নিজস্ব প্রতিবেদক
মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে অস্থির বাজার
বেশিরভাগ সবজি ১০০ টাকার ওপরে, কমছে ডিমের দাম
বাজারে উঠতে শুরু করেছে হরেকরকম শীতের শাকসবজি। তবু কমছে না দাম। এদিকে আলুর দাম বাড়লেও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। অবশ্য হাতেগোনা দুয়েকটি সবজির দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা কমলেও বেশিরভাগই বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুম শেষ দিকে হওয়ায় এবং সাম্প্রতিক বন্যা ও বৃষ্টির প্রভাবে বাড়ছে শাকসবজির দাম। রাজধানীর কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন, হাতেগোনা দুয়েকটি সবজি ছাড়া কোনোটিই নেই ৮০ টাকার নিচে; বেশিরভাগেরই দাম ১০০ টাকা বা তার ওপরে। এমন ঊর্ধ্বমুখী দামে নাজেহাল সাধারণ ভোক্তারা। তারা জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা। এতে বাজার অস্থির করে ভোক্তার পকেট কাটার সুযোগ পাচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। কত টাকায় ব্যাগভর্তি বাজার হবে, প্রশ্ন তাদের। রামপুরা বাজারে সুজন নামে এক ক্রেতা বলেন, একের পর পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। আজ ডিমের দাম বাড়ে তো কাল সবজির। এখন আবার বাড়ছে শাকের দাম। বাজারে কোনো শৃঙ্খলা নেই। যে যার মতো পারছে লুটে নিচ্ছে।
তবে বাজারে ফার্মের ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। বিশেষ করে গত সপ্তাহে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৮০ টাকা পর্যন্ত উঠলেও চলতি সপ্তাহে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। রাজধানীর কারওয়ানবজারে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৫০ টাকায় নেমেছে। যদিও পাড়া-মহল্লায় খুচরা বাজারে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা ডজনে বিক্রি হচ্ছে ডিম। কল্যাণপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ১৫০ টাকায় ফার্মের এক ডজন ডিম কিনেছি। গত সপ্তাহের শুরুতে ডজন ১৮০ টাকায় কিনেছিলাম। সরকার শুধু দাম বেঁধে দিলে হবে না। নির্ধারিত দরে বিক্রি হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারী থাকতে হবে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর নয়াবাজার, কারওয়ানবাজার ও নিউমার্কেট কাঁচাবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে পাওয়া গেছে এ তথ্য।
বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ১০০-১২০ টাকা, করলা ৮০-১০০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৮০-১০০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, মুলা ৬০-৮০ টাকা, লতি ১০০ টাকা, কহি ১০০ টাকা, ধুন্দুল ৯০-১০০ টাকা ও পটোল ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ৩০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা, গাজর ১৩০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, টমেটো ১৮০ টাকা, শিম ২৫০-২৮০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি ধনেপাতা ১২০-১৮০ টাকা ও চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। আর প্রতি পিস ফুলকপি ৭০-৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৮০-১০০ টাকা এবং লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ১০০-১৩০ টাকা।
দামে পিছিয়ে নেই শাকের বাজারও। লালশাকের আঁটি ৩০ টাকা, পাটশাক ২০ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ২৫ টাকা, ডাঁটাশাক ২৫ টাকা, কলমিশাক ১৫-২০ টাকা ও পালংশাক ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে কাঁচামরিচেরও। গত সপ্তাহে কমতির দিকে থাকা কাঁচামরিচ চলতি সপ্তাহে দাম বেড়ে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৫০ টাকা পর্যন্ত। আর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২৬০-২৮০ টাকা দরে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে কমেছে মরিচের সরবরাহ। এতে চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় দাম ঊর্ধ্বমুখী।
এদিকে বাজারে মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৭০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, বাগাড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা ও নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।
বাজারে বেড়ে গেছে আদা-রসুনের দামও। প্রতি কেজিতে ৫-১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি দেশি রসুন ২৪০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২৬০ টাকা ও মানভেদে আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৮০ টাকায়। সুখবর নেই আলু-পেঁয়াজের বাজারেও। কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। আর পেঁয়াজ নতুন করে না বাড়লেও বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। খুচরায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। এছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজ যথাক্রমে ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১২-১১৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯২-৯৬ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষের দিকে। তাই বাজার চড়েছে। অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি সময়ে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করবে; তখন দাম কমে আসবে। নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছামতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান। আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।
এদিকে গত ৭ অক্টোবর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার ও সরবরাহ পরিস্থিতি তদারকি এবং পর্যালোচনার জন্য জেলা পর্যায়ে ১০ সদস্যের বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে ডিমসহ নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর সুফলও দেখা যাচ্ছে বাজারে। কমতে শুরু করেছে ডিমের দাম। তবে ডিমসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কমলেও এবার অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে মুরগির দাম। সোনালি মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
এনবিআর জানিয়েছে, ডিম আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আমদানি পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৩ টাকা ৮০ পয়সা কমবে। তাতে বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়বে। ভোক্তা পর্যায়ে দাম কমবে। পাশাপাশি ডিম ব্যবহারকারী বিভিন্ন শিল্প; যেমন কনফেকশনারি, বেকারি, ডিমনির্ভর খাদ্য উৎপাদক শিল্পের খরচ কমবে। বাজারে স্বস্তি ও ভারসাম্য ফিরবে। ডিম আমদানিতে এ অব্যাহতি সুবিধা আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
"