গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
কোটালীপাড়ায় শেষ হলো নৌকাবাইচ
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার বিল বাঘিয়ায় লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে উৎসবমুখর পরিবেশে তিন দিনব্যাপী নৌকাবাইচ গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় শেষ হয়। এ নৌকাবাইচ প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বিল বাঘিয়ার নৌকাবাইচ হিসেবে পরিচিত। নৌকাবাইচকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার মানুষের মিলনমেলা বসেছে কোটালীপাড়ার কালীগঞ্জে। গত শুক্রবার থেকে নান্দনিক এ নৌকাবাইচ বিপুল আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়।
কালিগঞ্জের বিল বাঘিয়ায় অনুষ্ঠিত এটি দক্ষিণ বাংলার সর্ববৃহৎ নৌকাবাইচ। উপজেলার কালিগঞ্জ-বুরুয়া খালে ২০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্য প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ বিল বাঘিয়ায় চলে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। বছরে দুবার এই খালে নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে এক দিন এবং লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে তিন দিন। নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় বাছারি, জয়নগরী, ময়ূরপঙ্খী, ছিপ, গয়না, পানসি, কোষা, ডিঙি নৌকার আগমন ঘটে। পার্শ্ববর্তী জেলা মাদারীপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ অঞ্চল থেকে এসব নৌকা আসে।
এলাকাবাসী জানায়, প্রায় ২০০ বছর আগে লক্ষ্মীপূজার সময় নৌকা নিয়ে এলাকার মানুষ জমিদার শিবরাম চৌধুরীর বাড়িতে যেতেন। পূজা দেখে ফেরার সময় নৌকায় নৌকায় পাল্লা হতো। নৌকার মাধ্যমে চিত্ত বিনোদনের চিন্তা থেকে এখানে নৌকাবাইচের শুরু। সে থেকেই লক্ষ্মীপূজার পরের দিন থেকে চলে তিনদিনের নৌকা বাইচ। হয় না কোনো পুরস্কারের ব্যবস্থা। তারপরও নৌকার আগমন দর্শকদের সমাগমের কোনো ঘাটতি থাকে না।
ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক নৌকা উপস্থিত হয় প্রতিযোগিতায়। নৌকাবাইচ উপভোগ করতে দুইপাড়ে ভিড় জমে দর্শকদের। নৌকাবাইচ উপলক্ষে বসে বাহারি সব দোকানপাট। কালিগঞ্জ থেকে বুরুয়া বড় ব্রিজ পর্যন্ত খালের দুপাড়ে তিন কিলোমিটার জুড়ে মেলা বসে।
মুকসুদপুর থেকে নৌকাবাইচ দেখতে আসা অনামিকা বিশ্বাস বলেন, এখানকার মতো এত সুন্দর রাজকীয় নৌকাবাইচ অন্য কোথাও দেখিনি। কলাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বিজন বিশ্বাস বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বাঘিয়ার বিলে এই নৌকাবাইচ ২০০ বছরের ঐতিহ্য। এলাকার লোকজন সবাই মিলে নৌকা বাইচের আয়োজন করে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীনুর আক্তার বলেন, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ এ নৌকাবাইচ দেখতে আসেন। বিল বাঘিয়ায় পরিণত হয় মিলনমেলায়।
"