সিলেট ও মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

  ২১ জানুয়ারি, ২০২৪

রেকর্ড ১০ কোটি কেজি ছাড়াল চা উৎপাদন

সদ্য বিদায়ি ২০২৩ সালে দেশে বাংলাদেশে চা উৎপাদনে নতুন রেকর্ড হয়েছে। চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১০ কোটি কেজি ছাড়িয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের ১৬৮টি চা বাগানে বিদায়ি বছরে ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। এটি বাংলাদেশে চা চাষের ১৭০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উৎপাদন। রেকর্ড চা উৎপাদনে মহাখুশি সিলেট অঞ্চলের চাষিরা। এখন চা রপ্তানি জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

চা বোর্ড সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর ধরে ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এবারই প্রথম লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফলতা এসেছে। ২০২৩ সালে দেশের চা বাগানগুলো থেকে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি। সেই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরো ৯ লাখ কেজি বেশি চা উৎপাদন হয়েছে। একইসঙ্গে আগের বছরের তুলনায় চায়ের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। ২০২২ সালে ১০ কোটি কেজি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও উৎপাদিত হয় ৯ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার কেজি। এর আগে সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছিল ২০২১ সালে। ওই বছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়। যদিও তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম ছিল।

সূত্র মতে, দেশে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হয় ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনীছাড়া চা বাগান থেকে। সেই হিসেবে ২০২৩ সালে ১৭০ বছরের ইতিহাসে চা উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, চায়ের ইতিহাসে উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে গত বছর। চা বোর্ড, বাগান মালিক, শ্রমিক, ক্ষুদ্র চাষি- সবার দলগত সাফল্যে এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, দেশে চায়ের চাহিদা ৯ কোটি ২০ থেকে ৩০ লাখ কেজি। উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন বাড়তি চা রপ্তানিতে নজর দিতে হবে। গত বছর ১০ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানি বাড়াতে চায়ের গুণগতমান আরো বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। তাহলে রপ্তানি বাজারও সম্প্রসারিত হবে।

এদিকে এমন সময়ে চায়ের উৎপাদনে রেকর্ড হয়েছে, যখন দেশে চায়ের চাহিদা কমছে। বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় নিলামে চায়ের বিক্রি কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে নিলামে চায়ের গড় দামও। গত এপ্রিল থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রামে চায়ের ৩৭টি নিলামে ৭ কোটি ৩৯ লাখ কেজি চা বিক্রি হয়েছে, যা আগের মৌসুমের একই সময়ের তুলনায় ১ শতাংশ কম। আবার নিলামে কেজিপ্রতি চায়ের গড় দর গত মৌসুমের চেয়ে ১৭ টাকা কমে নেমেছে ১৮৪ টাকা ৫২ পয়সায়। চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কামরান তানভিরুর রহমান বলেন, অনুকূল আবহাওয়া ও নিয়মিত সংস্কার কার্যক্রমের কারণে চা উৎপাদনে গত বছর রেকর্ড হয়েছে। তবে শুধু উৎপাদন দেখলে হবে না। উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় নিলামে চায়ের সরবরাহও বেড়েছে। তাতে প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম পাওয়া যাচ্ছে না। নিলামে ভালো দাম না পেলে বহু চা বাগান টিকে থাকতে পারবে না।

কামরান তানভিরুর রহমান আরো বলেন, চাহিদার উদ্বৃত্ত চা রপ্তানি করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। চা রপ্তানি করতে হলে মান বাড়াতে হবে। চট্টগ্রাম ও সিলেটের চায়ের মান ভালো হলেও উত্তরাঞ্চলে ক্ষুদ্র চাষ থেকে যে চা আসছে, সেগুলো খুব নিম্নমানের। এই নিম্নমানের চা নিলাম বাজারে দামের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

চা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী, চা বাগান ও ক্ষুদ্র চাষিদের উৎপাদিত চা নিলামে বিক্রি করতে হয়। বাগান মালিকরা সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ চা কর দিয়ে নিজেরা প্যাকেটজাত বা রপ্তানির জন্য সংগ্রহ করতে পারেন। নিলামে চায়ের গুণগতমান ও সরবরাহের ওপর দর হাঁকেন ক্রেতারা।

চায়ের ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৮৫৪ সালে সিলেটে মালনীছড়ায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা চাষ শুরু হয়। তবে বাংলাদেশে প্রথম চা চাষ শুরু হয়েছিল ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামের পাইওনিয়ার বাগানে। বর্তমানে চট্টগ্রাম ক্লাবের আশপাশের এলাকায় ছিল ওই বাগানের অবস্থান। সেই বাগানে প্রথম চা উৎপাদিত হয় ১৮৪৩ সালে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে, বিশ্বে ৪৭টি দেশে চা উৎপাদিত হয়। লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল টি কমিটির সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, চা উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে অষ্টম। এক দশক আগে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দশম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close