ফোঁড়া কাদের বেশি হয়?
ত্বকে ফোঁড়া বা বিষফোঁড়া হলে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। দেখতেও বেশ বাজে লাগে। কিন্তু কেন এমন হয় জানেন? চিকিৎসাশাস্ত্রে ফোঁড়া দুধরনের। একটি সাধারণ ফোঁড়া অন্যটি বিষফোঁড়া বা কার্বাঙ্কল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত স্টাফালোলোকোক্কাস ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রামিত স্থানেই ফোঁড়ার উপস্থিতি দেখা দেয়।
ফোঁড়া বা বিষফোঁড়া
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফোঁড়া ত্বকের এক কিংবা একাধিক রোমকূপকে কেন্দ্র করেই হয়ে থাকে। ত্বকে একধরনের ব্যাকটেরিয়া (স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিউস) জন্ম নিলে ফোঁড়ার সমস্যা তৈরি হয়।
এ ব্যাকটেরিয়া ত্বকের রোমকূপের ছিদ্র দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। ত্বকের ভেতরে তৈরি করে ইনফেকশন। এতে শরীরে মৃত কোষ ও ইনফেকশন কোষ মিশে পুঁজ তৈরি হয়ে ‘সোয়েলিং’ শুরু হয়।
একসময় ভেতরের সেই পুঁজ ত্বকের ওপরে উঠে আসে। আর তখনই আমরা ত্বকের ওপরে ফোঁড়ার অস্তিত্ব টের পাই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ত্বকের ওপরে একটি ফোঁড়ার অস্তিত্ব মানেই ত্বকের ভেতরে একাধিক ফোঁড়ার অস্তিত্ব রয়েছে।
ফোঁড়া কেন হয়?একটি ফোঁড়ার ছোট ছোট মুখ থাকে। সাধারণত কোমর, ঘাড়ে, পিঠে ও কনুইতে বেশি হতে দেখা যায়। তবে ঘাম বেশি হয় এমন স্থানেও ফোঁড়া বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং ফোঁড়া রয়েছে এমন ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেও ত্বকে বাসা বাঁধতে পারে ছোট আকারের এ বিষফোঁড়া।
চিকিৎসকরা বলছেন, কয়েক দিনের যন্ত্রণার পর ফোঁড়া নিজে থেকেই সেরে যেতে পারে। তবে নিজে থেকে ভালো না হলে ফোঁড়ার এ সমস্যা গুরুতর হয়ে উঠতে পারে।
তাই ত্বকে ফোঁড়া বা কার্বাঙ্কল যা-ই হোক না কেন, সব সময়ই প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতার। প্রয়োজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শেরও। আসুন জেনে নিই, ত্বকে কখন ফোঁড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে তার কারণ।ফোঁড়া কাদের হওয়ার ঝুঁকি বেশি?
মূলত, যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল, ফোঁড়া তাদেরই বেশি হয়ে থাকে। আবার কোনো সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের দীর্ঘ বা জটিল রোগভোগের পর কিংবা শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলেও ফোঁড়া হওয়ার শঙ্কা থাকে।
উপসর্গ
ব্যাকটেরিয়া ত্বকের কোনো অংশে ইনফেকশন তৈরি করেছে বা করছে, তা আপনি ত্বকের ওপর থেকে প্রথমে বুঝতে পারবেন না। তাই খেয়াল রাখতে হবে বিশেষ একটি দিক।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শরীরে কোনো নির্দিষ্ট অংশের ত্বকের উপরিভাগ কিছুটা শক্ত হয়ে যায় এবং জায়গাটি টিপলে ব্যথা লাগে। এমন অনুভব হলে ওই জায়গাতেই ফোঁড়া বা কার্বাঙ্কল হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। করণীয়
ফোঁড়ার সমস্যা বেশ কষ্টকর। এ সমস্যা টানা কয়েক দিন আপনাকে ভোগাবে। ফোঁড়ার আকার বড় হলে জ্বরও আসতে পারে। তবে এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মেনে চলুন বিশেষ কয়েকটি টিপস–
১। ফোঁড়া হওয়ার জায়গাটি খোলা রাখার চেষ্টা করুন।
২। ফোঁড়া হওয়ার জায়গাটি খোলা রাখতে না পারলে পাতলা এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরুন।
৩। ত্বকের এক অংশ থেকে অন্য অংশে ফোঁড়া যেন ছড়িয়ে যেতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন।
৪। পুষ্টিকর সুষম খাদ্য ও তিতা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। বাইরের তেল চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
৫। অনেকের ফোঁড়া বা ফুসকুড়ি খোঁটাখুঁটির অভ্যেস রয়েছে। এটা একেবারেই করা যাবে না। কেননা, এতে ব্যাকটেরিয়া এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের আক্রান্ত করতে পারে।
৬। অনেকে জোর করে ফোড়ার পুঁজ বের করার চেষ্টা করেন। এটি করবেন না। কেননা, এতে ত্বকে গভীর ক্ষত তৈরি হতে পারে।
৭। ফোঁড়া দ্রুত সারিয়ে তোলার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে এন্টিসেপটিক ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
৮। ত্বকের সুস্থতায় এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
বিশেষ পরিস্থিতিতে ফোঁড়া রক্তের সঙ্গে মিশে গিয়ে হৃদ্যন্ত্র, ফুসফুস এবং শরীরের ‘সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম’-এর ক্ষতি করতে পারে। তাই কয়েক দিনের মধ্যে যদি ফোঁড়া না সারে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।