উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪

পাহাড়ে র‌্যাবের অভিযান

অস্ত্র ও মাইনসহ আরসার তিন সদস্য গ্রেপ্তার

দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, মাইন, মাইন তৈরির বিপুল সরঞ্জাম ও ১০০ রাউন্ড গুলি জব্দসহ তিন আরসা সদস্য গ্রেপ্তার। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারে উখিয়ার দুর্গম পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে দেশি-বিদেশি ২২টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৪টি মাইন, মাইন তৈরির বিপুল সরঞ্জাম ও ১০০ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরসার শীর্ষ গান গ্রুপ কমান্ডার উসমানসহ তিনজনকে।

র‌্যাবের দাবি, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্য। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত উখিয়ার ২০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পশ্চিমে লাল পাহাড়ে এ অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন, বালুখালী ১৭ নম্বর ক্যাম্পের ৮৩/এইচ-ব্লকের উসমান প্রকাশ মগবাগি উসমান (৩০) ১৭ নম্বর ক্যাম্পের ৭৪/এইচ-ব্লকের আবদুল সালামের ছেলে মো. নেছার (৩৩) ও ১৮ নম্বর ক্যাম্পের ৪৪/জি-ব্লকের কামাল হোসেনের ছেলে ইমাম হোসেন (২২)। তারা সবাই আরসার শীর্ষ গান গ্রুপের সক্রিয় সদস্য।

র‌্যাব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’অ্যান্ড মিডিয়া) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী জানান, লাল পাহাড়ে আরসা সন্ত্রাসীদের অবস্থানের খবর পেয়ে অভিযানে নামে র‌্যাব। পুরো পাহাড় ঘিরে ফেলা হয়। কিন্তু র‌্যাবের অবস্থান টের পেয়ে পালিয়ে যায় অনেকেই। কিন্তু ধাওয়া দিয়ে ধরা হয় উসমান, নেছার ও ইমামকে। আর আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয় দেশি-বিদেশি ২২টি অস্ত্র, ১০০ রাউন্ড গুলি, চারটি মাইন, মাইন তৈরির সরঞ্জাম ও গোলাবারুদ। তিনি বলেন, আরসার শীর্ষ গান কমান্ডার উসমান, নেছারের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি সদস্য নিয়ে পাঁচ শতাধিক মাইন বা বোমা তৈরি করেছেন গুলি চালাতে পারদর্শী ইমাম। তিনজনই দিনে অবস্থান করে লাল পাহাড়ের আস্তানায়। যেখানে ছিল দেশি-বিদেশি অস্ত্র, গুলি ও মাইন; যা নিয়ে রাতে ক্যাম্পে হামলা করে বলে স্বীকার করেছেন তারা।

উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। ছবি: সংগৃহীত

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী মাস্টার খালেদের মাধ্যমে উসমান আরসায় যোগ দেয়। আরসার সাবেক গান গ্রুপ কমান্ডার সমিউদ্দিন গ্রেপ্তারের পরই বাংলাদেশে অবস্থানরত শীর্ষ কমান্ডার মাস্টার করিম উল্লাহ উসমানকে গান গ্রুপের কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেন। উসমান প্রতিবেশী দেশে বসবাসরত অবস্থায় সেদেশের সেনাবাহিনীর সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু রাখাইন প্রদেশের মগগোষ্ঠী ও সেনাবাহিনী তার বাব-মা এবং পরিবারের ওপর নির্যাতন করলে তার প্রতিকার না পাওয়ায় তিনি সোর্স থেকে বেরিয়ে আসেন। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে উন্নতমানের অস্ত্র চুরি করে পালিয়ে আসেন এবং পরবর্তী সময়ে মাস্টার খালেদ তার কাছ থেকে অস্ত্রটি নিয়ে নেন। ওসমান মাস্টার খালেদের সম্পর্কে তালতো ভাই (বিয়াই) হয়। আরসায় যোগদান করে অস্ত্র চালনায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। এরপর থেকেই ওস্তাদ খালেদের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে আরসার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। ২০২২ সালে কোনারপাড়া জিরোলাইনের অপারেশনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। জিরোলাইন ক্যাম্পে আগুন লেগে ক্যাম্প বিলুপ্ত হওয়ার পর স্ত্রী পরিবারসহ ক্যাম্প-১৭-তে চলে আসেন।

আরো জানা যায়, উসমান ক্যাম্পে বিদ্যমান ১০টি গান গ্রুপের শীর্ষ কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। উসমানের অধীনে মজুদ থাকা অস্ত্র ও গোলাবারুদ রাত্রীবেলায় গহিন পাহাড়ি এলাকা থেকে ক্যাম্পে প্রবেশ করাত এবং তাদের টার্গেট অনুযায়ী ক্যাম্প অভ্যন্তরে অপরাধ কর্মকাণ্ড শেষে অস্ত্রগুলো আবার ক্যাম্প হতে পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যেত। উসমান ক্যাম্প-১৭-এর আবদুল্লাহ এবং কাছিমকে নিজ হাতে গুলি করে হত্যা করেছেন বলে স্বীকার করেন। এ ছাড়া আতু নামে একজনকে দোকান থেকে ডেকে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায়ও উসমানের সংশ্লিষ্টতা ছিল। র‌্যাবের এ অধিনায়ক বলেন, আরসা প্রধান আতাউল্লাহর নির্দেশে ক্যাম্পে গড়ে তোলা হয় ১২টি গান গ্রুপ। যারা ক্যাম্পে নাশকতা করছে। এ বিষয়ে মামলা করে তাদের উখিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। গত বছর উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলো থেকে সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার ৮৩ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

পিডিএস/আরডি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কক্সবাজার,উখিয়া
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close