reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

৭৫ বছরের ইতিহাসে বৃষ্টির রেকর্ড

দুবাই বিমানবন্দরে চরম বিশৃঙ্খলা, দুর্বিসহ অবস্থা

ছবি : সংগৃহীত

ভারী বৃষ্টি ও তীব্র জলাবদ্ধতার কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক শহরগুলোর অন্যতম দুবাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত দুবাই বিমানবন্দর যেভাবে পানিতে তলিয়ে গেছে সেটি দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। শহরটির বহু বাড়ি ও শপিংমল হাঁটু পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে। দুবাইয়ের মতো শহরে এ ধরনের চিত্র অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। দুবাই বিমানবন্দর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাতিল করতে হয়েছে শত শত ফ্লাইট। বিমানবন্দরের ভেতরে চরম এক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা বিমানবন্দরের পরে দুবাই বিমানবন্দরই হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। গত বছর এই বিমানবন্দরটি ব্যবহার করেছে আট কোটি যাত্রী। বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে বিমানবন্দরটি প্লাবিত হওয়ায় দুবাইগামী ও দুবাই ছেড়ে আসা ফ্লাইট কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। যদিও বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুর থেকে সীমিত আকারে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

ঢাকার বাসিন্দা প্রসূন রায় গত তিন ধরে দুবাই বিমানবন্দরে আটকে আছেন। কবে ঢাকায় আসতে পারবেন সেটি নিয়ে অনিশ্চয়তা ভর করেছে তার মধ্যে। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ সময় বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত আটবার তার ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ফ্লাইট কখন ছেড়ে যাবে সেটির কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না।

দুবাই থেকে মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ফ্লাইট ছিল প্রসূন রায়ের। কিন্তু তিনি বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ফ্লাইটে উঠতে পারেননি। মঙ্গলবার দুপুরে বিমানবন্দরে যাবার পর তিনি ১৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন। ফ্লাইটের কোনো নিশ্চয়তা না পেয়ে এন্ট্রি ভিসা নিয়ে তিনি শহরের ভেতরে গেছেন। কারণ, এয়ারপোর্টের ভেতরে কোনো হোটেলে কক্ষ খালি নেই।

তার বর্ণনা অনুযায়ী, হাজার হাজার যাত্রী দুবাই এয়ারপোর্টের ভেতরে আটকা পড়ে আছে। অনেকে স্লোগান দিচ্ছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ রাত-দিন কাজ করেও কূলকিনারা করতে পারছে না।

ট্রানজিট যাত্রী হিসেবে যারা বুধবার দুবাইতে অবতরণ করেছেন তাদের অভিজ্ঞতা ছিল দুর্বিষহ। অবতরণ করার জন্য বিমানগুলো আকাশে চক্কর দিলেও অবতরণের অনুমতি পাচ্ছিল না। বিমানবন্দরের বাইরে শত শত গাড়ি বিকল অবস্থায় পড়ে ছিল।

বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় রেজাউল করিম নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, অনেকবার ফ্লাইট বাতিল হবার পর শেষ পর্যন্ত তিনি ঢাকা থেকে দুবাই পৌঁছেছেন। ঢাকায় তিনি ৩৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর দুবাইয়ের উদ্দেশে প্লেন ছেড়ে যায়।

তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী আকিব ইরফানের। তার স্ত্রী দুবাই থেকে ঢাকা আসার কথা ছিল। এক দিন অপেক্ষা করার পর শেষ পর্যন্ত তিনি ঢাকার উদ্দেশে বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইটে উঠতে পেরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ফ্লাইট কনফার্ম না হলে কাউকে বিমানবন্দরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, ভেতরে যাত্রীদের এতো বেশি চাপ তৈরি হয়েছে যে আর যাত্রী ভেতরে নেওয়া সম্ভব ছিল না।

দুবাই বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন ব্রিটিশ টুরিস্ট অ্যান উইং, তার স্বামী ও তিন সন্তান। তারা লন্ডনের হিথ্রোতে যাবার জন্য অপেক্ষা করছেন। “এটা খুব ভয়াবহ পরিস্থিতি। আমদের পশুর মতো করে রাখা হয়েছে। এটা খুবই অমানবিক,” বলছিলেন অ্যান উইং। তিনি বলছিলেন, তার পরিবারের সদস্যদের কাছে কোনো খাবার নেই।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, আটকে পড়া যাত্রীদের জন্য বিমানবন্দরে খাবার আনতে কর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন। কারণ, বিমানবন্দর অভিমুখে সবগুলো সড়ক পানিতে ডুবে গেছে।

গত ৭৫ বছরের মধ্যে দুবাইতে এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিক মশিউর রহমান বলেন, মঙ্গলবার রাত ১টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বুধবার দুপুরেও বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবারও শহরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা আছে বলে তিনি জানান। কর্তৃপক্ষ বলছে, ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬০ মিলিমিটার।

দুবাইয়ের সাংবাদিক সাইফুর রহমান বলছেন, সেখানে তীব্র জলাবদ্ধতার কারণ হচ্ছে পানি নিষ্কাশনের অপ্রতুল ব্যবস্থা। তিনি জানান, শহরের কেন্দ্রস্থলে ড্রেনেজ সিস্টেম আছে, কিন্তু এর বাইরে ড্রেনেজ সিস্টেমের অবস্থা মোটেও ভালো নয়। তিনি জানান অল্প বৃষ্টিতেও অনেক সময় বিভিন্ন জায়গায় তীব্র জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।

দুবাইয়ে ভালো ড্রেনেজ সিস্টেম গড়ে তোলার জন্য ২০২৩ সালে দেশটির সরকার প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। দেশটির সরকার বলছে, আগামী ১০০ বছরের কথা চিন্তা করে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সরকার এবং বেসরকারি খাত মিলে এই কাজ করবে।

দুবাইয়ের বাংলাদেশি ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা থাকলে এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না।

একটানা বৃষ্টি এবং তার ফলে সৃষ্ট বন্যা ও জলাবদ্ধতায় ওমানে ২০ জন মারা গেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে জীবনযাত্রা অচল হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার দুবাইতে আসা কিছু ফ্লাইট অবতরণ করতে পারলেও সার্বিকভাবে বিমানবন্দর অনেকটাই অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দরটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার এক নম্বর টার্মিনালে কিছু বিমান অবতরণ করা শুরু করেছে। কিন্তু দুবাই ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইটগুলোর আরও বিলম্ব হবে। “এটা এখনো সাংঘাতিক একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। আমার মনে হয় না কেউ তার জীবনে কখনো এ ধরনের অবস্থা দেখেছে,” জানান দুবাই বিমানবন্দরের প্রধান পল গ্রিফিথস।

বিমানবন্দরের আশপাশের সড়কগুলো যানজটে স্থবির হয়ে আছে। কারণ, হাজার হাজার মানুষ বিমানবন্দরে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close