জাককানইবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

  ১৩ মার্চ, ২০২৪

ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও নম্বর বদল

অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে ছুটি শিক্ষার্থীরা চান বহিষ্কার

ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও নম্বর বদলের (টেম্পারিং) অভিযোগ উঠেছে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক সাজন সাহা ও বিভাগীয় প্রধান রেজোয়ান আহমেদ শুভ্রর বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে শিক্ষক সাজন সাহা ও বিভাগীয় প্রধান রেজোয়ান আহমেদ শুভ্রকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া রেজোয়ান আহমেদ শুভ্রকে বিভাগীয় প্রধান থেকেও অপসারণ করা হয়।

এর আগে অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার দাবিতে বুধবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে টায়ার পুড়িয়ে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এই ইস্যুতে ১০ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন তারা।

রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র এবং একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হয়। একইসঙ্গে রেজুয়ান আহমেদ শুভকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ওই বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনি ক্ষমতাবলে ও উপাচার্য কর্তৃক পরবর্তী সিন্ডিকেটের অনুমোদনসাপেক্ষে বুধবার পূর্বাহ্ন থেকে ওই আদেশ কার্যকর হবে।

মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে মেসেজের মাধ্যমে উত্ত্যক্ত ও বিভিন্নভাবে হয়রানি করার অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম ব্যাচের একছাত্রী। শিক্ষক সাজন সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘সাজন সাহা ২০১৯ সাল থেকেই তাকে বিভিন্ন ধরনের অশোভন মেসেজ দিতেন, মধ্যরাতে চা খেতে ডাকতেন।’ এছাড়া নাম্বার টেম্পারিংয়ের অভিযোগ তুলেন ভুক্তভোগী।

বিভাগটির প্রধান রেজওয়ান আহমেদ শুভ্রর নামে অভিযোগ তুলে একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, রেজওয়ান আহমেদ শুভ্র ওই ছাত্রীকে ভালো রেজাল্টের লোভ দেখিয়ে বিভাগের দুই শিক্ষক রিমন সরকার ও ফাহমিদা সুলতানার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিতে বলেন। বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদ ও অভিযুক্ত শিক্ষকের বহিষ্কার দাবি জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে টানা ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে চলা আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষকরা মানববন্ধনে অংশ নেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, প্রক্টর কার্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত ব্যাংক ও বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে তালা দেয় এবং অভিযুক্ত শিক্ষকদ্বয়ের কুশপুত্তলিকা দাহ করে শিক্ষার্থীরা।

অভিযুক্ত শিক্ষক দুজনকে অনির্দিষ্টকালের ছুটি দিয়ে অফিস আদেশের পরও ক্যাম্পাস আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিক্ষুব্ধরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রশাসন এখনো অপরাধের ন্যায্য বিচার করেনি। অনির্দিষ্টকালের ছুটি নয় বরং শিক্ষক সাজন সাহা ও রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রর স্থায়ী বহিষ্কার চান তারা।

এর আগে ৪ মার্চ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে একই বিভাগের এক ছাত্রীসহ একাধিক নারী শিক্ষার্থীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close