নিজস্ব প্রতিবেদক
ঋণ পরিশোধে এগিয়ে ছোট উদ্যোক্তারা
ঋণের টাকা পরিশোধে এগিয়ে রয়েছেন ছোট উদ্যোক্তারা। বিপরীতে বড় উদ্যোক্তাদের ঋণ দিয়ে বিপদে পড়েছে ব্যাংকগুলো। বড় অঙ্কের ঋণের মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টাকা আদায় করা যায়নি। ফলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পাহাড় জমেছে। এসব লক্ষণ বিচার করেই বাংলাদেশ ব্যাংক বড় গ্রাহকদের বদলে ছোট উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে। তবে ছোট উদ্যোক্তাদের মধ্যে নারীদের ঋণ পেতে দুর্ভোগে পড়তে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, যেসব ব্যাংক বড় উদ্যোক্তাদের পেছনে না ছুটে ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ দিয়েছে, তারা ভালো আছে। আর বড় উদ্যোক্তাদের ঋণদাতা ব্যাংকগুলো এখন বিপদে পড়েছে। গবেষণা আরো বলা হয়েছে, ঋণের টাকা পরিশোধে এগিয়ে রয়েছেন ছোট উদ্যোক্তারা। একইভাবে সব ব্যাংকের ছোট অঙ্কের ঋণের আদায়ও সন্তোষজনক।
ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ পরিশোধে সফলতা ও রফতানিমুখী পণ্যের বৈচিত্র্যসহ দেশের কর্মসংস্থান বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে ছোট উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বড় গ্রাহকদের বদলে ছোট উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে দেশের সবগুলো ব্যাংকে। মূলত ঋণ আদায় ভালো থাকায় অধিকাংশ ব্যাংকও এখন ছোট উদ্যোক্তাদের দিকে বেশি নজর দিয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রাম বিভাগ থেকে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কমপক্ষে ২০ শতাংশ ঋণ এসএমই খাতে বিতরণ করতে হবে। এছাড়া নির্দেশনায় মোট এসএমই ঋণের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করার কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গেল কয়েক বছর ধরে বড় শিল্প উদ্যোক্তারা যেখানে নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন, সেখানে ক্রমেই উজ্জীবিত হয়ে উঠছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা। ২০১৬ সালে এসএমই খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এক লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে। আগের বছরের তুলনায় যা সাড়ে ২২ শতাংশ বেশি। সারাদেশের পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ২৯৯ প্রতিষ্ঠান এই ঋণ পেয়েছে। ২০০৯ সালে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের ১৯ শতাংশ ছিল এসএমই ঋণ। ২০১৫ সাল শেষে মোট ঋণের ২৪ শতাংশ ঋণ গেছে এসএমই খাতে।
তবে ঋণ পেতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে নানা হয়রানির অভিযোগ এনেছেন নারী উদ্যোক্তারা। সম্প্রতি ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে (ডিসিসিআই) ‘নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তারা এ অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগ, কোনো ব্যাংক ব্যবসা শুরুর প্রারম্ভিক মূলধন হিসেবে ঋণ দিতে চায় না। ব্যবসা দাঁড় করানোর পর ঋণের জন্য জামানত চায়। আবার জামানতকারী হিসেবে ব্যাংকগুলো সরকারি কর্মকর্তাদের সই চায়। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, নারী উদ্যেক্তাদের জামানতবিহীন ঋণ দেওয়া হচ্ছে। তাদের দাবি, ব্যাংক কর্মকর্তাদের এমন আচরণের কারণে ইচ্ছাশক্তি থাকা সত্ত্বেও ব্যবসার ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে যেতে পারছেন না। তাই নারীরা যাতে সহজে হয়রানিমুক্ত ব্যাংকঋণ পেতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দাবি তোলেন তারা।
"