নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঢাবি প্রতিনিধি

  ০৩ এপ্রিল, ২০২৪

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফেরাতে ৪ কর্মসূচি ছাত্রলীগের

* নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতির প্রতিশ্রুতি * শিক্ষকদের পাশে চাইছেন শিক্ষার্থীরা * হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত মানতেই হবে : ভিসি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনতে চার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগ। কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বুয়েট শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বির আবাসিক হলে সিট পুনর্বহালের দাবিতে বুয়েট শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এ ঘোষণা দেন।

ছাত্রলীগের চার কর্মসূচি হচ্ছে ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বির আবাসিক হল ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বুয়েটের শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি। আধুনিক, স্মার্ট, পলিসিনির্ভর নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠার কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে বুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতামত আহ্বান ও আলোচনা। সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী-জঙ্গিবাদের কালোছায়া থেকে বুয়েটকে মুক্ত করতে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজন এবং বুয়েটে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবিতে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা। তবে কবে নাগাদ তারা এসব কর্মসূচি শুরু করবেন, তা নির্দিষ্ট করে বলেননি ছাত্রলীগ সভাপতি। সাদ্দাম হোসেন বলেন, বুয়েটে এমন ছাত্ররাজনীতি পরিচালিত হবে যা শহীদ শাফী ইমাম রুমীর মতো বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ ত্যাগ করে দেশের জন্য হাসিমুখে জীবন উৎসর্গ করতে শেখাবে কিংবা উচ্চশিক্ষা শেষ করে দেশে ফিরে এসে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগে ঝাঁপিয়ে পড়তে নৈতিকভাবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করবে।

নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতির প্রতিশ্রুতি : ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ শিক্ষায়তনে ‘স্মার্ট ও নিয়মতান্ত্রিক’ ছাত্ররাজনীতি চালু করা হবে। আমরা বুয়েট শিক্ষার্থীদের মতামত নেব। তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে একটি নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতির প্রস্তাবনা উল্লেখ করে আমরা আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমে যাব। প্রথাগত ছাত্ররাজনীতির মতো কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া নেতৃত্বের মাধ্যমে বুয়েট শিক্ষার্থীরা পরিচালিত হবে না। বুয়েটের শিক্ষার্থীরা নিজেরাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করবে। যে নেতৃত্ব হবে আদর্শিক, দেশাত্মবোধসম্পন্ন এবং যে নেতৃত্ব বুয়েটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকেই তৈরি করবে বিশ্বসেরা উদ্ভাবক, উদ্যোক্তা।

হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত মানতেই হবে - ভিসি : বুয়েটের ভিসি সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, আদালত যেটা বলবেন, আমাকে সেটা মানতে হবে। আদালতের আদেশ শিরোধার্য। আমরা আদালত অবমাননা করতে পারব না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনীতির পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রশাসন সবাই মিলে একটা রূপান্তর করতে হবে। কীভাবে সেটা করা যায়, তা আলোচনার মাধ্যমে বের করতে হবে। বর্তমানে ছাত্রসংসদ কার্যক্রম বন্ধ আছে। সব পক্ষের মতামত নিয়েই একটা কিছু করতে হবে। একা কিছু করলে তা বাস্তবায়ন করা যাবে না। সেটা সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হতে হবে, অর্ডিন্যান্সে যুক্ত হতে হবে। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের অনুমোদন নিতে হবে। তা না হলে এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্সে ঢুকবে না। আর বিশ্ববিদ্যালয় তার নিয়মে চলে।

কেন ছাত্ররাজনীতির বিরোধিতা : বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটে নিষিদ্ধ হয় ছাত্ররাজনীতি। এরপর থেকে গত সাড়ে চার বছর প্রকৌশল শিক্ষার এ বিদ্যাপীঠে ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধই ছিল। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ একদল নেতাকর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে নতুন করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তাই বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফিরে আসুক- এমনটি অনেক শিক্ষার্থীই চাইছেন না। শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমরা শিক্ষার্থীরা আমাদের ভিসি স্যারকে এ আরজি জানাচ্ছি, তিনি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে নিয়ে আপামর বুয়েট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের যে আকাঙ্ক্ষা, তা সব আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূরণ করেন।

তবে আশ্বস্ত করে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম বলছেন, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি পুনরায় শুরু হবে। কিন্তু সেটি কোন ছাত্ররাজনীতি, তা নিয়ে ভাবতে হবে। এ রাজনীতি অবশ্যই ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ, সেশনজট, র‌্যাগিং-বুলিং, দখল-বাণিজ্য, হত্যা-সন্ত্রাসের ছাত্ররাজনীতি নয়। এ ছাত্ররাজনীতি হবে আধুনিক, যুগোপযোগী, বৈচিত্র্যময়-সৃষ্টিশীল, জ্ঞান-যুক্তি-তথ্য-তত্ত্বনির্ভর। বুয়েট হবে ছাত্ররাজনীতির ‘মডেল’। দেশরত্ন শেখ হাসিনার পরিকল্পিত আগামী দিনের উন্নত, স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নত ও স্মার্ট ছাত্ররাজনীতি উপহার দেওয়ার জন্য মডেল প্ল্যাটফরম হিসেবে ছাত্রলীগ বুয়েটকে গ্রহণ করবে। এ ঐতিহাসিক যাত্রায় বুয়েটের সব শিক্ষার্থীকে সহযোগিতার সংকল্প নিয়ে পাশে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

এদিকে মঙ্গলবার ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল সুনসান নীরবতা, শিক্ষার্থীরা ছিলেন না। শুধু দাপ্তরিক কাজকর্ম চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নিরাপত্তা প্রহরী বলেন, ‘সকাল থেকে ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থী আসেননি। গত চার দিন ধরে এ অবস্থা।’ পরে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার তাদের রুটিন অনুযায়ী কোনো ক্লাস বা পরীক্ষা নেই। তাই তারা ক্যাম্পাসে আসেননি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, আজ বুধবার একটি পরীক্ষা আছে। সেই পরীক্ষা তারা অংশ নেবেন কি না, সেটি তারা নিশ্চিত নন। ৪ এপ্রিল থেকে শিক্ষার্থীরা ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাবে। যে পরীক্ষাগুলো বাকি রয়েছে, সেগুলো হবে ঈদের পরে। জানতে চাইলে বুয়েটের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. ইমামুল হাসান ভূঁইয়া বলেন, শিডিউল অনুযায়ী বুধবার (আজ) একটা পরীক্ষা আছে। এরপর ঈদের পর পরীক্ষা। আন্দোলনের কারণে গত ৩০ ও ৩১ মার্চ দুটি পরীক্ষায় অংশ নেননি শিক্ষার্থীরা। এ পরীক্ষা দুটি কবে হবে- এমন প্রশ্নে তিনি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, এ বিষয়ে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল যেভাবে নির্দেশনা দেয়, সেভাবে আমরা রুটিন রেডি করব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close