান্ড ৪-১ গোলের ব্যবধানে জয় পেয়েছে। গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে ম্যাচটিকে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে সরিয়ে নেয় ফিফা। এ মাঠকেই ইসরায়েলের হোম ভেন্যু হিসেবে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ফিফার এমন দ্বিচারিতার বিষয়ে সংস্থাটির মন্তব্য চেয়েছিল সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। কিন্তু কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ফিফা। এদিকে ম্যাচের আগে আইসল্যান্ড কোচ জানিয়েছিলেন, তারা ইসরায়েলের বিপক্ষে খেলতে না চাইলেও অনেকটা বাধ্য হয়েই মাঠে নামছেন।

‘গাজায় যা হচ্ছে, তারা (ইসরায়েল) নারী, শিশু ও অন্য মানুষের সঙ্গে যা করছে, এসব কারণে আমি ইসরায়েলের বিপক্ষে খেলার সময় অস্বস্তিতে ভুগব। এমনটা মোটেও কাম্য নয়। যদি জানতে চান, এ ম্যাচটি খেলা উচিত কি না, আমি বলব, খেলা উচিত নয়’- ম্যাচের আগে বলেছিলেন আইসল্যান্ড কোচ অ্যাজ হার্ডি। গাজায় ইসরায়েলি সহিংসতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে এ নরওয়েজিয়ান কোচ বলেছেন, ‘এটা খুবই মর্মান্তিক। প্রতিদিন যা দেখছি, এটা কোনোভাবে আমার মাথা থেকে যাচ্ছে না।’ ইসরায়েলের এমন সহিংসতায় দেশটির বিপক্ষে খেলতে অসম্মত হলে বিভিন্ন দিক থেকে নিষেধাজ্ঞা আসবে বলে মনে করেন হার্ডি, ‘আমরা যদি (ইসরায়েলের বিপক্ষে) না খেলি, আমাদের নিষিদ্ধ করা হবে এবং (আমাদের সঙ্গে) অন্য দেশ যেন না খেলে, এমন শাস্তির ঝুঁকি থাকবে।’ এদিকে গাজা ইস্যুতে ফিফার চুপ থাকা দেখে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ফিলিস্তিনের সাবেক ফুটবলার মোহাম্মদ বালাহ। একইসঙ্গে ফিফার ‘মানবতা ও সমান অধিকার ক্যাম্পেইন’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বালাহ বলেছেন, ‘এ ক্যাম্পেইনগুলো ফিফার ভণ্ডামি প্রকাশ করেছে।’

বিশ্ব ফুটবল সংস্থাটির পক্ষপাতিত্ব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সাবেক ফিলিস্তিন ফুটবলার বলেছেন, ‘ফিফা তড়িঘড়ি করে রাশিয়াকে বহিষ্কার করল। কিন্তু (ইসরায়েলের বেলায়) চুপ কেন?’ ইসরায়েলের এ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ক্রীড়াঙ্গনের সবার সমর্থন চান বালাহ, ‘আমি আশা করছি, এ গণহত্যা চলাকালে সব খেলোয়াড় ও (ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট) কর্মকর্তারা আমাদের সমর্থন করবেন।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close