সংসদ প্রতিবেদক

  ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধার ৬১ হাজার আবেদন অনিষ্পন্ন, বছরে ঘাটতি ৫৬০ কোটি টাকা

ছবি : সংগৃহীত

বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের (এমপিওভুক্ত) অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধার ৬১ হাজারের বেশি আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। প্রয়োজনীয় বরাদ্দের অভাবে ওই সকল আবেদন নিষ্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে বছরে ঘাটতি ৫৬০ কোটি টাকা টাকার বেশি। প্রতি বছরই এ ঘাটতি বাড়ছে। ফলে অবসর সুবিধার জন্য বছরের পর বছর শিক্ষকদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় আবেদন নিষ্পত্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংসদীয় কমিটির সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পূর্ববর্তী বৈঠকের আলোচনার ধারাবাহিকতায় বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার, মো. মোতাহার হোসেন, আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মো. আবদুল মজিদ, আহমদ হোসেন, মো. বিপ্লব হাসান ও মো. আজিজুল ইসলাম এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, কমিটির বৈঠকে কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধার অনিষ্পন্ন আবেদন নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধা পেতে বছরে গড়ে ১৬ হাজার ৮শ আবেদন জমা পড়ে। এসব আবেদন নিষ্পত্তির জন্য বছরে তাদের প্রয়োজন ৭২০ কোটি। কিন্তু এমপিও থেকে ৪ শতাংশ হারে কর্তন থেকে বছরে ৫৭৬ কোটি টাকা ও ব্যাংক সুদ থেকে বছরে ২৪ কোটিসহ বছরে তাদের আয় ৬০০ কোটি টাকা। বছরে তাদের ঘাটতি থাকছে ১২০ কোটি। অবসর সুবিধা বোর্ডের ২০২০ সালের আগস্ট থেকে মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত ৩৪ হাজার আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।

এ খাতে বছরে প্রায় ১০ হাজার ৮শ আবেদন পড়ে। এগুলো নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজন এক হাজার ৩২০ কোটি। এ খাতে শিক্ষকদের বেতন থেকে কর্তন থেকে বছরে আয় ৮৪০ কোটি ও ব্যাংক এফডিআর থেকে আয় ৩৬ কোটি। এ খাতে বছরে ঘাটতি থাকে ৪৪৪ কোটি টাকা। বর্তমানে সরকারি কর্মচরীদের মতো শিক্ষকদেরও বার্ষিক বেতন প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে এ দুটি খাতে ঘাটতি আরো বাড়ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

কমিটি সূত্র জানায়, এরআগে গত ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রথম বৈঠকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধার আবেদন সময়মত নিষ্পত্তি না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে শিক্ষা সচিব সোলায়মান খান নিজেই প্রসঙ্গটি তোলেন। সেখানে সচিব বলেন, বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসর সুবিধা খাতে বছরে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তার চেয়ে বরাদ্দ অনেক কম হওয়ায় প্রতি বছর ঘাটতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে একজন শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন পার হলেও তার আবেদন নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। বর্তমানে অর্থভাবে প্রায় ৩৪ হাজার আবেদন অনিষ্পন্ন অবস্থায় আছে। এগুলো নিষ্পত্তি করতে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন। কল্যাণ ট্রাস্টে অনিষ্পন্ন ২৭ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রায় ২ হাজার ৪শ কোটি টাকা প্রয়োজন বলেও তিনি জানান।

বিষয়টি নিয়ে কমিটির সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বৈঠকে বলেন, চাকরি শেষে যে অবসর সুবিধা পাওয়ার কথা সেটাও যথাসময়ে না পাওয়ায় তারা জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হন। এমনকি শেষ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে অর্থাভাবে চিকিৎসা নিতে না পরায় অবসর সুবিধা ভোগ না করেই অনেকে মারা যান। তিনি এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি দেশে শিক্ষার পরিবেশ নষ্টের মূলকারণ হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্য, অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং অনৈতিক লোভলালসার কথা তুলে ধরেন।

কমিটির সদস্য আহমদ হোসেন তার বক্তব্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবসর সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা দ্রুত নিরসণ করার প্রস্তাব করেন।

বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী জানান, বর্তমানে দেশে ২৯ হাজার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (এমপিওভুক্ত) রয়েছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি গঠন, নিয়োগ, ছাত্র ভর্তি, দলাদলি, জমিজমাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের ভেতর থেকে বেশিরভাগ মামলা মোকাদ্দমা হয়। বর্তমানে প্রায় ১২ হাজারের বেশি মামলা চলমান আছে। যে কারণে এই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

বৈঠকে বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধা প্রাপ্তি সংক্রান্ত অনিষ্পন্ন আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির পাশাপাশি কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়টি স্থায়ী সমাধান করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এবিষয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ ছাড়া যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের শূন্য ও সৃষ্ট পদ খালি রয়েছে তা দ্রুত পূরণ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অবসর সুবিধা,বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close