মহসীন শেখ, কক্সবাজার
কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথ
স্পিডবোট নিয়ে চরম নৈরাজ্য
কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথে স্পিডবোট নিয়ে চলছে চরম নৈরাজ্য। স্পীডবোটের স্পীডবোট চালক ও দায়িত্বরত প্রশাসনের কতিপয় লোকজন এই নৈরাজ্য চালাচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে স্থানীয় যাত্রীরা। অন্যদিকে ‘কাটা’ যাচ্ছে পর্যটকদের ‘পকেট’। এই কারণে বর্তমান পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন এক ভীতিকর ও অসহনীয় পরিস্থিতি বিরাজ করছে ৬নং ঘাটে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কক্সবাজার-মহেশখালী নৌ-পথের স্পীডবোট চালকরা পর্যটন মৌসুমকে পুঁজি করে জোর করে অতিরিক্ত ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে। মূূলত পর্যটকদের টার্গেট করেই চালকরা এই অপকর্ম চালাচ্ছে। তাদেরকে প্রশয় দিচ্ছে ঘাটের দায়িত্বে নিয়োজিত জেলা প্রশাসনের লাইনম্যানরা। চালক এবং লাইনম্যান যোগসাজস করে অতিরিক্ত ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ মতে, বর্তমানে পর্যটন মৌসুম হওয়ায় প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক পর্যটক মহেশখালী আদিনাথ মন্দির দর্শন ও সোনাদিয়ায় ঘুরতে যাচ্ছে। পর্যটকদের কারণে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে।
তথ্য মতে, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পর্যটকরা আদিনাথ ও সোনাদিয়া যাত্রা করে। একই সঙ্গে সকালের দিকে স্থানীয় অনেক যাত্রীরও ভিড় থাকে। কিন্তু এই সময়ে প্রায় ৮০ ভাগ বোট থাকে মহেশখালীতে। কেননা অধিকাংশ বোট মহেশখালীর হওয়ায় আগের দিন সেসব বোট মহেশখালী ঘাটে চলে যায়। ৬নং ঘাটে কিছু বোট থাকে মাত্র। তাই সকালের দিকে যাত্রীর তুলনায় বোটের সংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল থাকে। এর মধ্যে সকাল ৯টা পর্যন্ত অর্ধেক বোটের চালক ঘাটে পৌঁছায় না। যার ফলে ৬নং ঘাটে যাত্রীদের দীর্ঘ জট লেগে যায়। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে বোট চালকরা স্থানীয় যাত্রীদের বাদ দিয়ে পর্যটকদের পরিহন করে। কারণ তারা পর্যটকদের কাছে ‘রিজার্ভ সিস্টেমে’ দিগুণ/তিনগুণ পর্যন্ত ভাড়া হাতিয়ে নেয়। জনপ্রতি নির্দিষ্ট ভাড়া ৭৫ টাকা হলেও পর্যটকরা বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে চলাচল করছে। এসময় দায়িরত্ব জেলা প্রশাসনের লোকজন নীরব ভূমিকা পালন করে।
স্থানীয় যাত্রীরা জানান, অনেক চেষ্টা করলেও স্থানীয়দের যাত্রীদের বোটে উঠতে দেয় না স্পীড চালকরা। অনেক সময় কেউ উঠে গেলে তাকে জোর করে নামিয়ে দেওয়া হয়। এসময় চালকরা স্থানীয়দের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করে। এমনকি ধাক্কা দিয়ে বোট থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অনেক তাড়াহুড়ো করে উঠানামা করতে গিয়ে সাগরে পড়ে কাদায় জুবুথুবু হচ্ছে অনেকে।
