নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ জানুয়ারি, ২০২৪

বিআরটিসির বাস আলোর মুখ দেখবে কবে

নিরাপদ ও আধুনিক সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং দেশের আর্থ-সামাজিক ও মানবসম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) কাজ শুরু করলেও, এখনো তা পুরোপুরি আশার মুখ দেখেনি। ভাড়া কম হলেও বেশির ভাগ সময়ই এ বাসগুলোয় যাত্রীসংকট দেখা যায়। এর অন্যতম কারণ হিসেবে অনেকেই অভিযোগ করেছেন, নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে না পৌঁছানো। এ ছাড়া পুরোনো বাস, অনুন্নত সেবা, সিট ভাঙা, যাত্রী বাড়াতে উদ্যোগ না থাকা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বা ফ্যান কাজ না করাসহ আরো অনেক কিছু।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বহরে প্রায় ১ হাজার ৮০০ বাস আছে। এরমধ্যে বর্তমানে সচল রয়েছে ১ হাজারের মতো। আর বাকি ৬০০ বাস পড়ে রয়েছে বিভিন্ন ডিপোতে, যার অধিকাংশই অকেজো। সচল বাসের মধ্যে প্রায় ৪৫০টি ভাড়ায় ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন অফিসের স্টাফ এবং বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার কাজে। সিটি সার্ভিসের পাশাপাশি দেশের ১৬৩টি রুটে ৪২০টি বিআরটিসি বাস চলাচল করছে।

বিআরটিসির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, বাস ডিপো ২১টি। ট্রাক ডিপো ২টি। সব মিলিয়ে বাসের সংখ্যা ১ হাজার ৮৩০টি। এরমধ্যে নতুন বাস ৬০০টি এবং পুরানো ১ হাজার ২৩০টি। চলমান আছে ১ হাজার ১৮২টি। নিবন্ধনের অপেক্ষায় নতুন বাস ৩২৫টি। বিইআর বা বিয়ন্ড ইকোনমিক্যাল রিপেয়ার ২৪৮টি। হালকা ও ভারী মেরামতের অপেক্ষায় আছে ৭৫টি বাস।

ঢাকা মহানগরীতে চলমান বিআরটিসি বাসের সংখ্যা ৭২৩টি; যার মধ্যে গণপরিবহন ৪৬৩টি, স্টাফ বাস ২৩৫টি, স্কুল বাস ৮টি এবং নারী বাস ১৭টি। ঢাকার বাইরে চলে ৩৬৩টি বাস, এগুলোর মধ্যে গণপরিবহন ৩০২টি, স্টাফ বাস ৫৮টি এবং মহিলা বাস ৩টি, লিজে পরিচালিত হয় ৯৬টি। ঢাকা মহানগরীতে চলমান রুট ২৮ এবং ঢাকার বাইরে চলমান রুট ১৩৪।

বিআরটিসি বলেছে, সচিবালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের অফিসে যাতায়াতের সুবিধার্থে ১৬৪টি রুটে তাদের ২০২টি স্টাফ বাস হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১৮১টি বাস নিয়মিত চলাচল করছে।

এদিকে রাজধানীর উত্তরা-মতিঝিল ও মোহাম্মদপুরে চক্রাকার বাস সার্ভিসের আওতায় চলছে ৭টি বাস। বাংলাদেশ-ভারত সরাসরি বাস সার্ভিসের আওতায় ৫টি বাস চলাচল করছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে নারীদের জন্য বিআরটিসির ৯টি বিশেষ বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। এছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের স্বল্প ভাড়ায় ও নিরাপদে যাতায়াতের সুবিধার্থে ঢাকায় শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুল রুটে একটি বাস ও চট্টগ্রাম শহরের শিক্ষার্থীদের জন্য কম ভাড়ায় ও নিরাপদে যাতায়াতের জন্য ১০টি বিআরটিসি বাস স্টুডেন্ট সার্ভিস হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।

সচল ও অকেজো বাসের সংখ্যা : বিআরটিসির তথ্য বলেছে, মতিঝিল বাস ডিপোতে ২০৪টি বাসের মধ্যে সচল ১২৭টি। কল্যাণপুর বাস ডিপোতে গাড়ির সংখ্যা ২১৪টি, তার মধ্যে সচল বাস ১৪১টি। বড় ধরনের মেরামতে আছে তিনটি। বিয়ন্ড ইকোনমিক্যাল রিপেয়ার বা বিইআরের আওতায় অকেজো বাস আছে ৫০টি। বিআরটিসি বিভিন্ন মেয়াদে গাড়ি লিজ দেয়। যে কেউ তাদের কাছ থেকে লিজ নিতে পারেন। পাঁচ বছর থেকে ১০ বছর মেয়াদি লিজ দেয়।

সংস্থাটি জানায়, লং লিজে পরিচালিত ২০টি বাসের মধ্যে ৩টি বাস ব্যক্তিমালিকানায় চলাচল করছে। বাকি ১৭টি বাস ডিপোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

এদিকে গাবতলী বাস ডিপোতে গাড়ির সংখ্যা ৬৪টি, এরমধ্যে সচল বাস ৬৩টি। মিরপুর বাস ডিপোতে গাড়ির সংখ্যা ১৪২টি। তার মধ্যে সচল ১২২টি। মোহাম্মদপুর বাস ডিপোতে ৩৩টি গাড়ি রয়েছে। সবগুলোই সচল অবস্থায় আছে।

১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠার পর মাঝে কয়েকটি বছর বাদ দিলে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত নিয়মিত লোকসান গুনেছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটি। তবে বিআরটিসির বার্ষিক প্রতিবেদন মতে, গত ২২-২৩ অর্থবছরে বিআরটিসি লোকসান থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কিন্তু যাত্রী সংকটে প্রশ্ন থেকে যায়, কীভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি?

এ বিষয়ে বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, যাত্রী সংকট আগের তুলনায় অনেক কমেছে। আমরা নতুন নতুন গাড়ি সড়কে ছেড়েছি। পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার ২৩টি রুটে ৬০টি বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। ধীরে ধীরে যাত্রীদের আস্থার জায়গা তৈরি করেছে বিআরটিসি। আর এজন্যই এখন আমরা লাভজনক প্রতিষ্ঠানের দিকে অগ্রসর হচ্ছি।

বিআরটিসির সক্ষমতা বৃদ্ধির একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ইনহাউজ প্রশিক্ষণ, দক্ষ চালক ও কারিগর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিআরটিসি অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ২০২২-২৩ সময়কালে ২৬ হাজার ৪৭ জনকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রত্যেক ডিপো/ইউনিটে অনলাইন সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে সব কার্যক্রম মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি, ওয়াইফাই সুবিধা, ই-টিকেটিং, ফ্লিট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ব্যবহারের মধ্যদিয়ে উন্নত পরিবহন সেবা দেওয়া হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণেও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে যাচ্ছে বিআরটিসি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close