বদরুল আলম মজুমদার

  ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

তাপপ্রবাহ

রাতের গরম কাড়ছে ঘুম

সূর্যের খরতাপে ক্রংকিটের দেয়াল এবং ছাদের গরমে নগরবাসীর রাতের আরাম নষ্ট হচ্ছে। ঢাকায় চলমান তাপপ্রবাহের প্রভাবে মানুষের জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সারা দিনের খরতাপের মধ্য দিয়ে কর্মব্যস্ত মানুষ রাতের বেলায় একটু স্বস্তি খোঁজে। কিন্তু প্রকৃতির প্রতিশোধের খরতাপে দিনের কষ্ট রাতের বেলাতেও কমছে না। বরং সারা দিনের তাপপ্রবাহে ক্রংক্রিটের দেয়াল এবং ছাদে ধারণ করা তাপ রাতের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে। রাতের হিটে বাসাবাড়ির বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসে তীব্র গরম অনুভূত হওয়ায় স্বস্তি হারিয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। ফলে নির্ঘুম রাত্রী যাপনে মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। দিনে ও রাতের এই হিট প্রভাবের কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলছে রাজধানীবাসীর।

রাজধানীর কত শতাংশ মানুষ বাসাবাড়িতে এয়ার কুলার ব্যবহার করছেন তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। নগরবিদরা ধারণা করছেন, প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ বাসাবাড়িতে এয়ারকুলার ব্যবহার করছে। অন্য দিকে শতভাগ নগরবাসী বৈদ্যুতিক পাখার ওপর নির্ভরশীল। চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে এসব বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ব্যবহার অনেক গুণ বেড়েছে। তাপপ্রবাহে বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসও মানুষকে স্বস্তি দিতে পারছে না তাপ শীতল করা গাছের অভাবে। গাছ কমে যাওয়ায় বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ এত বেশি হচ্ছে যা রাতেও কমছে না। প্রকৃতি শীতল করা গাছগাছালি কমে যাওয়ার কারণে মূলত এটা হয়েছে।

গত এক দশকে নগরায়ণ বৃদ্ধিতে গাছগাছালি উজাড় হয়েছে। যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে শুরু করেছে মানুষের ওপর। অন্যদিকে রাস্তাঘাটে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এয়ারকুলারের ব্যবহারও বহুগুণ বাড়ছে, তাই রাতে সূর্যের তাপ না থাকলেও মনুষ্য সৃষ্টি তাপের প্রভাব বাড়ছে।

ঢাকাকে পরিবেশবান্ধব নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পরিবেশবাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে গাছ লাগানোর কথা বলা হচ্ছে। তবে গাছ লাগানোর বদলে নগরীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সবুজ প্রকৃতি ধ্বংস করে নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন। তাই প্রয়োজনীয় গাছ লাগানোর জায়গার সংকটও প্রকট।

তবে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে নগরবাসীকে বাঁচাতে নতুন করে গাছ লাগানোর আন্দোলন শুরু করার তাগিদ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও পাঁচ লাখ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি সামাজিক সংগঠনও গাছ লাগানোর কথা বলছে। তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, ঢাকায় গাছ লাগানোর জায়গাই তো নেই। খেলার মাঠ, পার্কের বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। সড়কের ফুটপাত বা ফাঁকা জায়গাও অবশিষ্ট নেই। সবই কংক্রিটের আস্তরণে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, একসময়ের সবুজে ঘেরা ঢাকা এখন কংক্রিটের শহরে পরিণত হয়েছে। উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ধ্বংস করে নির্মাণ করা হয়েছে বড় বড় দালানকোঠা। বিভিন্ন সড়কে নগরীর সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলা বড় বড় গাছও কেটে ফেলা হয়েছে। খেলার মাঠ দখল করে, গাছ কেটে করা হচ্ছে নগর উন্নয়ন। এসব কর্মকাণ্ডে সবুজ প্রকৃতি ধ্বংস ও হ্রাস পাওয়ায় অসহনীয়ভাবে তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে দিনে ও রাতে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, বিপদে পড়লেই বাহবা কুড়ানোর জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা অর্গানাইজেশন বের হয়। এর আগে অনেক সংগঠন গাছ লাগিয়েছে সেই গাছগুলো কোথায়? ঢাকা শহরে নতুন করে গাছ লাগানোর জায়গা কোথায়? পার্কগুলো কিংবা খোলা জায়গায় যে গাছগুলো ছিল সেগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। আপনি আবার নতুন করে বলেন যে গাছ লাগানোর কথা। খেলার মাঠ দখল করা হয়েছে। সেগুলো তো দখলমুক্ত করা হয়নি। যেখানে সেখানে ফাঁকা জায়গা উন্নয়নের নামে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ফুটপাতে কংক্রিট বসানো হয়েছে। তাহলে নতুন করে গাছ কোথায় লাগাবে। মূলত গাছ উজাড় হওয়ার কারণে তাপের প্রভাব বাড়ছে।

আলমগীর কবির আরো বলেন, ঢাকা শহরে গাছপালা রয়েছে ২৫ ভাগের মাত্র ৯ ভাগ। যা খুবই সামান্য। এই ৯ ভাগ বনায়ন দিয়ে ঢাকার নির্মল বায়ু কিংবা শহরের তাপমাত্রা অনুকূলে আনা সম্ভব নয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় ঢাকার খেলার মাঠগুলোয় গাছ লাগানোর কথা বলা হলেও সেগুলোর ৭০ ভাগই দখলদারদের কবলে। দখলমুক্ত করতে অনেকটাই ব্যর্থ সিটি করপোরেশন।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম শেখ বলেন, ‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’, এমন বাণী হারিয়ে গেছে। পরিবর্তে ‘গাছ কাটুন, পরিবেশ ধ্বংস করুন’ বাণী প্রচলিত হচ্ছে। একটা সময় ঢাকার নির্মল বায়ুতে নগরবাসী বুকভরে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে। কিন্তু এখন বাতাস এত দূষিত যে, বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা প্রথম স্থান পায়।

উত্তরা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী জুবায়ের বলেন, হাতিরঝিল, বাহাদুর শাহ পার্কের মতো জায়গায় বেশি বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ লাগানোর বদলে কাটা হয়। এটা ঠিক না। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, গরম অনুভবের তীব্রতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। অর্থাৎ তাপমাত্রা বৃদ্ধির চেয়ে অনুভবের মাত্রা বেড়েছে। এতে মানুষের কষ্ট বেড়েছে। রাতে ও দিনে। নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ঢাকায় বড় বড় গাছ ছিল সেগুলো কেটে ঘাস লাগানো হচ্ছে। কেন সেখানকার গাছগুলো কাটতে হবে? গাছ রেখেও যে কাজ করা যায় তা আমরা বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়েছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close