অন্যদিকে তিন/চার জন পর্যটক নিয়ে বোট চলাচল করে থাকে স্পীডগুলো। তারপরও কোনো স্থানীয় যাত্রীদের বোটে উঠতে দেওয়া হয় না। এটা নিত্যদিনের ঘটনা। স্থানীয় যাত্রীরা প্রতিবাদ করার সাহসও পাচ্ছে না। চালকরা একজোট হয়ে মারতে আসে বলে অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগী মহেশখালীর পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক স্থানীয় মানুষ প্রতিদিন কক্সবাজার-মহেশখালী এবং মহেশখালী-কক্সবাজার যাতায়াত করেন। কিন্তু প্রতিদিনই এভাবে স্থানীয়দের ভোগান্তি চলছে। চালকদের অনিয়মের কারণে মহেশখালী এই ভোগান্তি কম হলেও ৬নং ঘাটে তা সীমাহীন। ঘাটের তদারকিতে থাকা লোকজনও অনিময়মের সাথে জড়িত। তারা স্পীডবোট চালকদের কাছ থেকে টাকার ভাগ খায়। এই জন্য তারা নীরব ভূমিকা পালন করছে।’
গতকাল সরেজমিন সকালে গিয়ে দেখা গেছে, কক্সবাজার ৬নং ঘাটে যাত্রীদের ভিড়। গত শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় অনেক পর্যটক আদিনাথ মন্দিরে যাওয়ার জন্য পর্যটকেরা ভিড় করেছেন। একই সঙ্গে অনেক স্থানীয় যাত্রীরও ভিড় রয়েছে। তবে একটি স্পীডবোটও নেই। প্রায় শতাধিক যাত্রী অপেক্ষা করছে। মহেশখালী থেকে কোনো বোট আসলে তাকে স্থানীয় যাত্রীদের উঠতে দিচ্ছিল না। ‘বোট যাবে না’ বলে সাফ জানিয়ে দিয়ে পরক্ষণে অতিরিক্ত ভাড়ায় রিজার্ভ সিস্টেমের পর্যটক বহন করে বোটটি চলে যায়। এসময় যাত্রীদের ভারে কাঠের জেটিতে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এমনকি যেকোনো মুহূর্তে যাত্রীদের ভারে জেটি ধসে দুর্ঘটনা ঘটার উপক্রম হয়। সেখানে কথা হলে টাঙ্গাইল থেকে আসা পর্যটক দলের প্রধান আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমরা একটা সময় নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছি। এই সময়ের মধ্যে সব জায়গা দেখতে হবে। এমন অবস্থায় বোটের জন্য তো অপেক্ষা করা যাবে না। তাই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে হলেও আদিনাথ দর্শনে যাচ্ছি।’ তবে বেশি ভাড়া নেওয়াটাকে খুবই অন্যায় বললেন তিনি।
জেলা স্পীড মালিক সমিতির সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে কক্সবাজার-মহেশখালী নৌ-রুটে ইজারা নেই। তাই জেলা প্রশাসনের স্থানীয় মন্ত্রণালয় শাখার মাধ্যমে খাস কালেকশন করা হচ্ছে। দীর্ঘ সাত বছর ধরে এভাবে চলছে। জেলা প্রশাসনের লোকজন এই প্রক্রিয়া দেখাশোনা করছে। এই প্রক্রিয়ার নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা প্রশাসনের মো. রফিক। তিনি জানান, কক্সবাজার-মহেশখালী নৌ-রুটে তালিকাভুক্ত ১৩০টি স্পীডবোট রয়েছে। তার মধ্যে নিয়মিত চলাচল করছে ৬০-৭০টি।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মো. রফিক বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা তিনজন ঘাটের রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্বে রয়েছি। বোটের শৃঙ্খলার জন্য লাইনম্যান রয়েছে। তারপরও কিছু অসাধু চালকরা আমাদের অজান্তে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়। এরকম অনেককে শাস্তি স্বরূপ বিভিন্ন মেয়াদে বহিস্কার করা হয়। এখনো যদি এই অনিয়ম চলে তা আমাদের অগোচরে হচ্ছে। এ ব্যাপারে এখন থেকে আমরা আরো সজাগ হবো।
পিডিএসও/তাজ