খেলা প্রতিবেদক

  ২৯ আগস্ট, ২০১৬

সোনালি অতীত

‘বাংলার ম্যারাডোনা’ ওয়ালি সাব্বির

ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখন উল্লেখ করার মতো শক্তি। আমাদের অতীত ক্রীড়াঙ্গনও গৌরবের। এখানে অনেক প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদ এসেছেন যারা নিরলস শ্রম, অধ্যবসয় এবং মেধা দিয়ে নিজেরা হয়েছেন আলোকিত, বিশ্বের দরবারে দেশকে করেছেন সম্মানিত। নতুন প্রজন্মের অনেকেরই হয়তো এটা জানা নেই। আবার বিস্মৃত হয়েছেন কেউবা। তাদের জন্যই দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের বিশেষ ধারাবাহিক আয়োজন ‘সোনালি অতীত’। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের গ্রেটদের আরেকবার পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্র্রয়াস আমাদের। আজকের তারকা সাবেক ফুটবলার ওয়ালি সাব্বির-

১৯৮০-১৯৯০ সাল। এ সময়টা ফুটবলের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় এক সময়কাল। কারণ এ সময়ে বিশ্ব ফুটবলের মাঠে খেলছিলেন বিশ্বজয়ী এক তারকা। ডিয়াগো আরামান্দো ম্যারাডোনা যার নাম। যিনি না এলে ফুটবল বঞ্চিত থেকে যেত তার প্রকৃত সৌন্দর্য থেকে। অনেক গল্প থেকে যেত অলিখিত। কাকতালীয়ভাবে সেই সময়টাকেই আবার বলা হয় বাংলাদেশের ফুটবলের স্বর্ণযুগ। একঝাঁক প্রতিভাবান ফুটবলার বাংলাদেশের ফুটবলের ভবিষ্যৎকে পথ দেখাতে শুরু করেছিল। কাজী সালাউদ্দিন, শেখ মোহাম্মদ আসলাম, কায়সার হামিদসহ আরো ছিলেন সেই দলের সারথী। তবে একজন ছিলেন ফুটবলের বিস্ময়কর জাদুতে যিনি হয়ে উঠেছিলেন ‘বাংলার ম্যারাডোনা’। যার আসল নাম সৈয়দ রুম্মান বিন ওয়ালি সাব্বির। যাকে ফুটবলপ্রেমীরা আদর করে নাম দিয়েছিল ‘বাংলার ম্যারাডোনা’। ছোটখাটো গড়নের এই খেলোয়াড়ও দেখতে অনেকটা ছিলেন ম্যারাডোনার মতো। ড্রিবলিংয়ে ছিলেন অসাধারণ। বলের ওপর দখল, ডজিং, পাসিং সবই ছিল দুর্দান্ত। উইথ দ্য বল অসম্ভব স্পিডি ছিলেন সাব্বির। প্লে-মেকার হিসেবে অসংখ্য গোলের উৎস তৈরি করে দিতেন তিনি। সন্দেহাতীতভাবেই বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের সেরা ফরোয়ার্ডের নাম ওয়ালি সাব্বির।

আক্রমণভাগের ত্রাস ছড়ানো এই দুর্ধর্ষ ফুটবলারের জন্ম ১৯৬৮ সালে। মূলত ১৯৮২ সালে পাইওনিয়ার ফুটবল লিগে পাড়ার ক্লাব সোনালি স্পোর্টিং দিয়ে শুরু হয় তার বর্ণাঢ্য ফুটবল ক্যারিয়ার। ১৯৮৫ সালে প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে ধানমন্ডি ক্লাব দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৭ সালে সাব্বির যোগ দেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে। সে সময় দুরন্ত ফর্মে থাকা মনুকে সরিয়ে জায়গা করে নেন প্রথম একাদশে। ফেডারেশন কাপ ফুটবলে ৪টি গোল দিয়ে তিনি বিআরটিসির রুমির সঙ্গে যৌথভাবে সর্বাধিক গোলদাতা হন। সেই থেকে যে শুরু আর কখনো মোহামেডান ছেড়ে যাননি। সাব্বিরের পায়ে ভর দিয়ে সে সময় মোহামেডান চারবার (১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯৩ ও ১৯৯৬) লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়। ফেডারেশন কাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয় তিনবার (১৯৮৭, ১৯৮৯ ও ১৯৯৫)। ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে মোহামেডানের নেতৃত্ব দেন সাব্বির।

১৯৯৭ সাল পর্যন্ত টানা ১১ বছর খেলেছেন মোহামেডানের হয়ে। সাক্ষী হয়েছেন মোহামেডানের অনেক উত্থান-পতনের। ১৯৯৪ সালে এক ম্যাচে গুরুতর আহত হন সাব্বির। সে সময়েই মূলত তিনি ফর্ম হারান। এরপর ১৯৯৭ সালে মহানগরী কাপে রহমতগঞ্জের হয়ে শেষ ম্যাচ খেললেও ১৯৯৮ সালে ১২ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার সাব্বিরের যাত্রা শুরু হয় যুব ফুটবল দিয়ে। ১৯৮৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৬ দ্বিতীয় এশিয়ান যুব ফুটবলের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে তিনি অংশ নেন।

এ রাউন্ডের খেলায় গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। কাতারে অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত পর্যায়ের খেলায় তিনি দেশের নেতৃত্ব দেন। ১৯৮৭ সালে কলকাতায় তৃতীয় সাফ গেমস, ১৯৮৮ সালে ঢাকায় ২৬তম এশিয়ান যুব ফুটবলের কোয়ালিফাইং রাউন্ড, ১৯৮৯ সালে ঢাকায় ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ ফুটবলে বাংলাদেশ লাল দলের হয়ে খেলেন। বাংলাদেশ সবুজ দলের সঙ্গে খেলায় তার গোলে জয়ী হয় লাল দল। এ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ লাল দল চ্যাম্পিয়ন হয়। সাব্বিরকে ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি সেরা ফুটবলার নির্বাচিত করে। ১৯৯১ সালে পান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার। তার সম্পর্কে বর্ষীয়ান ক্রীড়া সাংবাদিক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান এক জায়গায় বলেছিলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে ‘১০’ নম্বর জার্সিধারীদের মধ্যে সেরা হলেন সাব্বির।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist