সফিউল্লাহ আনসারী, ভালুকা (ময়মনসিংহ)

  ১৪ জুলাই, ২০২০

ভালুকায় মাল্টা-লেবু চাষ, কৃষিতে নীরব বিপ্লব

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কাদিগড় জাতীয় উদ্যান সবুজেঘেরা অভয়ারণ্য। সেই অভয়ারণ্যে লেবু ও মাল্টা চাষে নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন 'প্রয়াস এগ্রো' নামের কৃষি খামার। এখানে শুধু লেবু আর মাল্টাই নয়, চাষ হচ্ছে পেঁপে, পেয়ারা, লাউ, ক্যাপ্সিকাম, হলুদ- আদা'সহ নানান সব্জি।

কৃষি নির্ভর ও সবুজেঘেরা এলাকার শিক্ষিত ছেলে মাজহারুল ইসলাম শামীম পেশায় একজন ওয়েব ইঞ্জিনিয়ার। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কর্মসংস্থান ব্যাংকের সাবেক জিএম জালাল উদ্দিন, মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির ব্যবস্থাপক মোশারফ হোসেন ও চারজন আইটি প্রকৌশলী শামিম, শরীফ, কাজল ও বাদল এবং স্থানীয় মজিবর রহমানকে নিয়ে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে নিজ গ্রাম ভালুকা উপজেলার কাদিগড়ে ১০ একর জমিতে মাল্টা ও লেবু চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তাদের ১৫ একর জমিতে 'প্রয়াস এগ্রো', ৪ একরে 'বারাকাহ এগ্রো', ও ২ একরে' মেম্বার এগ্রো অ্যান্ড নার্সারী' নামে ৩টি মাল্টা ও লেবুর বাগান রয়েছে।

১৫ একর জমিতে বারি-১ জাতের মাল্টা ও ১০ একর জমিতে সিডলেস জাতের বিচিবিহীন লেবু চাষ করছেন। শামীম জানান, দু'হাজার উনিশ সালে ১৭ শ মাল্টা গাছ থেকে আড়াই টন, ২০২০ সালে ২৫শ’ মাল্টা গাছ থেকে ১৮-২০ টন মাল্টা উত্তোলন করেছেন। এ ছাড়া ২০১৯ সালে সারে পাঁচ হাজার গাছের লেবু বিক্রি করেছেন ১২ লাখ টাকা। ২০২০ সালে এ পর্যন্ত তারা ৯ হাজার গাছ থেকে ২০ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেছেন মাত্র তিন বছরের পরিশ্রমে। মাল্টা ও লেবু চাষের পাশাপাশি মাল্টা ও লেবুর চারা বিক্রি করে টাকা আয় করছেন এই কৃষি খামারিরা।

সেপ্টেম্বর মাসে স্থানীয় বাজার ও ঢাকায় মাল্টা বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া সিডলেস লেবু সারা বছর বিক্রি হয়। লেবু বিচিহীন, গন্ধযুক্ত, সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদা প্রচুর। বাগান বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রত্যেক বছর। গাছে গাছে ঝুলছে থোকা থোকা সিডলেস লেবু ও বারি-১ জাতের মাল্টা। চারদিকে সবুজের সমারোহ। কাদিগড় গ্রাম যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে রূপ নিয়েছে। এ অঞ্চলের মাটি মাল্টা ও লেবু চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সাত বন্ধুর বাগান দেখে অনেকেই মাল্টা ও লেবু চাষে উৎসাহী হচ্ছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বাগানীরা লেবু তোলায় ব্যস্ত। মাল্টা বাগান পরিচর্যায় এলাকার বেকার নারী পুরুষকে কাজে লাগিয়ে তদারকি করছেন। লেবু নিতে আসা এক পাইকার বলেন, এখন একহাজা লেবু ৮শ' টাকায় কিনে নিচ্ছেন যেগুলো গত মাসে ১হাজার লেবু সাত হাজার টাকা করে কিনতে হতো।

