প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪

মধ্যপ্রাচ্যে বিপদে যুক্তরাষ্ট্র

* ইরাক-সিরিয়ায় মোসাদের ‘সদর দপ্তরে’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ৪ * লোহিত সাগরে মার্কিন বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা

ইরাকে ইসরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের ‘সদর দপ্তরে’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)। হামলায় চারজন নিহত এবং ছয়জন আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ইরাকের কুর্দিস্তান নিরাপত্তা কাউন্সিল। একই সময় সিরিয়ায় বেশ কয়েকটি ‘সন্ত্রাসী’ লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হেনেছে ইরান। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সোমবার ইরাকের উত্তরের ইরবিল শহরের কাছে ইরানের হামলা ‘ইরাকের স্থিতিশীলতাকে ক্ষুণ্ণ করেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র। মার্কিন সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, আমরা ইরানের বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিরোধিতা করি।

ইরানের দাবি, সোমবারের হামলা ইসরায়েলের ‘গুপ্তচরবৃত্তির সদর দপ্তর’ লক্ষ্য করে করা হয়েছে। ওই হামলায় অন্তত চার বেসামরিক নিহত এবং আরো ছয়জন আহত হয়েছে। এক বিবৃতিতে কুর্দিস্তান সরকারের নিরাপত্তা পরিষদ হামলাটিকে একটি ‘অপরাধ’ বলে বর্ণনা করেছে।

ইরাকি নিরাপত্তা ও চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ধনকুবের কুর্দি ব্যবসায়ী পেশরাউ দিজাই এবং তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য ছিলেন। তাদের বাড়িতে অন্তত একটি রকেট বিধ্বস্ত হলে তারা মারা যান। নিরাপত্তা সূত্রের তথ্য মতে, হামলার সময় একটি রকেট কুর্দি গোয়েন্দা কর্মকর্তার বাড়িতে এবং আরেকটি কুর্দি গোয়েন্দা কেন্দ্রে আঘাত হেনেছিল। এর আগে, দুই মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিলেন, ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কোনো মার্কিন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

এদিকে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এক বিবৃতিতে বলেছে, ইরান সোমবার গভীর রাতে সিরিয়া ও ইরাকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ বিভিন্ন অবস্থানে ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে ব্যাপক হামলা করেছে। আইআরজিসি বলেছে, সিরিয়া ও ইরাকে একটি ‘গোয়েন্দা সদর দপ্তর’ এবং ‘ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সমাবেশ’ ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এ মাসের শুরুতে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর কেরমানে জোড়া বোমা হামলা এবং গত বছরের ডিসেম্বরে সিস্তান-বেলুচেস্তান প্রদেশের একটি পুলিশ স্টেশনে হামলার ঘটনায় ইরানবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর ‘সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী অপরাধের’ জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়েছে, কেরমান ও রাস্কে সাম্প্রতিক হামলার সঙ্গে জড়িত ‘কমান্ডার এবং প্রধান উপাদান’ সিরিয়ায় চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সোমবার গভীর রাতে ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে সেগুলো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

কেরমানে চলতি মাসের শুরুতে বড় সমাবেশে বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ৯৩ জন নিহত হন। ইরানের সাবেক শীর্ষ সামরিক কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেইমানির মৃত্যুর চতুর্থ বার্ষিকীতে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তান সীমান্তবর্তী দক্ষিণ-পশ্চিম সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের রাস্ক শহরের একটি পুলিশ স্টেশনে হামলার পর অন্তত ১১ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়।

আনাদোলু বলছে, গত রবিবার ইরানের পুলিশ প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমাদ রেজা রাদান গত ডিসেম্বরের রাস্ক হামলার অপরাধীদের গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেন। এছাড়া কেরমান হামলায় প্রধান অভিযুক্ত দুই তাজিক নাগরিককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিবৃতির অন্য অংশে আইআরজিসি আরো বলেছে, তারা ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলে ইসরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের সদর দপ্তর লক্ষ করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে এবং এটিকে ‘ধ্বংস’ করে দিয়েছে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই অবকাঠামোটি ‘গুপ্তচরবৃত্তি কার্যক্রমের বিকাশ এবং এ অঞ্চল ও ইরানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নকশার কেন্দ্র’ ছিল। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইরবিলে মার্কিন কনস্যুলেটের আশপাশে হামলাগুলো হয়েছে।

পৃথক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা বলেছে, গতকাল মঙ্গলবার ভোরে ইরাকের আধাস্বায়ত্তশাসিত কুর্দি অঞ্চলের রাজধানী ইরবিলে অন্তত আটটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইরানের এই হামলার জেরে ইরবিল বিমানবন্দরে বিমান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায় বলে তিনটি নিরাপত্তা সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে। ইরবিলের গভর্নর ওমেদ খোশনাউ বলেছেন, এটি সন্ত্রাসী হামলা, ইরবিলের বিরুদ্ধে অমানবিক কাজ করা হয়েছে। (এ হামলার কারণে) ইরবিল ভয় পাবে না বা ভয়ে কাঁপবেও না।

এদিকে ইরানের এ হামলার কারণে কেউ নিহত বা আহত হয়েছেন কি না তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দুই কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, গভীর রাতে হওয়া এই হামলায় কোনো মার্কিন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এবং কোনো মার্কিন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close