মো. শাহ আলম, খুলনা

  ২১ জানুয়ারি, ২০২৪

খুলনায় জ্বালানি তেল চোর সিন্ডিকেট

খুলনায় চোর সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেলের ৩টি ডিপো। সিন্ডিকেট সদস্যরা ডিপোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশে ডিপো থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলন ও পাচার করছে। এতে একদিকে সিন্ডিকেট কালো টাকার পাহাড় গড়ছে, অন্যদিকে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপো দিন দিন লোকসান গুনছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, খুলনা মহানগরের খালিশপুরের কাশিপুর এলাকায় বৃহৎ জ্বালানি তেল ডিপো মেসার্স পদ্মা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড, মেসার্স মেঘনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড ও মেসার্স যমুনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড অবস্থিত। এ তিনটি ডিপো থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় তেল সরবরাহ কাজে নিয়োজিত থাকে বিভিন্ন মালিকানাধীন ট্যাংকলরি। এসব ট্যাংকলরি চালক ও শ্রমিকরা ডিপো গেজারসহ অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে বেশি পরিমাণে জ্বালানি তেল লোড নেয়। আর ট্যাংকলরি চালকরা ডিপোগুলো থেকে বের হয়ে গেটের বাইরে সড়কের দুই পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানগুলোর সামনে অবস্থান নেয়। সেখানেও পরস্পর যোগসাজশে দোকান মালিকরা ট্যাংকলরির হোসপাইপ খুলে বালতি অথবা ড্রাম ঝুলিয়ে তেল চুরি করে থাকে। এ তেল চুরির কাজে জড়িত খালিশপুর থানার কাশিপুর এলাকার একটি জ্বালানি তেল চোর সিন্ডিকেট। এরা এলাকায় এতটাই প্রভাব খাটিয়ে এ জ্বালানি তেল চুরি কারবার পরিচালনা করে আসছে যে কেউ এদের এ অবৈধ তেল পাচার ব্যবসা বন্ধ করতে পারছে না।

সূত্র জানান, বেশ আগে যৌথবাহিনী ও র‌্যাব অভিযান চালিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ তেল চুরি বন্ধ করতে পারলেও বর্তমানে এ তেল চুরি রোধ করা যাচ্ছে না। কারণ ডিপোগুলোর সামনের সড়কের দুই ধার দিয়ে শতাধিক দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকান মালিকরা মূল তেল চোর সিন্ডিকেটের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে তেল চুরি কারবার পরিচালনা করে বছরের পর বছর ধরে তেল চোরাকারবারি চলে আসছে। প্রতিনিয়ত লাখ লাখ টাকার তেল চুরি কারবার পরিচালিত হলেও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা অজ্ঞাত কারণে নীরব।

এদিকে এ সিন্ডিকেট জ্বালানি তেল সরবরাহকারী রেলের ওয়াগন থেকে হোসপাইপ খুলে তেল পাচার করার কাজে এলাকায় গড়ে তুলেছে মজবুত টেকসই বেড়া দিয়ে ঘেরা স্থাপনা। খালিশপুর রেলের ওয়াগনের যাতায়াত পথের পাশেই রেল থেকে তেল চুরি কাজে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। এখানেও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা নীরব দর্শকের ভূমিকায়। আর এভাবে তেল চুরি কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছে জ্বলানি তেল সরবরাহ কাজে ব্যবহৃত ট্যাংকলরির চালক ও রেলের ওয়াগন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চোরাইকৃত জ্বালানি তেলের মধ্যে কেরোসিন, ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল, ফার্নেস ওয়েল উল্লেখযোগ্য।

সূত্র জানান, কাশিপুর ডিপো এলাকায় তেল চুরির সঙ্গে নাসির, লোকমান, রবিন, পলাশ, মাসুম, বাপ্পী, আজগর, তরিকুল, অন্তু ও জিয়াসহ অনেকেই জড়িত। তবে এর পেছনে রয়েছে কিছু রাঘব বোয়ালও। যাদের শেল্টারে মাঠে কাজ করে উল্লিখিতরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তেল চুরির সঙ্গে জড়িতরা দাম্ভিকতার সঙ্গে বলেন, লেখালেখি করে লাভ হবে না। আমাদের পেছনে শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। তাছাড়া আমরা সবাইকে মাসোহারা দিয়ে আমাদের ব্যবসা পরিচালনা করি।

জানা গেছে, মেসার্স যমুনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড, মেসার্স মেঘনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড ও মেসার্স পদ্মা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেডের গেট থেকে ট্যাংকলরি সমিতির কার্যালয় পর্যন্ত অবৈধভাবে ২ শতাধিক দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকান তেল চোর সিন্ডিকেট চক্রের নিয়ন্ত্রিত। যদিও এ জ্বালানি তেল চোর সিন্ডিকেট সদস্যদের অবৈধ ব্যবসা বৈধ দেখানোর জন্য অনেকেই ডিলারশিপের কাগজপত্র তৈরি করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে এসব কাগজপত্র প্রটেকশন কাজে ব্যবহার ছাড়া আর কিছু নয়- এমনটিই জানিয়েছেন একটি সূত্র।

এদিকে জ্বালানি তেল পরিবহন কাজে নিয়োজিত ট্যাংকলরি মালিক সমিতি, ট্যাংকলরি শ্রমিক সমিতি, ট্যাংকলরি ড্রাইভার্স ইউনিয়নসহ সব ইউনিয়নের চাঁদা আদায়ের জন্য নিজস্ব কার্যালয় রয়েছে। কিন্তু স্পর্শকাতর সংরক্ষিত এলাকা ডিপোগুলোর ভেতরে বসে রশিদ বই ছড়িয়ে রেখে চাঁদা আদায় করতে দেখা যায়। অপরদিকে, চট্টগ্রাম থেকে তেল নিয়ে খুলনার ডিপোতে আসা তেল ট্যাংকারগুলো ভৈরব নদীতে নোঙর করে রাখা হয়। রাতের আঁধারে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় করে ড্রাম ভর্তি করে ট্যাংকার থেকেও তেল পাচার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব তেল চলে যায় ভৈরব পাড়ে দিঘলিয়া উপজেলার ফরমাইশখানা গ্রামের বিভিন্ন দোকানে। এভাবে একদিকে ট্যাংকলরি, অপরদিকে ট্যাংকার থেকেও তেল চুরি হচ্ছে প্রতিযোগিতা করে। সরকারি সম্পদ এভাবে সিন্ডিকেট ও চোরচক্র লুট করছে দেদার। যা বন্ধ হওয়া দরকার বলে মনে করেন সচেতন মহল।

মেসার্স পদ্মা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ডিপোর সুপারিনটেনডেন্ট এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। এ প্রতিবেদককে তিনি ট্যাংকলরি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। এ ব্যাপারে খালিশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, তেল চোর সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করে এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close