শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

  ১৮ অক্টোবর, ২০২৪

শৈলকুপায় ইলা মিত্রের জন্মদিন পালিত

ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়ির সঙ্গে হারাচ্ছে তেভাগার ইতিহাস

ঝিনাইদহের শৈলকুপার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুক্রবার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিপ্লবী ইলা মিত্র জন্মবার্ষিকী উদযাপন পরিষদ। ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী কমরেড ইলা মিত্রের পৈতৃকভিটা রক্ষা ও তার জন্ম-মৃত্যু স্মরণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি প্রশাসন। ফলে বাড়িটির সঙ্গে কালের সাক্ষী কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস ও স্মারক স্থানটিও বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ‘ক্রয় সূত্রে’ বাড়ির মালিকানায় দাবি করে বসবাস করছে একটি মহল। অবিলম্বের প্রখ্যাত কৃষক নেত্রীর বাড়ি রক্ষা করে দর্শনীয় স্থান তৈরিতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের দাবি জানিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। ইলা মিত্রের ৯৯ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় এ অনুষ্ঠানে এই দাবি জানানো হয়।

আজ শুক্রবার বিকাল ৪ টার দিকে উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিপ্লবী ইলা মিত্র জন্মবার্ষিকী উদযাপন পরিষদ। এতে সম্মিলিত শিল্পী সমাজের অংশগ্রহণে জাগরণের গান, আদালতে ইলা মিত্রের জবানবন্দি ও কবিতা পাঠ করা হয়।

উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ফিরোজ খান নুরের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব সুজন বিপ্লবের সঞ্চালনায় আলোচনা সভা হয়। এতে ভোলা সরকারি কলেজের প্রভাষক ও লেখক রাশিব রহমান, সিপিরি জেলা সাধারণ সম্পাদক স্বপন বাগচী, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ জেলা সাধারণ সম্পাদক শাহিদুল এনাম পল্লব, উদীচী শৈলকুপা শাখার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর অরণ্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড শ্যামল রায়সহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা বক্তব্য দেন।


  • একটি মহল ‘ভুয়া কাগজপত্রে’ ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়িটি দখল করে বসবাস করছে
  • অবিলম্বের প্রখ্যাত কৃষক নেত্রীর বাড়ি রক্ষা করে দর্শনীয় স্থান তৈরিতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের দাবি

ইলা মিত্রের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন তুলে ধরে বক্তারা বলেন, নাচোলের রাণীমাখ্যাত বিপ্লবী ইলা মিত্রের শৈশব থেকে বেড়ে ওঠেন শৈলকুপার বাগুটিয়া রায়পাড়া গ্রামে। কিন্তু গ্রামের বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে বেদখল হয়ে আছে। একটি মহল ‘ভুয়া কাগজপত্রে’ সেটিকে দখল করে বসবাস করছে।

তারা বলেন, ইলা মিত্রের স্মৃতি সংরক্ষণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমনকি জন্ম ও মৃত্যু দিবসে তাঁকে নিয়ে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয় না। সরকারের পক্ষ থেকে তার পৈতৃক সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও বাড়িটি দর্শনীয় স্থান করে তোলা উচিত। এতে নতুন প্রজন্ম ইলা মিত্র ও তেভাগা আন্দোলন সম্পর্কে জানতে পারে। এছাড়া ইলা মিত্র স্মরণে রাষ্ট্রীয়ভাবে কর্মসূচি আয়োজনের দাবিও জানান তারা।

সরেজমিন ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, দোতলা বাড়িটির অধিকাংশ স্থানে ছোটবড় ফাটল ধরেছে, গজিয়েছে পরগাছা। কোনো কোনো স্থান ধ্বসে পড়েছে অনেক আগেই।

বর্তমানে ওই বাড়িতে বসবাস করা মৃত কিয়ামউদ্দিনের সন্তানদের দাবি, তাদের বাবা ইলা মিত্রের উত্তরাধিকারদের কাছ থেকে বাড়িটি কিনে নিয়েছেন। তারা বৈধভাবেই বাড়িটিতে বসবাস করছেন। এর স্বপক্ষে সব দলিলাদি দেখাতেও তারা প্রস্তুত। তাদের ভাষ্য, তারা টাকা দিয়ে বাড়ি কিনেছেন বসবাসের জন্য। সরকার যদি সেটি অধিগ্রহণ করতে চায় তাহলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও তাদের সম্মানজনক বসবাসের ব্যবস্থা না করলে তারা ভিটেমাটি হারাবেন।

কিয়ামউদ্দিনের মেজ ছেলে জাহাঙ্গীর আলম জানান, তারা যেন কোনো অবিচার ও অন্যায়ের শিকার না হন, সেদিকে সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনকে লক্ষ রাখতে হবে। ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়ি সংরক্ষণ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও জন্মবার্ষিকী উদযাপন পরিষদের সদস্যসচিব সুজন বিপ্লব বলেন, ‘তেভাগা কৃষক আন্দোলনের প্রখ্যাত নেত্রীর বাড়িতে দীর্ঘদিন বসবাসরত পরিবারকে অন্যত্র পুনর্বাসন ও দখলমুক্ত করে সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে বাড়িটির সঙ্গে কালের সাক্ষী কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস ও স্মারক স্থানটিও বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছে। অতীতে বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য স্মারকলিপি, মানববন্ধন, মিছিল, সমাবেশ ও আন্দোলন করেছি। ইলা মিত্রের বাড়ি সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় যা করার আমরা করব।’

জানতে চাইলে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্নিগ্ধা দাস বলেন, ‘ইলা মিত্রের বাড়ি সংরক্ষণের বিষয়টি নিয়ে আমার সঙ্গে কেউ কথা বলেনি। বিষয়টি কী অবস্থায় আছে জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
তেভাগা আন্দোলন,ইলা মিত্র,পৈতৃকভিটা রক্ষা,জন্মবার্ষিকী উদযাপন,ঝিনাইদহ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close