নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ জানুয়ারি, ২০২৪

ঘন কুয়াশা-অদক্ষ চালকে প্রাণহানি বাড়ছে সড়কে

ঢাবি ছাত্রীসহ এক দিনে নিহত ১৪ জন

সরকারের নানা প্রতিশ্রুতি ও উদ্যোগের পরও সড়কে প্রাণহানি কমছে না। উল্টো এ শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশা ও অদক্ষ চালকের কারণে সড়কে প্রাণহানি বেড়েছে। সরকারি হিসেবেই, গত বছর দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ জানায়, গত বছর প্রতিদিন সড়কে গড়ে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে বেসরকারি সংগঠনগুলোর হিসাবে এ মৃত্যুর সংখ্যা দিনে গড়ে ১৭ জন। গতকাল শনিবার এক দিনেই দেশে কমপক্ষে ১৪ জনের প্রাণ গেছে সড়কে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সামছুল হকের মতে, সড়কে দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনার জন্য দক্ষ চালক তৈরি করতে হবে। আগের বিভিন্ন সভায় বিভিন্ন কমিটির নেওয়া সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে। তার জন্য সমন্বয় ও ধারাবাহিক কার্যক্রম বাড়াতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শীত মৌসুমে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ঘন কুয়াশা বেড়ে যাওয়ায়। এক্ষেত্রে বিআরটিএ শুধু সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি দিয়েই দায় শেষ করেছে। কিন্তু বেশির ভাগ গাড়ির মালিক ও চালকরা এ ব্যাপারে সচেতন নয়।

গতকাল বান্দরবানের রুমায় একটি পর্যটকবাহী জিপ খাদে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীসহ দুই পর্যটক মারা যান। সিলেটের জৈন্তাপুরে গভীর রাতে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে নিহত হয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের ৪ নেতাকর্মী। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সোহাগ পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় লেগুনার ৪ যাত্রী নিহত হয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বাসের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহী ও কক্সবাজারের উখিয়ায় রাস্তা পার হতে গিয়ে এক রোহিঙ্গা বৃদ্ধ মারা গেছেন। ভাঙ্গা ও রুমার দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ২৫ জন।

বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, বান্দরবানের রুমার বগালেক সড়কে চাঁদের গাড়ি খাদে পড়ে ২ পর্যটক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ১০ জন। হতাহত ব্যক্তিরা সবাই নারী। ‘ভ্রমণকন্যা’ নামের একটি সংগঠনের হয়ে তারা কেওক্রাডং ভ্রমণে গিয়েছিলেন। পর্যটক দলটি ক্রেওক্রাডং দেখে ফেরার পথে দার্জিলিংপাড়া এলাকায় গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ি খাদে পড়ে যায়। দুর্ঘটনা কবলিত গাড়িতে পর্যটক ছিলেন ১৩ জন। দুজন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। নিহতরা হলেন ফিরোজা বেগম (৫৩) ও জয়নাব খাতুন (২৪)। এরমধ্যে জয়নাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী। আহতরা হলেন- রাফান, উষসী নাগ, জবা রায় নাগ, মাহফুজা ইসলাম, আমেনা বেগম, তাহমিনা তানজিম, রিজভী, আঞ্জুমান হক, ইতু ও স্বর্ণা। রুমার ইউএনও সৈয়দ মাহবুবুল হক জানিয়েছেন, গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ৫০০ মিটার পাহাড়ি খাদে পড়ে যায়। হতাহতদের সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার করে রুমা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। গাড়ির চালক পলাতক রয়েছে।

জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, জৈন্তাপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে উপজেলা ছাত্রলীগের ৪ জন কর্মী নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন উপজেলার নিজপাট কমলাবাড়ী গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে জুবায়ের আহসান, তোয়াসীহাটি গ্রামের রনদিপ পালের ছেলে নিহাল পাল, পানিহারাহাটি গ্রামের আরজু মিয়ার ছেলে মেহেদী হোসেন তমাল ও জাঙ্গালহাটি গ্রামের হারুন মিয়ার ছেলে সুমন আহমদ।

