কাইয়ুম আহমেদ

  ০১ জানুয়ারি, ২০২০

স্বাগত ২০২০ : বিশ্বকে নতুন বার্তা দেবে বাংলাদেশ

দেয়ালে টাঙানো হলো নতুন ক্যালেন্ডার। স্মৃৃতির খেরোখাতা থেকে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মুছে শুরু হলো নতুন বছরের পথচলা। প্রতিবারের মতো এবারও নতুন সূর্যালোকে নতুন আশা ও স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু হলো ২০২০ ইংরেজি বছর। এবার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ বিশ্বকে নতুন বার্তা দেবে। নতুন বছরে বিশ্ব নতুনভাবে চিনবে বাংলাদেশকে।

শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। এই আয়োজনে ইউনেসকো যুক্ত হওয়ায় আন্তর্জাতিক পরিম-লে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন আরো ব্যাপক পরিসরে অবহিত করার সুযোগ সৃষ্টি হলো। তাই ২০২০ সালকে সানন্দচিত্তে স্বাগত জানাই।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বছরটি মুজিববর্ষ হিসেবে পালিত হবে। এ উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠান থাকবে বছরজুড়ে। মুজিববর্ষে বাঙালিচিত্ত আনন্দে-উদ্বেল হোক। ‘দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো’ই ছিল বঙ্গবন্ধুর আজীবনের স্বপ্ন। তিনি চেয়েছিলেন ‘সোনার বাংলা’ এবং ‘সোনার মানুষ’। বাঙালি শুধু বাঙালি হয়ে থাকবে না, ‘মানুষ’ হবে– এটা ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন এবং বিশ্বাস। তার সেই স্বপ্নপূরণের পথে বাংলাদেশ নতুন বছরে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাক– এ প্রত্যাশা বর্ষবরণের মুহূর্তে।

বিদায়ী বছরে কী ব্যক্তিজীবনে, কী রাষ্ট্রীয় জীবনে, সবটুকুই হয়তো ভালো ছিল না, প্রত্যাশিত ছিল না। কিন্তু এটা তো সত্য, যাই ঘটুক না কেন, এগিয়ে চলার চেষ্টা অব্যাহত ছিল। সব স্বপ্ন হয়তো পূরণ হয়নি, ব্যর্থতার গ্লানিও আছে কিন্তু তারপরও থেমে ছিল না কিছুই। বছর শেষের দিকে সরকারের ‘শুদ্ধি’ অভিযান অনেকের মনেই কিছুটা আশা জাগিয়েছে। এগিয়ে চলার, সামনে যাওয়ার নিরন্তর প্রয়াস নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে, নতুন বছরকে বরণ করার প্রেরণা জোগাচ্ছে। কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া ২০১৯ সাল নানা ঘটনায় বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে স্মরণীয় হয়ে থাকবে ইতিহাসে। বছরের অধিকাংশ সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কৌশল ও বিচক্ষণতায় রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল স্থিতিশীল। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে। অর্থনীতি থাকে সচল ও গতিময়।

বাংলাদেশে ইংরেজি নববর্ষ পালনের ধরন বাংলা নববর্ষ পালনের মতো ব্যাপক না হলেও এ উৎসবের আন্তর্জাতিক ছোঁয়া থেকে বাংলাদেশের মানুষও বিচ্ছিন্ন নয়। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাঙালিও মেতে ওঠে ইংরেজি নববর্ষ বরণের আনন্দে। পুরোনো বছরের গ্লানি ভুলে নতুনকে বরণ করার উৎসবে সারা বিশ্বের একাত্মতা বিশ্ববাসীকে একটু হলেও এক সুতায় গেঁথে রাখে।

সময় এক প্রবহমান মহাসমুদ্র। কখনো বুকের ভেতর উঁকি দেয় একান্ত দুঃখ-যাতনা। কখনো পাওয়ার আনন্দে নেচে উঠে হৃদয়াঞ্চল। স্বাদ আর সাধ্যের টানাপড়েনের কারণে হয়তোবা আমাদের অনেক প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব হয়নি। তবু আপন তাৎপর্যে কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে বিগত বছরটি। মানবসভ্যতার ধারাবাহিক অগ্রসরমানতায় কিছুই হারিয়ে যায় না, অতীতের সব অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণে গড়ে ওঠে আগামীর পথ ও পাথেয়। বিদায়ী বছর আমাদের চেতনা জাগ্রত করার পাশাপাশি আহ্বান করে গেল নতুন সম্ভাবনায় বলিষ্ঠ যাত্রী হিসেবে দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার।

স্বাভাবিকভাবেই নতুন দিনে আমাদের আশা অনেক, প্রত্যাশাও ব্যাপক। তবু স্বপ্ন দেখতে হবে, স্বপ্ন দেখাতে হবে। কেননা, সে স্বপ্নই হয়তো লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে! আমরা স্বপ্ন নিয়েই এগোতে চাই। যে নতুন বছরের সকাল হলো আজ। অরুণোদয়ের সে সকাল আরো উজ্জীবিত দিন এনে দেবে জাতিকে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক সবপক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। বিশ্ব শান্তি ও বিশ্বমানবতা সমুন্নত থাক। মানুষে মানুষে ভালোবাসা, সৌহার্দ-সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাক। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে বিদায়ী বছরের অর্জিত শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা দেশ গড়ার কাজে ব্যয় করে নতুন বছরে উন্নয়ন-অগ্রগতির নবদিগন্তে প্রবেশ করুক বাংলাদেশ।

নতুন বছরের প্রতিটি দিনই যেন ভালো ও শুভ কাজের মাধ্যমে দেশ ও মানুষের কল্যাণ হয়— এমনটিই প্রত্যাশা। নতুন বছরের কাছে প্রত্যাশা ভালো থাকার, সুন্দর থাকার। মানুষে মানুষে বাড়–ক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা। নতুন বছর হোক সত্যিকার অর্থে দিনবদলের ইতিবাচক বছর। শুভ হোক ২০২০-এর পথচলা।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
স্বাগত ২০২০,নতুন বছর,মুজিববর্ষ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close