কর্মসংস্থান ব্যাংকের সাবেক জিএম জালাল উদ্দিন বলেন, অবসর জীবনে ব্যাস্ত থাকা ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হতে প্রথমে মৎস, মুরগী ও গরুর খামার করেন। তারপর ইউটিউবে মাল্টা চাষের সফলতা দেখে উদ্ভুদ্ধ হয়ে ৭জন মিলে বাগান গড়ে তোলেন। মাল্টা যেহেতু নিদৃষ্ট সময় পরে পলন আসে তাই দ্রুত ফলনযোগ্য অর্থকরী ফসল লেবু চাষ করেন। তিনি বলেন, লেবু বিক্রির টাকায় তাদের মাল্টা বাগানের খরচ হয়েও নিজেরা নিতে পারছেন।

এই বাগানের আরেক কর্ণধার বেসরকারি চাকুরে লোকমান হোসেন বলেন, মুলত কৃষির প্রতি ঝোঁক লেবু ও মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। বারোমাসি লেবু তাদের বাগান থেকে প্রতিদিন পাইকাররা এসে কিনে নেয়। আর মাল্টা গত বছর থেকে উৎপাদন শুরু হলে এবার বাণিজ্যিকভাবে বাজার জাত করতে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বাগানের আরেক অংশিদার জানান, এবার মাল্টার গাছ ফলে পরিপূর্ণ। গাছের পাতায় পাতা মাল্টা। এ বছর তাদের বিক্রি টার্গেট ২৫-৩০লক্ষ টাকা। যা আগামী বছর দ্বিগুণ হবে বলে আশাবাদী।

মাল্টা চাষি ও বাগানের তত্বাবধানে থাকা সুরুজ মেম্বার ও মজিবুর রহমান বলেন, আমরা নতুন করে আরও ৩টি বাগান করেছি। সরকারি সহায়তার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন তারা নিজস্ব অর্থায়নে ৬০লক্ষ টাকা এই বাগানে খাটিয়েছেন। সরকারি বা বেসরকারি কোন ঋন তারা এখনো গ্রহণ করেননি।

মাল্টা চাষি বাদল মিয়া জানা, লেবু ও মাল্টা চাষে শুধু তারাই স্বাবলম্বী হচ্ছেন না, পাশাপাশি এই বাগানে শ্রম বিক্রি করে এলাকার ৩০জন বেকার স্বচ্ছলতা পেয়েছে। গত বছরে প্রায় ৭লাখ টাকা বাগানে কর্মচারীরা বেতন নিয়েছেন।

প্রয়াস এগ্রো দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে শামীমের অন্য আরও পাঁচ বন্ধু নতুন ২ একর জমিতে মাল্টা বাগান ও চারা উৎপাদনের জন্য সুরুজ মেম্বার আলাদা নার্সারি করেছেন।

স্থানীয় শিক্ষক শফিউল্লা লিটন বাগান দেখতে এসেছেন। এ বাগান দেখে কৃষিতে নিরব বিপ্লব বলে তিনি মনে করেন। বাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনিও চারা সংগ্রহ ও পরামর্শ নিতে এসেছেন।

কাচিনা ইউনিয়নের কৃষি উপসহকারি আল আমিন জানান, লেবু এবং মাল্টা অর্থকরী ও কম খরচে বেশী উৎপাদনশীল ফসল। কাদিগড়ের এই বাগানটি ভালুকায় সবচেয়ে বৃহৎ বাগান। আমরা সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। চলতি বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এক একরের একটি মাল্টা বাগান দেয়া হয়েছে।

ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে মোবাইলে ফোন করে পাওয়া যায়নি। তাই তার বক্তব্য নেয়া যায়নি। এই কৃষি কর্মকর্তা বাগান পরিদর্শক করেছেন বলে বাগানিরা জানান।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ভালুকা,মাল্টা-লেবু,চাষ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close