নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ জানুয়ারি, ২০২৪

কুয়াশার চাদরে ঢাকা দেশ

তীব্র শীতে জবুথবু জনজীবন * রংপুরে আগুন পোহাতে গিয়ে দুজনের মৃত্যু, দগ্ধ ৪৪

কুয়াশার চাদরে ঢাকা রাজধানীসহ সারা দেশ। তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। এর সঙ্গে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। গতকাল রবিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আগের দিনের চেয়ে আরো খানিকটা কমেছে। দেশের ২৪ অঞ্চলের তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির নিচে নেমে গেছে। কোনো কোনো এলাকায় আজ রোদ উঠতে পারে। আগামী বুধবার থেকে দেশের কিছু স্থানে বৃষ্টিরও সম্ভাবনা আছে। এদিকে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ দুজন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহী, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও চুয়াডাঙ্গা জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য এটা সত্যিই বেশি কষ্টের। তীব্র ঠাণ্ডায় নিজেকে বাঁচাতে খড়কুটা জ্বালিয়ে আগুনের তাপ নেওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ছে অনেক স্থানে।

দেশের প্রায় সবখানে তাপমাত্রা কমলেও রাজধানীতে রবিবার তাপমাত্রা সামান্য বেড়েছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, শীতের এই তীব্রতা আজ সোমবারও থাকতে পারে। তবে দেশের কিছু কিছু এলাকায় রোদের মুখ দেখা দিতে পারে। এক আবহাওয়াবিদ অবশ্য বলেছেন, সোমবার রাজধানীতেও রোদ উঠতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে, ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবারও দিনাজপুরেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই হিসাবে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরো কমেছে ২৪ ঘণ্টায়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, সোমবার তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। মঙ্গলবার থেকে তাপমাত্রা একটু করে বাড়বে। বুধবার থেকে দেশের কিছু স্থানে বৃষ্টিরও সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টির পর কুয়াশা অনেকটা কেটে যাবে। শীতও কমতে শুরু করতে পারে।

রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিন্তু বেড়েছে। গতকাল এ নগরীর তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার ছিল ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেছেন, কাল দেশের দু-এক স্থানে রোদ দেখা দিতে পারে।

আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ দুজনের মৃত্যু : কনকনে শীতে খড়কুটা জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে ৪৪ জন দগ্ধ রোগীর মধ্যে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রংপুরসহ আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে এসব দগ্ধ রোগী ভর্তি হয়েছেন। মারা যাওয়া দুজনের মধ্যে একজন হলেন রংপুর নগরের তাজহাট এলাকার বাসিন্দা নাসরিন বেগম (৩৫)। তিনি রবিবার সকালে মারা যান। এছাড়া রংপুরের পীরগাছা উপজেলার বাসিন্দা আমেনা বেগম (৬০) গত শনিবার সকালে মারা যান।

হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ দিনের ব্যবধানে (রবিবার দুপুর পর্যন্ত) শীতে আগুন পোহানোসহ গরম পানি ব্যবহার করতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে রোগী ভর্তি হন ৪২ জন। এর মধ্যে বার্ন ইউনিটে ১১ জন এবং সার্জারি, শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ৩১ জন।

বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চিকিৎসক ফারুক আলম জানান, চিকিৎসাধীন রোগীদের শরীরের ১০ থেকে ৪৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। রবিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের বার্ন ইউনিটসহ সার্জারি ও শিশু ওয়ার্ডে আগুনে দগ্ধ রোগীরা চিকিৎসাধীন। গত ১১ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া গঙ্গাচড়ার তালুক হাবু এলাকার নাজমুন নাহার (৪০) ৮ নম্বর শয্যায় আছেন। তার সঙ্গে থাকা স্বামী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘হাড়কাঁপানো শীত থাকি রক্ষা পাওয়ার জন্যে খড়কুটা জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে কাপড়ে আগুন ধরি যায়। তার শরীরের নিচের দিকে আগুনে ঝলসে গেইছে।’

দিনাজপুরে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। রাস্তাঘাটে কমে গেছে সাধারণ মানুষের চলাচল। শীতের সকালে ছিন্নমূল আর গ্রামীণ মানুষ খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী ও বয়স্ক মানুষ। নীলফামারীর ডিমলা শহরের ভ্যানচালক পানু বলেন, ঠাণ্ডার জন্য ভ্যান চালানো যাচ্ছে না। হাত ও পায়ের পাতা মনে হচ্ছে বরফ হয়ে যাচ্ছে। পেটের দায়ে বাড়ি থেকে বের হলেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close