বদরুল আলম মজুমদার
উপজেলা নির্বাচন
বিএনপির ভেতরে চাপ, কেন্দ্র অটল
বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে আগের সিদ্ধান্তে বারবারই অটল থাকার কথা বলছে বিএনপি। সম্প্রতি রাজধানীর নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এমন অবস্থানের কথা জানালেও বেশিরভাগ স্থানীয় নেতা এবার উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে চান। ফলে স্থানীয় এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে দলের ভেতরে এক ধরনের চাপ আছে।
স্থানীয় নেতারা বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে গেলে বিএনপির রাজনীতিতে চাঙাভাব ফিরে আসবে। এর মাধ্যমে বিএনপি স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরতে পারবে। নির্বাচনী ব্যস্ততার মধ্যে থাকলে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে যে হতাশা তৈরি হয়েছে, সেটি দূর হবে।
অবশ্য দলের কেউ কেউ কোনো কৌশলেই নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে নন। তারা বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা ঠিক হবে না। এতে বিএনপির নৈতিক পরাজয় ঘটবে। নেতাকর্মীদের মনোবল আরো ভেঙে যাবে। তাছাড়া নির্বাচনে গিয়েও কোনো লাভ হবে না। সংসদ নির্বাচনের আদলেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন করবে সরকার। উল্টো নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে হামলা-মামলা বাড়বে।
অন্যদিকে বিএনপির যে সব নেতা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হন, দল ক্ষমতায় গেলে মন্ত্রী হন অথবা স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যাদের অবস্থানের সঙ্গে যায় না, তাদের অবস্থান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে। তারা বলেছেন, ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে না যাওয়া-ই উচিত বিএনপির। তবে এ ক্ষেত্রে তৃণমূলের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ভিন্ন কৌশলে নির্বাচনে যাওয়া যেতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।
এদিকে, বিএনপির অন্যতম ভোটসঙ্গী জামায়াত এবার উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারে বলে জোরালো মত আছে দলটিতে। এর আগেও এ নির্বাচনে জামায়াত ভালো ফল করেছে। সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তা পেলে জামায়াত শতভাগ নির্বাচনমুখী থাকবে বলে জানা গেছে। জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির বেশির ভাগ স্থানীয় নেতারাও ভোটের মাঠ ছাড়তে নারাজ। আবার উন্মুক্ত ভোট হলে ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ রাখাও কষ্টকর। তাই দলগতভাবে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিএনপি অটল থাকলেও ভোটের মাঠ ফাঁকা যেতে দেবে না বলে জোরালো মত আছে দলে।
এ বিষয়ে দলের একজন নায়েবে আমীর এ প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার দলীয় সিদ্ধান্ত এখনো চলমান। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসার আগ পর্যন্ত আগাম কিছু বলা যাবে না।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতা নির্বাচনে আসতে চায়। ভোট কেন্দ্রিক যোগাযোগ রেখে চলা নেতারা দলীয়ভাবে উন্মুক্ত ভোটে নিজেদের পক্ষে রেজাল্ট আনতে পারবেন বলে ধারণা করছেন। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের অন্তকোলহ আছে। সে সুবাধে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ৩-১০ জন প্রার্থী মাঠে থাকতে পারে। এ অবস্থায় সরকারবিরোধী যেকোনো প্রার্থী ভোটের মাঠে ভালো ফলাফল নিয়ে আসার সম্ভাবনাও জোরালো। তাছাড়া বিএনপি স্বনামে নির্বাচনে বা পদদারি নেতারা নির্বাচন না করলেও জামায়াত এবারের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিবে বলে বিএনপির কাছে পর্যাপ্ত তথ্য আছে। জামায়াত প্রার্থীরা নির্বাচনে গেলে উল্টো স্থানীয়ভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়বে বিএনপি। তাই এ অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে হাইকমান্ড সায় দিতে পারেন বলে মনে করছেন দলের কিছুসংখ্যক নেতা।
এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান এ প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপি এ সরকারের আমলে কোনো নির্বাচনে অংশ নিবে না। সেই সিদ্ধান্ত আগে থেকেই আছে। আর সেটা এখনো বহাল আছে। উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি দলগত অংশ নিবে কি না, সেই বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আর মাঠ পর্যায়ে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে অনুমতি চাইলে দেওয়া হবে কি না- সেটা এখন আমি বলতে পারবো না। তবে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চাপ বরাবরই থাকে।
সম্প্রতি বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা বরাবরই বলেছি, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন কখনোই শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠু হবে না। সুতরাং তার অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না, সে সিদ্ধান্ত আমাদের আগেই নেওয়া আছে। বিএনপি এখনো সে সিদ্ধান্তেই অটুট রয়েছে।
"