শুক্রবার রাত ১২টায় জৈন্তাপুর থেকে প্রাইভেট কার নিয়ে জাফলংয়ে যাচ্ছিলেন উপজেলা ছাত্রলীগের ওই ৪ কর্মী।

দুর্ঘটনার বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল আহমদ বলেন, ব্যবসায়িক কাজে তারা তামাবিল স্থলবন্দর যাচ্ছিলেন। বাংলা বাজার এলাকায় তাদের প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নদীতে পড়ে যায়।

স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাদের জৈন্তাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন এবং দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। ওসমানী মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পথে ওই দুজনও মারা যান।

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, ভাঙ্গা উপজেলার ঢাকা-গোপালগঞ্জ মহাসড়কের খাড়াকান্দি এলাকায় সোহাগ পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় লেগুনার ৪ যাত্রী নিহত হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ১৫ জন। তাদের মধ্যে ৯ জনকে ফরিদপুর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি আবু সাঈদ মো. খায়রুল আনাম জানান, গোপালগঞ্জ থেকে সোহাগ পরিবহনের একটি বাস ঢাকার দিকে যাওয়ার সময় যাত্রীবাহী একটি লেগুনাকে পিছন দিক থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই লেগুনার ৪ যাত্রী নিহত হয়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহত তিনজনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- ফরিদপুরের ভাঙ্গার আড়ুয়াকান্দি গ্রামের আবু সাঈদের পুত্র মেহেদি মাতুব্বর, নোয়াকান্দার হাফিজুল ইসলাম হাবু ও মধুখালী উপজেলার বাসস্ট্যান্ড এলাকার সিরাজুল ইসলাম।

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, ঈশ্বরদী-কুষ্টিয়া মহাসড়কের মিরকামারী দেওয়ান পাড়ার সামনে গতকাল শনিবার সকালে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত এবং ৩ জন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের শেখপাড়া গ্রামের আবদুর রউফের ছেলে নাসিম হোসেন এবং পাবনা শহরের রাধানগর এলাকার সুব্রত কুন্ডুর ছেলে অমিত কুমার কুন্ডু। নিহত দুজনই ঈশ্বরদী ইপিজেডের রেঁনেসা লিমিটেডের কর্মকর্তা। ঈশ্বরদীর পাকশী হাইওয়ে থানার ওসি আশীষ কুমার স্যান্যাল ও এসআই বেল্লাল হোসেন জানান, সকাল ৮ টায় কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস ও দাশুড়িয়া থেকে পাকশীগামী একটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে যায় এবং মাইক্রোবাসে থাকা দুজন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। ঘন কুয়াশার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তারা ধারণা করছেন।

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, মিরসরাইয়ে যাত্রীবাহী চয়েস বাসের ধাক্কায় মো. মামুন নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা জিয়াউদ্দিন নামে আরেকজন গুরুত্বর আহত হন। গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিএসআরএম এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মো. মামুন উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের মেহেদী নগর গ্রামের মো. নিজাম উদ্দিনের ছেলে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মরিয়ম বিনতে ফারুক বলেন, বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী মামুন ও জিয়াউদ্দিন গুরুত্বর আহত হলে দুজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মো. মামুন মারা যান। জিয়াউদ্দিনকে পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, উখিয়ায় কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেতে রাস্তা পারাপারের সময় টমটমের ধাক্কায় গুরা মিয়া নামে এক রোহিঙ্গা বৃদ্ধ মারা গেছেন। গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় কুতুপালং উচ্চবিদ্যালয় সংলগ্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় এ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত রোহিঙ্গা গুরা মিয়া ১ নম্বর ক্যাম্পের ইস্ট ৯/এ ব¬কের বাসিন্দা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, টমটমের ধাক্কায় ওই বৃদ্ধ রাস্তায় পড়ে গেলে দ্রুতগতিতে আসা আরেকটি সিএনজি অটোরিকশা তাকে আবার আঘাত করে। এতে আহত বৃদ্ধকে উদ্ধার করে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close