অলিউজ্জামান রুবেল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

  ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২৭ রুট দিয়ে আসছে মাদক

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত দিয়ে দেদার আসছে মাদকদ্রব্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিনই আসছে হেরোইন, ফেনসিডিল ও ইয়াবা। মাদক কারবারিরা জেলার সীমান্তকে নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে। যদিও বিজিবির দাবি, চোরাচালান রোধে সীমান্তে আছে কড়া নজরদারি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জেলার চারটি উপজেলায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। বিস্তীর্ণ সীমান্তের ২৭টি রুট দিয়ে আসছে মাদকদ্রব্য। এ ২৭টি রুট বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তিনটি ব্যাটালিয়নের অধীনে। সূত্রটি আরো জানায়, ৫৩ ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ৮টি, ৫৯ ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ ১৬ এবং ১৬ ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ ৩টি এলাকা দিয়ে আসছে মাদকদ্রব্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিবগঞ্জ, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে সবচেয়ে বেশি আসে ফেনসিডিল। আর সদর উপজেলার রুটগুলো দিয়ে আসে হেরোইন। মাদক কারবারিদের মতে, জেলায় মাদকের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে ফেনসিডিল ও হেরোইন। ইয়াবার চাহিদা অন্য সময়ের চেয়ে কম। চাহিদামতোই কারবারিরা ভারত থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ে আসে।

মাদক চোরাচালানে জড়িত অনেকেই, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার ভয়ে প্রতিনিয়তই রুট বদল করতে হয়। তাদের কাছে যেসব রুট নিরাপদ মনে হয়, সেই রুট দিয়েই মাদকের বড় বড় চালান ভারত থেকে নিয়ে আসেন। বর্তমানে ২৭টি রুট দিয়ে আসছে মাদক। এগুলোকে নিরাপদ মনে করা হয়। সদর উপজেলার শাহাজানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর ও দুর্লভপুর, আলাতুলি ইউনিয়নের কোদালকাটি ও বকচর, চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের বাখের আলী, শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের শিংনগর, দুর্লভপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর, পাঁকা ইউনিয়নের ওয়াহেদপুর সীমান্ত দিয়ে সবচেয়ে বেশি আসে হেরোইন।

আর ফেনসিডিল আসে শিবগঞ্জের বিনোদপুর ইউনিয়নের কিরণগঞ্জ, কালীগঞ্জ, জমিনপুর, শাহবাজপুরের শ্মশানঘাট, আজমতপুর, উনিশবিঘী, চকপাড়া, তেলকুপি, শিয়ালমারা ও দাইপুকুরিয়া ইউনিয়নের কামালপুর, ভোলাহাট উপজেলার ভোলাহাট সদর ইউনিয়নের চামুসা, হোসেনভিটা, গিলাবাড়ী, বিলভাতিয়া ও গোহালবাড়ী ইউনিয়নের আলী সাহপুর ও দলদলি ইউনিয়নের পোল্লাডাঙ্গা-ময়ামারি সীমান্ত দিয়ে। গোমস্তাপুর উপজেলার রোকনপুর ও বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের শিবরামপুর দিয়ে দেদার আসছে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার সঙ্গে সঙ্গে মাদক চোরাচালানের কৌশল বদল করছে কারবারিরা। কোনো কৌশল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে আবার কৌশল বদলে ফেলে তারা। কারবারিরা মাদক চোরাচালানের জন্য সীমান্তের গ্রামগুলোর অপ্রচলিত রাস্তা ব্যবহার করছে। গন্তব্যে মাদক নিয়ে যেতে কারবারিরা কৌশল করে একাধিকবার হাত বদল করে।

সীমান্তের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাদক পাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি চোরাচালানিরা তাদের চাহিদার কথা জানিয়ে দেয় ভারতীয় চোরাচালানিদের। এরপর তারা সীমান্তের কাছে চিহ্নিত একটি স্থানে বস্তায় করে মাদক রেখে যায়। পরে সুযোগ অনুযায়ী এ দেশীয় চোরাচালানি তা নিয়ে আসে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সীমান্ত এলাকায় পুঁতে রাখে ভারতীয় চোরাচালানিরা। পরে বাংলাদেশি চোরাচালানিরা তা সংগ্রহ করে। এরপর কয়েক হাত বদল হয়ে চলে যায় গন্তব্যে।

সীমান্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর দাবি, পাচার হয়ে আসা বেশিরভাগ মাদকদ্রব্যই চলে যায় নির্ধারিত গন্তব্যে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে যে পরিমাণ ধরা পড়ে, তা খুবই নগণ্য। ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মনির-উজ-জামান বলেন, বিজিবির সদর দপ্তরের নির্দেশনা পেয়ে সীমান্তে কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে।

৫৯ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, মাদক চোরাচালান সবসময়ই ছিল, এখনো আছে। আমরা প্রতিদিনই অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য উদ্ধার করছি। একইসঙ্গে আসামিও গ্রেপ্তার হচ্ছে। কারবারিদের নতুন নতুন কৌশল মোকাবিলা করতে হচ্ছে বিজিবিকে। তারা যতই কৌশল বদল করুক না কেন, আমরা তাদের ধরতে সক্ষম হই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close