নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০১ এপ্রিল, ২০২৪

দু’দফা কমল জ্বালানি তেলের দাম, বাসভাড়া কমছে না

ডিজেল-কেরোসিনের দাম কমেছে লিটারে ২ টাকা ২৫ পয়সা

বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের বাজারে আবারো কমেছে ডিজেল-কেরোসিনের মতো জ্বালানি তেলের দাম। এপ্রিলের জন্য ডিজেলের বিদ্যমান বিক্রয়মূল্য ১০৮.২৫ টাকা লিটার থেকে ২.২৫ টাকা কমিয়ে ১০৬.০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া কেরোসিন ১০৮.২৫ টাকা থেকে ২.২৫ টাকা হ্রাস করে ১০৬.০০ টাকা, অকটেন ১২৬.০০ টাকা এবং পেট্রল ১২২.০০ টাকা লিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল রবিবার বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতিতে দেশে এই প্রথমবারের মতো জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে আরেক দফা দাম কমানো হয়। সে সময় প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১০৯ থেকে কমিয়ে ১০৮ টাকা ২৫ পয়সা করা হয়েছে। প্রতি লিটার অকটেনের দাম ১৩০ থেকে কমিয়ে ১২৬ টাকা করা হয়। পেট্রলের দাম প্রতি লিটার ১২৫ থেকে কমিয়ে ১২২ টাকা করা হয়েছে। সর্বনিম্ন দশমিক ৬৯ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ দাম কমানো হয়।

এদিকে, জ্বালানি তেলের দাম এক মাসেই দুদফা কমলেও গণপরিবহনের ভাড়া কমোনোর বিষয়ে নেই কোনো সুখবর। যদিও গত ৩ মার্চ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছিলেন, জ্বালানির দাম কমলে গণপরিবহনের ভাড়াও কমবে। সেদিন গণপরিবহনের ভাড়া কমবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, আমার মনে হয় কমে যাওয়া উচিত। এখানে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, আমরা তাদের সঙ্গে বসার পরিকল্পনা নিয়েছি। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে, দেশে কমানো হয় না- এমন অভিযোগ থেকে বেরিয়ে আসছি আমরা।

এ বিষয়ে রাজধানীর বনশ্রীর বাসিন্দা ফজলে চৌধুরী সানি বলেন, বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ মার্চ থেকে চালু হয়েছে। দুদফা জ্বালানি তেলের দাম কমলেও পরিবহনের ভাড়া তো কমছে না। অথচ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার খবর আসতেই বাসভাড়া বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় চারদিকে। এখন তো কোনো টু-টা শব্দ নেই।

খোঁজ নিয়ে দেখা গছে, শুধু পরিবহনেই নয়, অন্য পরিবহনে ভাড়া কমার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। জ্বালানি তেলের দাম কমায় নিত্যপণ্যের দাম কমেনি বলে সাধারণ ভোক্তারা জানিয়েছেন।

জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের সূত্র নির্ধারণ করে নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয় গত ২৯ ফেব্রুয়ারি। এতে বলা হয়, দেশে ব্যবহৃত অকটেন ও পেট্রল ব্যক্তিগত যানবাহনে অধিক পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। তাই বাস্তবতার নিরিখে বিলাস দ্রব্য (লাক্সারি আইটেম) হিসেবে সব সময় ডিজেলের চেয়ে অকটেন ও পেট্রলের দাম বেশি রাখা হয়।

অকটেন ও পেট্রল বিক্রি করে সব সময়ই মুনাফা করে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিপিসি। মূলত ডিজেলের ওপর বিপিসির লাভণ্ডলোকসান নির্ভর করে। দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ৭৫ শতাংশই ডিজেল।

জ্বালানি তেলের মধ্যে উড়োজাহাজে ব্যবহৃত জেট ফুয়েল ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করে বিপিসি। আর ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল ও অকটেনের দাম নির্ধারণ করে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ।

ভর্তুকির চাপ এড়াতে ২০২২ সালের আগস্টে গড়ে ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল জ্বালানি তেলের দাম। এরপর ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২৩ দিনের মাথায় ওই মাসের শেষদিকে সবগুলোর ক্ষেত্রেই প্রতি লিটারে ৫ টাকা করে কমানো হয় দাম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয়ের উদ্যোগে ভোক্তা পর্যায়ে তেমন কোনো সুফল মিলছে না। তেলের দাম কমলেও পরিবহন ভাড়া কমে না কোথাও। কিন্তু দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে ভাড়া বেড়ে যায়। এ অবস্থায় তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে বিকল্প উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থাৎ যখন বিশ্ববাজারে দাম কম এবং দেশে বেশি থাকে, তখন বাড়তি মুনাফা আলাদা তহবিলে রাখতে হবে। আবার যখন বিশ্ববাজারে দাম বাড়বে, তখন দেশে দাম না বাড়িয়ে ওই তহবিলের অর্থ দিয়ে সমন্বয় করতে হবে।

জ্বালানি তেল সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে পরিবহন খাতে। কিন্তু দাম কমানোর ফলে পরিবহন মালিকরা গণপরিবহনের ভাড়া কমানোর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে যাদের ব্যক্তিগত পরিবহন আছে, তাদের খরচ সামান্য কিছু কমেছে। ব্যক্তিগত অনেক মালিকদের বলতে শোনা গেছে, দাম কমায় সামান্য কয়েক ফোঁটা তেল বেশি পাওয়া যায়। এতে তেমন লাভ হয়নি তাদের।

জ্বালানি তেলের দাম কমায় সাধারণ ভোক্তারা কী সুফল পাচ্ছেন, জানতে চাইলে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, এতে সাধারণ মানুষ কোনো সুফল পায় না। জ্বালানির বিষয়ে ভোক্তার মৌলিক বিষয় হলো সঠিক দাম নির্ধারণ, সঠিক মানের এই পণ্যটি পাওয়া। তা রাষ্ট্র সুরক্ষা করতে পারেনি। দাম নির্ধারণ করার কথা ছিল বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি)। জ্বালানি বিষয়ে অধিকার খর্ব করা হয়েছে। আইন রহিত করার ফলে আমরা কোনো সুফল পাচ্ছি না। জ্বালানির সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close