আমিনুল ইসলাম হুসাইনী

  ৩১ মার্চ, ২০২৪

বেজোড় রাতে ‘কদর’ তালাশ করি

আজ ২০ রমজান। একুশতম রাত। সম্ভাব্য ‘লাইলাতুল কদর’। যে রাত হাজার মাসের চেয়ে দামি। এই এক রাতে ইবাদত-বন্দেগি করলে আল্লাহ এক হাজার মাসের ইবাদত-বন্দেগির সওয়াব দেবেন। আসলে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বড় ভালোবাসেন। চাঁদের চেয়ে অধিক সৌন্দর্যে ফুলের চেয়েও অধিক শোভায় তিনি যে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, সে মানুষ জাহান্নামের আগুনে পুড়ে ছাই হোক, তা কি তিনি চাইতে পারেন? তিনি কখনোই এমনটি চান না। সে জন্য তিনি এমন কিছু বিশেষ সময় বরাদ্দ করেছেন, যে সময়ে বান্দা ক্ষমা চাইলে, তার পাহাড়সম গুনাহখাতাও মাফ করে দেবেন। লাইলাতুল কদর তেমনই এক মহিমান্বিত রাত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘লাইলাতুল কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ (সুরা কদর, আয়াত : ৩)

এ রাতে অঝোরধারায় বর্ষিত হয় আল্লাহর অপার রহমত। শান্তির পতাকাবাহী অগণন ফেরেশতা পৃথিবীতে নেমে আসেন রহমতের পেয়ালা নিয়ে। লাইলাতুল কদর এমনই মহিমান্বিত রাত, যে রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। পবিত্র কোরআনেরই একটি সুরার নাম রয়েছে সুরা কদর। তাফসিরের কিতাবে এ সুরার পটভূমিকায় বলা হয়েছে, একবার মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) কয়েকজন সাহাবিদের কাছে বনি ইসরাইলের কতিপয় লোক সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন যে, তারা দীর্ঘ হায়াত লাভ করার কারণে অধিক ইবাদত করেছেন। দীর্ঘ এ হায়াতে আল্লাহ নাখোশ হন, এমন একটি কাজও তারা করেননি।

নবী (সা.)-এর পবিত্র জবান থেকে এ কথা শোনার পর উপস্থিত সাহাবিরা এ বলে আফসোস করেন, আমরাও যদি তাদের মতো দীর্ঘ হায়াত পেতাম, তাহলে ইবাদত-বন্দেগিতে তাদের সঙ্গে এগিয়ে থাকতাম।

সাহাবিদের এ আফসোস লাঘবের জন্যই আল্লাহ তায়ালা জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে খুশির সংবাদ দিয়ে সুরা কদর নাজিল করেন। সেই খুশির সংবাদটি হলো- ‘লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর’। অর্থাৎ হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ এ রাত। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যদি তোমরা কবরকে আলোকময় পেতে চাও, তাহলে লাইলাতুল কদরে জাগ্রত থাক।’ অন্য এক হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, ‘যদি কেউ ইমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে লাইলাতুল কদর ইবাদতের মাধ্যমে কাটায়, তাহলে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৭২)

মহিমান্বিত এ রাত রমজানের শেষ দশকের কোনো এক বেজোড় রাতে হবে। হাদিসে এ বেজোড় রাতগুলোয় কদর তালাশের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশ রাতের বেজোড় রাতগুলোয় লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’ (বুখারি, হাদিস : ১০১৭)

একটি মাত্র রাত, হাজার মাসের চেয়েও দামি। যা ৮৩ বছর চার মাসের সমান। এমন একটি রাতের জন্যে মাত্র পাঁচটি রাত জাগতে পারব না? এ পাঁচটি রাত ইবাদত বন্দেগীর দ্বারা অতিবাহিত করতে পারলেই হাজার মাস ইবাদত-বন্দেগির সওয়াব পেয়ে যাব। দুনিয়াবী কত কাজে আমরা রাত জাগি। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে, ফেসবুকে চ্যাট করে বহু রাত কাটিয়ে দিই আমরা। অথচ কদরের এমন ফজিলত জানার পরও মাত্র পাঁচটি রাত জাগতে পারি না। এ পাঁচটি রাতে ইবাদত করতে চাই না। আমরা যদি নিয়ত সহিহ করে এ পাঁচটি রাত জাগি, তাহলে প্রতিটি রাতের বিনিময়েই আল্লাহ কদরের সওয়াব দিতে পারেন। নবী (সা.) তো বলেছেনই, ‘মানুষ যা নিয়ত করে, রব তাকে সেই অনুযায়ী প্রতিদান দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস ১)

লেখক : প্রাবন্ধিক, খতিব কসবা মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া [email protected]

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
লাইলাতুল কদর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close