পেট ব্যথা কেন হয়?
পেট ব্যথা এমন এক সমস্যা যা নিয়ে আমরা খুব একটা চিন্তিত হই না। মাঝে মাঝেই ভুগতে হয় বলে পেট এই ব্যথা আমাদের কাছে স্বাভাবিক হয়ে গেছে। অসংখ্য কারণে পেটে ব্যথা হতে পারে। সবচেয়ে ঘন ঘন যেসব কারণে হয়, তার মধ্যে গ্যাসের ব্যথা, বদহজম এবং পেশীর টান রয়েছে। এগুলো সাধারণত মারাত্মক নয়। কিছু পেট ব্যথা অস্বাভাবিক হতে পারে। কোনো ব্যথাই কারণ ছাড়া ঘটে না। তাই পেট ব্যথার মাধ্যমেও শরীর আপনাকে সতর্ক বার্তা দিতে পারে। জেনে নিন কী কারণে পেট ব্যথা হতে পারে-
১. ফুড পয়জনিং
কোনো খাবার খাওয়ার পরে আপনার পেটের ভেতর বিদ্রোহ শুরু হতে পারে। ফুড পয়জনিং-এর কারণে এমনটা হয়। এ কারণে বমি বমি ভাব কিংবা বমি, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা এবং এমনকী জ্বরও চলে আসতে পারে। ফুড পয়জনিং দেখা দিলে তা সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। তবে এসময় পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেলে হাইড্রেটেড থাকা অপরিহার্য। আপনার শরীর এভাবে সতর্কবার্তা দিলে সচেতন হতে হবে।
২. ফ্যাটি লিভার
নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) নীরবে লিভারে অনুপ্রবেশ করে, বিশেষ করে যারা অতিরিক্ত ওজন রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এটি ঝুঁকিপূর্ণ। প্রাথমিক পর্যায়ে এটি তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ করে না, ফলে এটি সনাক্তকরণের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। যদি চেক না করা হয় তবে এটি লিভারের মারাত্মক ক্ষতির দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। পেটে ব্যথা, ক্লান্তি, ওজন হ্রাস এবং দুর্বলতার মতো সূক্ষ্ম সতর্কতা লক্ষণগুলো খেয়াল করা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এই সমস্যার কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই, তবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
৩. অ্যাপেন্ডিসাইটিস
অ্যাপেনডিসাইটিস পেটের মাঝখানে সংক্ষিপ্ত এবং আকস্মিক ব্যথা হিসাবে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে তীব্র হয়, বেশিরভাগ সময় এটি নিচের ডানদিকে স্থির হয়। কাশি দিলে বা হাঁটলে এটি আরও খারাপ হতে পারে। আপনি যদি অ্যাপেনডিসাইটিস সন্দেহ করেন, দ্রুত পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ - প্রয়োজনে অস্ত্রোপচারও করা লাগতে পারে। তাই এ ধরনের পেট ব্যথা টের পেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৪. ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS)
পেটে ব্যথা, পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য - এগুলো আইবিএস- এর প্রধান লক্ষণ। আপনার খাবারের দিকে নজর রাখুন, সক্রিয় থাকুন এবং এই সমস্যা কমাতে প্রোবায়োটিক খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। এ ধরনের লক্ষণ দেখলে বুঝবেন আপনার শরীর পরিপাকতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটু বাড়তি মনোযোগ দিতে বলছে। কোন খাবারে সমস্যা হচ্ছে সেগুলো চিহ্নিত করে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। যেসব খাবার হজমে সাহায্য করে সেগুলো নিয়মিত খাবেন।
৫. কিডনিতে পাথর
কিডনিতে ছোট ছোট পাথর হলে তা আপনার অগোচরেই বেরিয়ে আসতে পারে, কিন্তু বড় পাথরগুলো তীব্র ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যা এড়াতে হাইড্রেটেড থাকুন। মদ্যপান করা বা প্রস্রাব চেপে রাখার অভ্যাস থাকলে তা বাদ দিন। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। তরল খাবার খান। কিডনিতে পাথর আছে এমন সন্দেহ হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৬. পিত্তথলিতে পাথর
পিত্তথলিতে পাথর হলে শুরুতে টের পাওয়া যায় না। এরপর হঠাৎ একদিন মারাত্মক ব্যথার সৃষ্টি হয়। পেটে তীব্র ব্যথা, জন্ডিস বা জ্বর পিত্তথলির জটিলতার ইঙ্গিত দিতে পারে। এ ধরনের সমস্যা দেখা দেওয়ার অর্থ হলো আপনার শরীর আপনাকে আপনার গলব্লাডারের দিকে নজর দিতে বলছে। গলব্লাডার ছাড়াই স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব। তবে সুস্থ থাকার জন্য আপনার প্রচেষ্টা জরুরি।