জাহাঙ্গীর হোসেন,পটুয়াখালী
হারিয়ে যাচ্ছে ৫৫০ বছরের মসজিদ
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সব চেয়ে প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম নিদর্শন মজিদবাড়িয়া শাহী জামে মসজিদ। সাড়ে ৫শ বছর পূর্বে সুলতানী শাসনামলে স্থাপিত এ শাহী মসজিদটির অবস্থান পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায়। যা আজও স্মরণ করিয়ে দেয় মুসলিম স্থাপত্য ও ঐতিহ্যের কথা। আর এ মসজিদের নামানুসারে এলাকার নাম হয়েছে মসজিদবাড়িয়া। পরবর্তিতে মজিদ নামে এক ইউপি চেয়ারম্যান মসজিদবাড়িয়ার পরিবর্তে ইউনিয়নের নাম মজিদবাড়িয়া করেন বলে জানা যায়। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে বর্তমানে মসজিদটির সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। তারপরও ঐতিহাসিক এ মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত নারী পুরুষ আসেন এখানে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ইলিয়াছ শাহী বংশের এক স্বাধীন সুলতান ছিলেন রুকনদ্দিন বরবক। তিনি ১৪৪৯ সাল থেকে ১৪৭৪ সাল পর্যন্ত বৃহত্তম বাংলার শাসন কর্তা ছিলেন। তার শাসনামলের অমরকৃর্তি ১৪৬৫ সালে নির্মিত হয় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহাসিক মজিদবাড়িয়া এ শাহী মসজিদ। আর উজিয়ল খান নামে এক মিস্ত্রী মসজিদটির নির্মান কাজ করেন। মসজিদে তিনটি দৃষ্টি নন্দন কারুকার্য খচিত মেহরব, পূর্বদিকে তিনটি খিলান পথ এবং ৬ টি আটকোনার মিনার সদৃশ পিলার রয়েছে। একটি বারান্দাযুক্ত মসজিদটির পূর্ব উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দু’টি করে জানালা রয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে বর্তমানে দরজা-জানালার কপাট ও পিলারগুলোর অস্তিত্ব ধ্বংশের শেষ পর্যায় পৌছেছে। বিশাল একটি গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদটি কোন রড-সিমেন্ট ছাড়াই চুনা-সুরকি ও পোরামাটির ইট দিয়ে নির্মান করা হয়েছে। মসজিদের দেয়াল প্রায় ৭৫ইঞ্জি পুরো। আর মসজিদের ভিতরদিকে রয়েছে নানান কারুকার্য খচিত মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের প্রাচীনতম নিদর্শন। যা চোখে না দেখলে এর অকৃত্রিম সৌন্দার্য বোঝা সত্যিই অসম্ভব।
ধারণা করা হচ্ছে প্রত্যন্ত ওই এলাকায় দীর্ঘদিন জনবসতি না থাকায় মসজিদটি অব্যবহৃত হয়ে পড়ে আছে। বন-জঙ্গলে ঘিরে হয়ে যায় এক ভূতুরে এলাকা। ১৯৬০ সালে ভূমি জরিপ করতে বন-জঙ্গল পরিস্কার করা হলে মসজিদটি মানুষের নজরে আসে। সৃষ্টি হয় মানুষের মাঝে কৌতুহল। কেউ মনে করেন এটি আল্লাহর বিশেষ কুদরতে সৃষ্টি হয়েছে। আবার কেউ বলেন, এটি মাটির মধ্য থেকে আল্লাহর কুদরতে উঠছে। তবে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন সাধারণ মানুষের ঐতিহাসিক বিষয় জানা না থাকায় অন্ধ বিশ্বাসের কারনে ভ্রান্ত ধারণায় লিপ্ত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে সঠিক ইতিহাস মানুষের কাছে তুলে ধরা গেলে একদিকে যেমন দুর হবে ভ্রান্তধারণা। অন্যদিকে আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে প্রাচীন এ স্থাপত্য মুসলিম নিদর্শন। মসজিদের দক্ষিণ পাশে রয়েছে ইয়াকিন শাহ ও কালা শাহ নামে দু’টি কবর। আর সামনে রয়েছে বিশাল এক দীঘি। এ দীঘিটি মসজিদ নির্মানের সমসাময়িক সময় কাটা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ দীঘি নিয়েও রয়েছে ভ্রান্ত কল্প-কাহিনী। বর্তমানে মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে মসজিদের অনেক সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে। দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে আর অল্প দিনেই বাদবাকিও শেষ হয়ে যাবে।
তাই এলাকাবাসীর দাবী, মসজিদটি দ্রুত সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশে মুসলিম শাসনের ইতিহাস, মুসলমানদের অবদান ও ঐতিহাসিক নিদর্শন আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সরকার দৃষ্টি দিবে।
পিডিএসও/রানা