যশোরের শার্শায় প্রেমঘটিত বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রেমিকের চাচাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্য (মেম্বার) ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন নিহত ব্যক্তির আরেক ভাই।

আহতদের উদ্ধার করে তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তবে সাইফুল ইসলাম মুকুলের (৪০) অবস্থা গুরুতর হওয়ায় প্রথমে যশোর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর, পরে সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাতে তার মৃত্যু হয়।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শার্শা থানায় একটি মামলা করেছে সাইফুল ইসলাম মুকুলের পরিবার। এ ঘটনায় উপজেলার উলাশি ইউপির সদস্য হাসানুজ্জামানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এর আগে বুধবার রাতে উপজেলার কন্যাদাহ গ্রামে ইউপি সদস্য হাসানুজ্জামানের গরুরখামারে ওই মারধরের ঘটনা ঘটে। নিহত সাইফুল ইসলাম মুকুল (৪০) ও তার ভাই আহত শরিফুল ইসলাম বকুল (৩৫) উপজেলার কন্যাদাহ গ্রামের মৃত আজিজের ছেলে।

• কিশোরকে খুঁজতে গিয়ে এক চাচাকে মারধর করে তুলে আনে
• ভাইকে উদ্ধারে গিয়ে মারধরে মুকুলের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
• ইউপি সদস্যের পশুর খামারে মারধরে করে তার লোকজন
• মামলার পর ইউপি সদস্যসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জেলে

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার উলাশি ইউনিয়নের কন্যাদহ গ্রামের আব্দুর লতিফের নাতনির সঙ্গে স্থানীয় আনিসুর রহমানের ছেলে নয়ন হোসেনের (১৮) দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে দাবি করে একই গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য হাসানুজ্জামান, নুরু, তরিকুল, তাজউদ্দীন, জসিমসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন বুধবার (২২ মে) রাত ৮টার দিকে নয়নকে বাড়িতে খুঁজতে যায়। সেখান নয়নকে না পেয়ে তার আপন চাচা শরিফুল ইসলাম বকুলের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় ইউপি সদস্যসহ তার সঙ্গে থাকা লোকজন বকুলকে এলোপাতাড়ি মারধর করে আহত অবস্থায় জোর করে তুলে নিয়ে যায় ইউপি সদস্য হাসানুজ্জামানের গরুর খামারে। সেখানে বকুলকে আরেক দফা হাতুড়ি, লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধরে শরীরে জখম করে আটকে রাখে।

এদিকে খবর পেয়ে বকুলকে উদ্ধারে তার ভাই সাইফুল ইসলাম মুকুল ওই গরুর খামারে গেলে তাকেও লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করলে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন দুই ভাইকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক বকুলকে ভর্তি রাখেন ও মুকুলের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। মুকুলের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে নেওয়ার জন্য বলেন যশোরের চিকিৎসকরা। তবে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে মুকুলের মৃত্যু হয়।

জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (নাভারন সার্কেল) নিশাত আল নাহিয়ান জানান, ‘মারধরে আহত দুই ভাইয়ের মধ্যে মুকুল নামে একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আরেক ভাই বকুল উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইউপি সদস্য হাসানুজ্জামানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।’ ঘটনার পর গা-ঢাকা দেওয়া অন্য আসামিদের আটক করার জন্য পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে বলে তিনি জানান।