নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ জানুয়ারি, ২০২৪

পুরোনোগুলোয় সংকট, তবু আরো ৩ বিশ্ববিদ্যালয়

দেশে ১১৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি অনুমোদন পেয়েও এখনো কার্যক্রমই শুরু করতে পারেনি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরু করলেও দীর্ঘসময় ধরে অস্থায়ী ক্যাম্পাস, উপাচার্য না থাকা, আইন না মানা ও সনদ-বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে সতর্ক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।

বিদ্যমান অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যখন টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে, ব্যর্থ হচ্ছে মানরক্ষায়। এ অবস্থায় আরো তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ডজনখানেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও পোর্টো গ্র্যান্ডে বিশ্ববিদ্যালয় নামে নতুন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ঝিনাইদহে সৃজনী বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে এবং রাজধানীতে প্রায় শ-খানেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকার পরও পূর্বাচলে সাউথ পয়েন্ট ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

এ বিষয়ে শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সক্ষমতা না বাড়িয়ে এবং প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সঠিকভাবে যাচাই না করে নতুন নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়ায় বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় গুণগত উচ্চশিক্ষা দিতে পারছে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিদ্যমান পরিস্থিতি তদারকি করা এবং চাহিদার বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা হওয়া দরকার। নইলে একসময় কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘বোঝা’ হয়ে দাঁড়াবে, যার লক্ষণ এখনই দেখা যাচ্ছে।

মান নিয়ন্ত্রণ না করে গণহারে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে তা উচ্চশিক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল। এসব প্রতিষ্ঠান জ্ঞান সৃষ্টির পরিবর্তে বেকার তৈরির কারখানায় পরিণত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বলছে, অনেক সময় কমিশনের মতামতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নানা ফাঁকফোকর দিয়ে নামসর্বস্ব এসব বিশ্ববিদ্যালয় অনুমতি পাচ্ছে।

ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, এমনও অতীতে হয়েছে, আমরা বলেছি এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের দরকার নেই। কিন্তু পরে দেখা গেছে, যেভাবেই হোক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি তারা নিয়েছে। যদিও মানহীন এসব বিশ্ববিদ্যালয় একসময় হারিয়ে যাবে দাবি করে ফেরদৌস জামান বলেন, আমরা দেখেছি যারা মান ধরে রাখতে পারেনি তারা কিন্তু হারিয়ে গেছে। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বর্তমানে আছে, এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও একসময় ছিটকে পড়বে।

জানা গেছে, দেশে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ১১ (জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সহ)। তখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত আসন না থাকায় উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের একাংশ বিদেশে চলে যেত। এই প্রেক্ষাপটে তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য আইন করে ১৯৯২ সাল থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া শুরু হয়। বিগত তিন দশকে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে ১১৩টি। শুরুতে গ্রহণযোগ্য ও শিক্ষানুরাগী উদ্যোক্তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে রাজনৈতিক বিবেচনা ও তদবিরের ভিত্তিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়ার প্রবণতা শুরু হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০১২ সালের পর অনুমোদন পাওয়া ২০টির বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের অনেকে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আরো বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক উদ্যোক্তা শিক্ষা নয়, ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। ফলে তারা বড় শহরে বিশ্ববিদ্যালয় করতে চান। এ জন্যই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে এলাকাভেদে ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close