পূর্ণাঙ্গ প্রেমের আখ্যান
মন খেলাপি : শেখ নজরুল, প্রকাশনী : পারিজাত প্রচ্ছদ : চঞ্চলা চঞ্চু, মূল্য : ৪০০
কবিতায় বৈচিত্র্যপূর্ণ জগতের রহস্য উন্মোচন করেছেন কবি শেখ নজরুল। সেই জগৎ প্রেমের। একসঙ্গে স্বপ্ন দেখার। আনন্দ-বিরহে বিশ^ জয় করার। ভালোবাসার ছোঁয়ায় তিনি যেন পাঠককে কবি করে তুলবেন! ‘মন খেলাপি’র সাধারণ কয়েকটি পঙক্তির ব্যঞ্জনা দেখুনÑ কখনো দূরে/কখনো কাছে/তোমার-আমার/কিছু না কিছু আছে/হয় দুঃখ, না হয় সুখ/আর কিছু না থাক/আছে তো অসুখ।/আছে মনে রাখা/আছে ভুলে যাওয়া/আছে বুক থেকে/হঠাৎ সুগন্ধি হাওয়া।
অথবা ‘পাপ এবং পরবর্তী করণীয়’ কবিতায় যেমন বলেছেনÑ আমি যদি তোর দেহ/পাঠ না করে ফিরে যাই/পাপ হবে তোর/আমাকে আর বানাস না/গোনাহগার প্রেমিক।/আমি যদি তোর ঝরনায়/স্নান না করে ফিরে যাই/দুঃখ হবে তোর/আমাকে আর বলিস না/অবসন্ন মরদ।/...আমি যদি তোর ঠোঁটে/চুম্বন না দিয়ে ফিরে যাই/বকেয়া জমবে তোর/আমাকে আর করিস না/শিল্পের দেনাদার।
প্রেম-পাঠক কবি এই কবিতার দেশে অনেক। তবে শেখ নজরুলের চিন্তারস, বাক্যচালনা এবং থরে থরে সাজানো শাব্দিক গাঁথুনি বলে দেয় তিনি ভালোবাসার ঘর নির্মাণে দক্ষ কারিগর। কারণ, তিনি কল্পনার সঙ্গে বাস্তবতার সংযোগ ঘটান। ভাবেন সাধারণ চিন্তায় অসাধারণ কিছু। এ কথা বলা চলে মন খেলাপির প্রতিটি কবিতার ক্ষেত্রেই। বইটিতে তিনি ভাবনার উদয়-অস্তে লাকোচুরি খেলেছেন। প্রেমময় কাব্যজগত রচনা করেছেন তার নিজস্ব শৈলীতে। ‘আমি বাঁচিবার কথা লিখিতেছি’র কথাই বলিÑ জগতে নর-নারী নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। রুক্ষ পাষাণ আসলে কে? নর না নারী? নারীকে চিরকাল স্রোতস্বিনী নদী অথবা পাখি অথবা ফুলের সঙ্গেই তুলনা করা হয়ে এসেছে। নারীর কোমল রূপের বর্ণনাই কবিরা দিয়ে থাকেন। সর্বংসহা সৌম্য ধরিত্রীর প্রতিকৃতি নারী যে শুধু মমতাময়ী তা-ই নয়, তার একটি কঠিন রূপও আছে। সেই কাঠিন্য দিয়েই বেঁধে রেখেছে পৃথিবীকে। সভ্যতার ভিত্তিকে সুদৃঢ় করেছে নারী। পাহাড়ের মতো তার ভেতর যে অপরিসীম শক্তিও রয়েছে সেদিকে ইঙ্গিত পাবেন ‘আমি বাঁচিবার কথা লিখিতেছি’ কবিতায়Ñ যে যাহার হৃদয় লইয়া খেলে/সে তাহারে নিজেই মারিয়া ফেলে/আমি বাঁচিবার কথা লিখিতেছি কবিতায়/তুমি ফেলিতেছো ছিঁড়ে/আমি ডাকিয়াছি তোমায় যতবার/তুমি তারও বেশি গিয়াছো ফিরে।/যাহারে পাইবার তাহারে খুঁজিতে হয়/তুমি কেবল তাহা বোঝো না/যাহারে পাওয়া যায় খুব সহজে/তুমি তাহারে কখনও খোঁজো না!/যে যাহার বুকের মইধ্যে/বিচ্ছেদ পোষে গোপনে/তাহার জন্য বড্ডো মায়া জাগিয়া ওঠে/হঠাৎ এলোমেলো করে
রাখা মনে! এভাবেই শেখ নজরুল
এঁকেছেন প্রেম-বিরহ, আনন্দ-বেদনা, বাস্তবতা ও বিশ্বাসের আল্পনা। চোখ বদল, দুঃখ বুনন, সাদা-কালো তুমি, স্বপ্ন দেখছি চোখ সরিও না, সহজ অসুখ, চুম্বন চিকিৎসা কেন্দ্র, কষ্ট পরিবহন লিমিটেড, নগরের কান্না আমি দেখেছি, মনমুক্তি দিবস, বেসরকারি তুমি, মেয়েটি তার সন্তানের নাম রেখেছিল ‘মানুষ’, প্রেম পাঠের আসর, কিছু মনে থাকে নাসহ ১৫৯টি কাব্যের আসর আছে মন খেলাপিতে। গতানুগতিক কবিতা না সাজিয়ে ভিন্নধর্মী এক স্বাদ নিয়ে এসেছেন কবি। বলা চলে, পূর্ণাঙ্গ প্রেমের আখ্যান!
-কাঞ্চন বিধু
"