নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ জানুয়ারি, ২০২৪

চাল ডিম মাছ মাংসের বাজারে অস্থিরতা

অভিযান চালানোর পরও চালের বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সেই সঙ্গে বেড়েছে ডিম ও মাছের দামও। হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীতে চালের বাজারে গত মঙ্গলবার থেকে অভিযান চালাচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল অভিযানের আগাম বার্তা পেয়ে দোকান বন্ধ করে চলে যান দোকানিরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মিলার পর্যায়ে চালের দাম বস্তাপ্রতি বেড়েছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আলোচনার পর তা কমানো হয় ৫০-১০০ টাকা। তবে ভোক্তা পর্যায়ে চালের দাম কমেনি। পুরোনো দামে চাল কেনা হয়েছিল। ফলে দাম কমলেও তার সঙ্গে সমন্বয় রেখে পাইকারি ব্যবসায়ীরা তা বিক্রি করতে পারছেন না। কারণ আরো কম দামে কেনা চাল তাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। ফলে বাড়তি দামেই চাল বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।

গত কয়েক দিন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে দেখেছেন নতুন দামে এখনো চাল পৌঁছেনি। তিন-চার দিনের মধ্যে কমানো দামে চাল পাওয়ার সম্ভাবনা তারা দেখছেন। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. জয়নাল আবেদিন বলেন, চালের দোকানদাররা তাদের ক্রয়ের দাম দেখিয়েছেন। তারা ৩০-৪০ টাকা লাভ করছেন। আগামী দু-একদিনের মধ্যে দাম আরো কমানো হবে বলে আশা করছি। না হলে জরিমানার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কমানো দামে খুচরা পর্যায়ে চাল বিক্রি হচ্ছে কিনা তা দেখতে গতকাল রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালায় খাদ্য মন্ত্রণালয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. জয়নাল আবেদিন। বেলা সাড়ে ১১টায় অভিযান শুরু হয়। তিনটি চালের দোকানে অভিযান চালানো হয়। তবে অসংগতি না পাওয়ায় জরিমানা করা হয়নি কাউকে। অভিযানের আগাম বার্তা পেয়ে উত্তর বাড্ডার কিছু দোকানি চালের দোকান বন্ধ করে দেয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয় জেলা-উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করছে। আগামীতে আগাম না জানিয়েই অভিযান চালানো হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনাজপুরে মিনিকেট চাল কেজিতে সাড়ে ৯ টাকা বাড়লেও অভিযানের পর কমেছে দেড় টাকা। বগুড়ায় পাইকারিতে চাল এক টাকা কমলেও খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। বাংলাদেশ অটো, মেজর ও হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি আদর অ্যান্ড মমতা অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী সহিদুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, স্টক ব্যবসার নামে নিবন্ধনবিহীন একশ্রেণির মজুদদার চাল কিনে মজুদ করেছে।

সরকারের অভিযানের দরুন তারা বিপদে আছে।

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া বাজারে ঢাকাসহ সারা দেশে চাল সরবরাহ করা হয়। তালোড়া বাজারের গৌরব অটো রাইসমিলের স্বত্বাধিকারী সুভাষ প্রসাদ কানু বলেন, জানুয়ারির শুরু থেকেই বাজারে ধানের সরবরাহ কমেছে। গত তিন দিন আগে দুপচাঁচিয়ার ইউএনওর নেতৃত্বে এই মোকামে বিভিন্ন চালকলের গুদামে অভিযান হয়। পরদিন থেকেই বাজারে ধানের সরবরাহ বেড়ে যায়। সরবরাহ বাড়ায় প্রতি মণ ধানের দাম ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে বেশির ভাগ খুচরা বাজারে চালের দাম কমেনি। তিন দিনের ব্যবধানে নওগাঁর বাজারে প্রতি মণ ধানের দাম কমেছে ৬০ থেকে ২০০ টাকা। আর পাইকারি বাজারে চালের দাম কেজিতে কমেছে ১ থেকে ২ টাকা। তবে খুচরা বাজারে এখনো আগের দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর কারওয়ানবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে ৫ টাকা বেড়েছে। বেড়েছে বিভিন্ন ধরনের মাছের দাম। গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দর বেড়ে ডিমের ডজন হয় ১৭০ টাকা। পরে ১৭০ টাকার ডিমের ডজন কমে নামে ১২০ টাকায়। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের পর ডিমের বাজারও গরম হয়। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ডজন ফার্মের ডিমের দর বেড়েছে ৫ টাকা। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়।

গত বছরের শেষে মাংস বিক্রেতারা দর কমিয়ে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি শুরু করে গরুর মাংস। নির্বাচনের পর কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতি কেজি রুই আকারভেদে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতলা কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং মাছ আকারভেদে ৪৮০ থেকে ৬০০, চিংড়ির কেজি আকারভেদে ৫৫০ থেকে ৮০০, ছোট ট্যাংরা মাছের কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ এবং বোয়াল মাছের কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close