গোসলের সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখলে ত্বক হবে সুন্দর
প্রতিদিন গোসল করা সবারই দৈনন্দিন অভ্যাস। তবে জানেন কি, সপ্তাহে মাত্র কয়েকবার গোসল করলেই আপনি থাকবেন সুস্থ। প্রতিদিন গোসল করার প্রয়োজনীয়তা নেই- এমনই মত বিশেষজ্ঞদের।
তবে আপনি যখনই ঘামবেন; তখনই গোসল করা জরুরি। গোসলের মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত তৈলাক্তভাব দূর হওয়ার পাশাপাশি শুষ্কতা, চুলকানিসহ ত্বকে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া দূর হয়। এমনকি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে গোসলের মাধ্যমে।
প্রতিদিন গোসল করার ভুল ধারণার মতো আরও বেশ কয়েকটি বিষয়ে আছে, যেগুলো অনেকেই এড়িয়ে যান। যেমন- গোসলের জন্য সঠিক সাবান নির্বাচন, ঠান্ডা বা গরম পানির ব্যবহার, ভুল তোয়ালে কিংবা শরীর মাজুনি পরিষ্কার না রাখা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে অনেকেই সচেতন থাকি না। চর্মরোগের কারণ হতে পারে গোসলের অনুষঙ্গ অপরিষ্কার রাখা।
চলুন তবে জেনে নিন গোসলে যেসব ভুল সবাই কমবেশি করে থাকেন-
প্রথমেই আসা যাক, গোসলের জন্য কোন সাবান ব্যবহার করা উচিত? অবশ্যই অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল সাবান। এই ধরনের সাবান শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মুহূর্তেই ধ্বংস করে দেয়। অন্যান্য সাবান ত্বকে ব্যবহার করলে শুষ্ক হয়ে যায়। তবে মাইল্ড সাবানও ব্যবহার করতে পারেন। এটিও ত্বকের জন্য ভালো, বিশেষ করে সংবেদনশীল ত্বকের জন্য। আপনার যদি একজিমা বা ত্বকের কোনো সমস্যা থাকে, তবে সুবাসযুক্ত সাবান ব্যবহার করবেন না।
শরীরের বেশ কিছু স্থান আছে, যেখানে সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়। যেমন-বগল, হাত, পায়ের পাতা ও মুখে। কারণ শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় এই স্থানগুলো বেশি সংবেদনশীল। তাই এসব স্থানে সাবান ব্যবহার করলে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়াও নিম্নাঙ্গে সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়। গোসলের পর শরীর মোছার জন্য সবাই তোয়ালে বা গামছা ব্যবহার করে থাকেন। সঠিকভাবে পরিষ্কারের অভাবে তোয়ালেতে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও ভাইরাসসহ বিভিন্ন জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে। জীবাণুযুক্ত তোয়ালে নিয়মিত ব্যবহারের মাধ্যমে চর্মরোগ পর্যন্ত হতে পারে। এজন্য প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার করে তোয়ালে ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। ধুয়ে অবশ্যই রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
শুধু তোয়ালে পরিষ্কার রাখলেই হবে না, সঙ্গে শরীর মাজুনির কথা ভুলে গেলে চলবে না! এটি সবাই ব্যবহারের পর বাথরুমেই রাখেন! আর বাথরুম হলো জীবাণুর আঁতুরঘর। তাই শরীর মাজুনি ব্যবহারের পর ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার কোনো স্থানে ঝুলিয়ে রেখে শুকিয়ে নিতে হবে। ৩-৪ সপ্তাহ অন্তর শরীর মাজুনি পরিবর্তন করতে হবে। যদি আপনার শররি মাজুনিটি প্লাস্টিকের হয়ে থাকে, তাহলে ২ মাস পরপর পরিবর্তন করতে হবে।
সাধারণত শীতকালে সবাই কমবেশি গরম পানিতে গোসল করে থাকেন। তবে জানেন কি, শুধু শীতকাল নয় গ্রীষ্মকালেও যদি আপনি গরম পানি দিয়ে গোসল করেন; তাহলে আপনার ত্বক বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাবে। বিশেষ করে যাদের ত্বকে শুষ্কতা, চুলকানি, একজিমা বা সোরিয়াসিস আছে; তারা গরম পানি দিয়ে গোসলের মাধ্যমে উপকৃত হবেন। ৫-১০ মিনিট হট বাথ নিলে বিভিন্ন ত্বকের রোগের প্রকোপ কমে।
প্রতিদিন যেমন গোসলের প্রয়োজন নেই : ঠিক তেমনই নিয়মিত চুল পরিষ্কার করারও প্রয়োজন নেই। যদি আপনার চুল অতিরিক্ত তৈলাক্ত হয় বা শরীরচর্চার পর মাথার ত্বক ঘামে কিংবা নোংরা হয়; তাহলেই কেবল চুল পরিষ্কার করতে পারেন। মাথার ত্বকে তৈলাক্তভাব না আসলে চুলে শ্যাম্পু করার দরকার নেই! বাথরুমে একটি গ্র্যাব বার থাকা খুবই জরুরি। অনেক সময় বাথরুমে অনেকেই পড়ে যান! এমন দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে বাথরুমে একটি গ্র্যাব বার অবশ্যই লাগাবেন। জানেন কি, যুক্তরাষ্ট্রে এক হাজারের মধ্যে ১০ জন মানুষ বাথরুমে পড়ে গুরুতর আহত হয়ে থাকেন। এজন্য বাথরুমের অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে একটি গ্র্যাব বার লাগানো আবশ্যক।
গোসলের সময় ঝরনা সবাই ব্যবহার করে থাকেন! তবে এর এর মাথাটি কখনো পরিষ্কার করার কথা ভেবেছেন? ঝরনার মাথায় জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে। তাই যখন আপনি পানি ছাড়বেন, ওই জীবাণুগুলো আপনার শরীরেই পড়বে। গরম পানি দিয়ে নিয়মিত মুছে, শাওয়ারহেড পরিষ্কার রাখবেন।
গোসলের পরপরই ময়েশ্চারাইজার, ক্রিম বা লোশন ব্যবহার না করলে ত্বক হয়ে পড়ে রুক্ষ ও শুষ্ক। গোসলের পর তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে নেয়ার পরই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
শরীরের কোথাও কেটে গেলে বা ক্ষত থাকলে, ওই স্থানে ব্যান্ডেজ দিয়ে মুড়ে তবে গোসল করা উচিত।
বাথরুমে এক্সহস্ট ফ্যান না থাকলে দ্রুত লাগানোর ব্যবহার করুন। বাথরুম বদ্ধ স্থান হওয়ার কারণে, সেখানে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু বাসা বাঁধে। যদি আপনার বাথরুমে এক্সহস্ট ফ্যান থাকে; তাহলে ভেতরের বাতাস বাইরে বের করার মাধ্যমে বাথরুম জীবাণুমুক্ত থাকবে।