শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি

  ০৮ এপ্রিল, ২০২০

সাংবাদিককে ডেকে মামলার হুমকি ইউএনও’র

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ফোন না ধরা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় সাংবাদিককে ডেকে মামলার হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইউএনও’র বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন সাংবাদিক মাসুম হোসেন।

মাসুম প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা প্রতিনিধি। শাজাহানপুর মডেল প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি।

গত সোমবার মাসুম ফেসবুকে লেখেন, এই দুর্যোগকালীন সময়ে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা পারভীনের দায়িত্ব অবহেলাটা বেড়ে গেছে। তিনি মুঠোফোন রিসিভ একেবারেই করছেন না। অনেকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায় না। তিনি নিজেকে কী ভাবেন? ওটা সরকারি ফোন নম্বর, তার ব্যক্তিগত নয়। ফোন রিসিভ করা তার ইচ্ছা বা অনিচ্ছা না, দায়িত্ব।

ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস দেওয়ার পরপরই বিষয়টি বেশ আলোচিত হয়। স্থানীয় সাংবাদিকরাও সেখানে মন্তব্য করেন। তারাও লেখেন, শাজাহাপুরের ইউএনওকে ফোনে পাওয়া যায় না।

এরপর শাজাহানপুরের একাধিক ব্যক্তি ফোন করে স্ট্যাটাস ডিলিট করতে বলেন। অবশ্য মঙ্গলবার দুপুরে তিনি তার স্ট্যাটাস ডিলিটও করেছেন। পরে শাজাহানপুর মডেল প্রেসক্লাবের সভাপতি আরিফুর রহমান মিঠু তাকে ফোন করেন। তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তোমার সাথে সরাসরি কথা বলতে চান। কোনো ভুল বোঝাবুঝি হলে সমাধান করতে চান।

মাসুম হোসেন জানান, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আরিফুর রহমান মিঠুর সঙ্গে শাজাহানপুর ইউএনও’র কার্যালয়ে যাই। ইউএনও’র সঙ্গে কথার মধ্যে ফেসবুকের স্ট্যাটাসের বিষয়টি উঠে আসে। এ সময় ইউএনও বলেন, আপনার ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে আমি আপনার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারি। তখন আমি বলি মামলা করতেই পারেন, সেটা আপনার বিষয়। কিন্তু আপনাকে ফোনে পাওয়া যায় না। তখন ইউএনও আমাকে বলেন, আপনি সাংবাদিকতার কী জানেন? আপনি এভাবে ফেসবুকে লিখতে পারেন না। আমার দায়িত্ব অবহেলা সম্পর্কে আপনি কি জানেন। তখন তাকে বলি, আমি আপনার অন্য কোনো বিষয়ে দায়িত্ব অবহেলা নিয়ে ওখানে লিখিনি। আমি শুধু আপনার ফোন রিসিভ না করার বিষয়ে লিখেছি এবং এই অধিকার আমার আছে। কারণ আমি নিজেই একজন ভুক্তভোগি।

এরপর তিনি আমার আইডি কার্ড দেখেন। ইউএনও জানতে চান আমার পরিবারের কে কে আছেন? তখন বলি, আমার পরিবারের তথ্য ব্যক্তিগত। এসব তথ্য আপনাকে বলতে বাধ্য নই। আর ওখানে যা কথা হয়েছে সবগুলো বলার মাধ্যমে ইউএনও আমাকে হুমকি দিয়েছেন।

ঘটনার বিষয়ে শাজাহানপুর উপজেলা মডেল প্রেসক্লাবের সভাপতি আরিফুর রহমান মিঠু বলেন, উপজেলায় চারটি প্রেসক্লাব রয়েছে। এর মধ্যে ইউএনও অন্যান্য প্রেসক্লাবের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন যে, কোনো ঘটনার কারণে উপজেলার সব সাংবাদিকের ফোন না ধরলেও চলবে, শুধু প্রেসক্লাবগুলোর চার সভাপতির সাথে কথা বললেই হবে। তবে এই বিষয়টি আমি জানতাম না। এর মধ্যে মাসুম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে। আমি ওই সংগঠনের সভাপতি। এ কারণে ইউএনও তার কার্যালয়ে মাসুমকে নিয়ে যেতে বলেন। এরপর আমরা সেখানে যাই। তবে মাসুম এবং ইউএনওর কথার মধ্যে ইউএনও বলেন, ফেসবুকে ওই স্ট্যাটাসের কারণে আমি আপনার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারি।

অভিযোগের বিষয়ে শাজাহানপুর উপজেরা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা পারভীর সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকেও পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ মুঠোফোনে বলেন, আমি ইউএনওর সঙ্গে কথা বলতেছি। যদি হুমকি দিয়ে থাকে তবে বিষয়টি ঠিক হবে না। আমি বলে দিচ্ছি সবার সাথে ভালো ব্যবহার করার জন্য।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ইউএনও,সাংবাদিক,হুমকি,মামলা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close