ইসমাঈল সিরাজী
সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে না ডিম
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকারের কঠোর হুঁশিয়ারির পর বাজারে ডিমের দাম কিছুটা কমলেও সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে না। গতকাল বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা দরে। এতে প্রতি পিসের দাম পড়ছে ১৩ টাকা ৩৫ পয়সা। অথচ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুচরা পর্যায়ে দাম বেঁধে দিয়েছিল ১১ টাকা ৮৭ পয়সা।
তেজগাঁওয়ের পাইকারি বিক্রেতারা জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে খামারিদের কাছ থেকে তারা প্রতিটি ডিম ১২ টাকা করে কিনেছেন এবং তা বিক্রি করেছেন ১২ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৩০ পয়সা দরে। এতে গতকাল বুধবার খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩ টাকা বা তার চেয়ে সামান্য বেশি দরে। প্রতি ডজন ডিমের দাম পড়ছে ১৫৬ থেকে ১৬০ টাকা। অর্থাৎ মঙ্গলবারের তুলনায় গতকাল বুধবার ডিমের দাম ডজনপ্রতি ২০ টাকার মতো কমেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে ১৬০ টাকা দরে ডিম বিক্রি হয়েছে। পাড়া-মহল্লায় এর চেয়ে বেশি দামেও ডিম বিক্রি হচ্ছে। মঙ্গলবারও বাজারে এক ডজন ডিম কিনতে ১৮০-১৯০ টাকা লেগেছে। যদিও সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, বুধবার বাজারে ১ ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৬২-১৭৪ টাকা দরে (হালি ৫৪-৫৮ টাকা)।
সম্প্রতি কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ডিমের ‘যৌক্তিক দাম’ নির্ধারণ করে দেয়। নির্ধারিত দাম অনুসারে, প্রতিটি ডিমের দাম উৎপাদন পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ০১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা (ডজন ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা) হওয়ার কথা।
রাজধানীতে ডিমের অন্যতম বড় আড়ত তেজগাঁও। এই বাজারে গত রবি ও সোমবার রাতে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দরে তাদের ডিম ক্রয় ও বিক্রয় করতে হচ্ছে। এর ফলে তারা সরকারি সংস্থার জরিমানা ও শাস্তির মুখে পড়ছেন।
পরে গত মঙ্গলবার ডিমের উৎপাদক, পাইকারি বিক্রেতা ও সরবরাহে যুক্ত অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এতে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী দুই সপ্তাহ পরীক্ষামূলকভাবে ডিম উৎপাদক বড় কোম্পানি ও ছোট খামারিরা সরকার নির্ধারিত দামেই সরাসরি পাইকারি আড়তে ডিম পাঠাবে। এর মধ্যে মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না। এর মাধ্যমে পাইকারি বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত দামে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ডিম বিক্রি করবেন।
বিক্রেতাদের অভিযোগ, বড় বড় কোম্পানিগুলোর কারণেই ডিমের বাজারে এ নৈরাজ্য। তাই তারা কঠোর নজরদারির তাগিদ দিয়েছেন। পাইকারদের দাবি, পিস প্রতি প্রায় দেড় টাকা বেশি দরে কেনার কারণে খুচরাতেও দাম পড়ছে বেশি। উৎপাদক পর্যায়ে বড় বড় কোম্পানিগুলোর কারণেই ডিমের বাজারে এই নৈরাজ্য দেখা দিয়েছে বলে দাবি খুচরা ব্যবসায়ীদের।
উল্টো ক্রেতারা বলছেন, শুধু দাম বেঁধে দিলে হবে না। সরকার নির্ধারিত দরে বিক্রি হচ্ছে কি না সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি থাকতে হবে।
ব্যবসায়ীরা গত ২ দিন রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় ডিমের আড়ত বন্ধ রাখে। গতরাত থেকে আবার সচল হলে জমে ওঠে তেজগাঁওয়ের আড়ত। ফলে রাজধানীতে ডিমের জোগান স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
দোকানিদের দাবি, সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে খুচরা পর্যায়ে দাম কমে আসতে শুরু করেছে। তাদের মতে মধ্যস্বত্বভোগীদের তদারকির আওতায় আনতে পারলে বাজার স্থিতিশীল হয়ে আসবে। খামার পর্যায়ে প্রতি পিস ডিম উত্তরের জেলাগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকা ২৫ পয়সা দরে।
"