কালিমুল্লাহ ইব্রাহীম
হেমন্তের নবান্ন উৎসব
ষড়ঋতুর চতুর্থ ঋতু হেমন্ত। হেমন্ত এলে বাঙালির ঘরে ঘরে শুরু হয় খুশির আমেজ। সকালের হিমশীতল বাতাস, মেঘমালার ন্যায় কুহেলি জানিয়ে দেয় শীতের আগমনী বার্তা। কৃষকের হৃদয় জুড়ে শুরু হয় উল্লাস। কৃষক যেন প্রাণ ফিরে পায়। ধান কাটার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে নিজেদের ঝংধরা কাস্তেগুলো চকচকে ধারালো করার জন্য নিয়ে যায় কর্মকারের কাছে। অপেক্ষার অবসান ঘটে শুরু ধান কাটার পালা। কৃষক গানের সুর তুলে সোনারঙা ধান কাটায় অতিবাহিত করে দিনের সবটুকু সময়। তবুও যেন তাদের ক্লান্তি নেই। খুশি মনে সারা দিন রোদে পুড়ে ধান কাটে। ধান কাটা শেষে চলে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বাংলার বুক জুড়ে শুরু নবান্ন উৎসবের আমেজ।
নবান্ন শব্দের অর্থ ‘নতুন অন্ন’ বা ‘নব অন্ন’। নবান্ন উৎসব হলো নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। সাধারণত বাংলা অগ্রহায়ণ মাসে অর্থাৎ হেমন্তকালে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। কোথাও কোথাও মাঘ মাসেও নবান্ন উদযাপনের প্রথা রয়েছে। ১৯৯৮ সাল থেকে ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে নবান্ন উৎসব উদযাপন শুরু হয়। জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদ প্রতি বছর পহেলা অগ্রহায়ণ তারিখে নবান্ন উৎসব উদ?যাপন করে। প্রতি বছর ৩ দিনব্যাপী নবান্ন উৎসব আয়োজন করে রমনা বটমূলে। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক সংগঠন শোবিজ এন্টারটেইনমেন্ট রাজধানীর ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবরে বিগত ১২ বছর ধরে ৩ দিনব্যাপী নবান্ন উৎসব ও পিঠামেলার আয়োজন করে আসছে। এ উৎসবে ৩৩টি স্টলে ২০০ ধরনের পিঠা থাকে। এ ছাড়া উৎসব প্রাঙ্গণের উন্মুক্ত মঞ্চে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আয়োজন করা হয় নবান্নের নাচ, গান, সাপখেলা, বানরখেলা, লাঠিখেলা, নাগরদোলা, পুতুলনাচ, পালকি, পথনাটকসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এই নবান্ন উৎসবের সমাপনী দিনে সেরা পিঠাশিল্পীদের পুরস্কার দেওয়া হয়। কালের বিবর্তনে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এই নবান্ন উৎসব বিলুপ্তপ্রায়। তবে এখনো বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু কিছু এলাকায় নবান্ন উৎসব অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। তাই বলা যায়, নবান্ন বাংলার অন্যতম একটি জনপ্রিয় উৎসব।
"